শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আমার জন্মপুর্ব কাহিনি, শিকড়ের কিছু ইতিকথাঃ

 

আমার জন্মপুর্ব কাহিনি, শিকড়ের কিছু ইতিকথাঃ

হে বিচিত্র পৃথিবী, শিকড় ছাড়া যেমন বৃক্ষ হয়না, তেমনি শিকড় ছাড়া কোন মানুষই তোমার কোলে আসতে পারেনা। দুনিয়ার প্রতিটি মানুষের শিকড় তাঁর জনক ও জননী। এই যৌথ শিকড়ে ভর করে আমরা সবাই এই দুনিয়ার রংমঞ্চে হাজির হই। 

আমার মাতা আসমতুন্নেছা চৌধুরী বৃটিশ আমলের শেষপ্রান্তে ১৯৩৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি বড়লেখা উপজেলার ধামাই ও সোনারূপা চাবাগানের সন্নিকটে দক্ষিণভাগ গ্রামে জন্মগ্রহ করেন। ১৯৪৬ সালের ১৪ই আগস্ট ভারতবিভক্তি তার ভালই স্মরণে ছিল। সিলেট জেলাকে পাকিস্তানে অর্ন্তভুক্তকরণে কুড়ালে সবার ভোট প্রদান তার স্মৃতিতে উজ্জল ছিল। তিনি দক্ষিভাগ বাজার পাঠশালায় পঞ্চম শ্রেণির পাঠ সমাপ্ত করেন। বড়লেখার প্রাক্তন এমপি ইমানউদ্দিন ছিলেন তার পাঠশালার সহপাঠি। নানা ছিলেন বড় মাপের আলেম। নানার কাছে খালামামা সবাই আরবি ও ধর্মশিক্ষা গ্রহ করেন। নানারা চারভাইয়ের তিনটি সুন্দর সুন্দর বড়বাড়ি ছিল। তখন ছিল পর্দাপ্রথার খুব কঠোরতা। আমার মা ও খালারা এবাড়ি ওবাড়ি রওয়ানা হলে গৃহকর্মী মশারি মেলে ধরতেন এবং তারা ভিতরে ঢুকে যাতায়াত করতেন। তৎকালীন সামাজিক নিয়মানুযায়ী অল্প বয়সে খালাদের বিয়ে হয়।

১৯৫৪ সালের ৩রা মার্চ বসন্তকালে যখন মায়ের বিয়ে হয়, তখন বয়স ছিল মাত্র পনের বছর। আমার পিতা সফিকুর রহমান চৌধুরীর জন্ম তারিখ ১লা অক্টোবর ১৯১৬ সালকাজেই আব্বার বয়স তখন প্রায় ৩৮ বৎসর। আব্বা বর বেশে পাতারিয়ায় আসার পর বয়স্ক বর দেখে আমার বড়মামা আব্দুর রহমান চৌধুরী সাদ্দিক খুবই মনঃক্ষুন্ন হন। তিনি মনের জ্বালায় কাটালের কলি ছিড়ে ছিড়ে বরের প্যান্ডেলে ছুড়তে থাকেন। অন্য মামারাও বেশ মনঃকষ্ট পান।

তবে আমার বাবামায়ের মধ্যে বয়সের ব্যবধান প্রায় বাইশ বছর হলেও তারা ছিলেন এক অতিসুখী দম্পতি।

মায়ের বিয়ের স্বেচ্ছাসেবী ঘটক ছিলেন পাতারিয়া গাংকুল গ্রামের আমার ফুফা আব্দুল হাফিজ চৌধুরীর ভাই আব্দুল গফফার চৌধুরী উরফে কনুমিয়াকনুমিয়া সাহেবের পুত্র এবাদুর রহমান চৌধুরী পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের এম পি এবং মন্ত্রী হন আমার মায়ের এই কনুচাচা নানাবাড়ির একজন ঘনিষ্ঠ হিতাকাঙ্খী স্বজন ছিলেন।

মায়ের দুইভাই ও তিনবোন বয়সে মায়ের চেয়ে বড় ছিলেন এবং  তিনভাই ও দুইবোন মায়ের ছোট ছিলেন, তাঁরা ময়ের জন্মের পর ধারাবাহিক পৃথিবীর আলো দেখেন।

বাবামায়ের বিয়ের কিছুদিন পর আমার মাতা আব্বার কর্মক্ষেত্র সুনামগঞ্জ জেলাভূমিকর অফিসে চলে যান সুনামগঞ্জ শহরের সুরমাপারে কানুনগো অফিস ও বাসা একত্রে সংযুক্ত বাড়ির মত ছিল এখানে সুরমাপারের এই বাসায় ১৯৫৬ সালের ডিসেম্বরে আমার বড়বোন আনিকা মৌলা চৌধুরী রেহা এবং ১৯৫৯ সালের ১০ আগস্ট এক ঘনবর্ষায় আজিজা মৌলা চৌধুরী সেহা জন্মগ্রহ করেন ঝুম ঝুম বৃষ্টিতে জলমগ্ন সুনামগঞ্জের সুরমাপারের বাসায় নবজাতক দেখতে আসা সুনামগঞ্জের মানুষজন তাকে জলপরী নামে ডাকতে থাকেন

১৯৬১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর নানাবাড়ি দক্ষিণভাগে আমার বড়ভাই তাহমিদ চৌধুরী জন্ম নেন ১৯৬৩ সালের ০৫ ডিসেম্বরে আমার তৃতীয় বোন আনিছা মৌলা বেগম চৌধুরী মান্না দাউদপুর গ্রামে জন্মগ্রহ করেন আর দুইবছর পর রেঙ্গা দাউদপুর পল্লীতে আমার কয়েক পুরুষের ভিটায় ২৩ ডিসেম্বর ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ, তথা ৯ পৌষ ১৩৭২ বঙ্গাব্দ, তথা ১লা রমজান ১৩৮৫ হিজরি একজন নিস্পাপ মানবশিশুরূপে আমি চৌধূরী ইসফাকুর রহমান কুরেশি পৃথিবীর কোলে প্রথম পদার্পণ করি। আমার জন্মের অনেক পর ১৯৭৪ সালে কনিষ্ঠ ভ্রাতা চৌধুরী নিশাত এবং ১৯৭৬ সালে চৌধুরী মিল্লাত দাউদপুরের এই বাড়িতে ভূমিষ্ট হন। এই হল আমার শিকড়ের সামান্য কাহিনি, যা একটু রদবদল হয়ে সবার জীবনেই সত্য বলে প্রতিভাত হয়।   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন