সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

নর্থইস্ট পরিচালকদের পারিবারিক সমাবেশে প্যালেস রিসোর্টে একদিন একরাতঃ

 

নর্থইস্ট পরিচালকদের পারিবারিক সমাবেশে প্যালেস রিসোর্টে একদিন একরাতঃ

আমার সৌভাগ্য আমি নর্থইস্ট পরিবারের একজন। এখানে এসে শূন্য হতে একটি মহৎ প্রতিষ্টানের তিলে তিলে গড়ে উঠা আমি দেখেছি। প্রতিষ্টানের জন্ম হতে পূর্নতা লাভ আমার চোখের সামনেই ঘটে গেল। আমি তাতে শরিক হতে পেরে নিজেকে ধন্যই মনে করি। নর্থইস্ট মেডিক্যাল কলেজ এন্ড সার্ভিসেসের বিগত বার্ষিক সভায় ডাঃ এ কে এম হাফিজ বাহুবলের পাচতারকা রিসোর্ট প্যালেসে আমাদের পারিবারিক গেট টুগেদারের প্রস্তাব করেন। ডাঃ শামসুল আলম হেলাল সব দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন। বাহুবলের পাহাড় এলাকায় প্রায় দুইশত একর জায়গা জুড়ে বাংলাদেশের এই শ্রেষ্ট বিনোদন রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। উচ্চ প্রযুক্তির শৈল্পিক ছোয়ায় পাহাড় উপত্যকা ও লেইক, এই মর্তে যেন এক স্বর্গভূমি রচনা করেছে। অতিপূর্বে এই রিসোর্টে আমরা এজিএম করলেও সকালে গিয়ে দিনের আলোয় ফিরে আসি। এবারের যাত্রায় এখানে কাটিয়ে আসি একদিন একরাত।

২১ মার্চ ২০১৯। আমরা মিয়া-বিবি-পুত তিনজনের অতিথি হয়ে সাথে যান বোন মান্না এবং ভাতিজী জাইমা। নর্থইস্টের গাড়িতে করে সকাল ১১টায় প্রধান হিসাবরক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ আমাদেরকে গন্তব্যে নিয়ে যান। লবিতে চানাস্তা করে আমরা তিনতলার কেবিনে যাই। আমরা তিনজন একটি কক্ষে এবং ফুফু-ভাইজি পাশের কক্ষে অবস্থান নেন। কখনো হেঁটে কখনো প্যালেসের গাড়িতে করে টিলা ও উপত্যকা ঘুরে বেড়াই। একুশজন পরিচালকের জন্য বিয়াল্লিশটি কক্ষ ভাড়া করা হয়। পরিচালক ডাঃ মাসুকুর রহমান ছাড়া সবাই আসেন। একটি টিলার উপর টেনিস মাঠ, ক্রিকেট মাঠ, ব্যাডমিন্টন মাঠ, এমনকি ফুটবল খেলার মাঠও রয়েছে। মাঠগুলোর সীমানায় তারজালের বেড়া বেয়ে বেয়ে ঝুলে আছে নানান ফুলপাতা জড়ানো লতাবন। এক নিঃস্বর্গিক ক্রীড়াভূমি। পুরো দিনটা জুড়ে আমরা খেলাধুলায় মেতে রইলাম। আমাদের বাচ্চারা খেলছে, আমরাও কিশোরবেলার মত খেলেছি। বয়সের ব্যবধান ভুলে আমরা সব একই মোহনায় মিশে গেলাম। ডাঃ নিজাম জাহিদ, ডাঃ কাজী আখতার, ডাঃ শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, ডাঃ শামিমুর রহমান, খসরু ভাই, এডভোকেট ইকবাল ভাই, ডাঃ ফয়েজ আহমদ (সিবিল সার্জন), ডাঃ আজিজুর রহমান, ডাঃ আফজাল মিয়া, ডাঃ নাজমুল ইসলাম (কিডনি), ডাঃ সৈয়দ মামুন খেলার মাঠে বুড়ো বয়সে খেলে খেলে ঘেমে যান।

আমার পত্নীর ধারে বসা ডাঃ নাহিদ ইলোরাকে বললাম, আপনার মামারা একজনের পর একজন মন্ত্রী হচ্ছেন, আমাদের মিষ্টি কোথায়? তিনি অর্থমন্ত্রী আব্দুল মাল আব্দুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের ভাগ্নি। পরিবারের হাতে ক্ষমতা থাকাকালেই তাকে রাজনীতিতে গিয়ে এম পি হবার পরামর্শ দেই। তবে আমার সমবয়সী নাহিদ ইলোরার বুদ্ধি আমার চেয়ে ঢের বেশি। তাকে বুদ্ধি দেয়া আমার মত সাধারণ লোকের সাজেনা। তিনি যেমন গুণী তেমন সুন্দরী, যেমন পরিশ্রমী তেমন মেধাবী।

মৌলভীবাজার হতে আসেন ডাঃ এম এ মান্নান। আলাপ করে জানতে পারি, তিনি আমার ফুফুতো আব্দুল্লাহ ভাইয়ের পুত্র রিকুর শ্বশুর। রিকু এখন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী।  

আজকাল সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয়না। অনেক অনেক দিন পর প্যালেসের সিনেমা হলের গ্যালারীতে বসে আবার বড় পর্দায় সিনেমা দেখার স্বাদ নেই। পাহাড়ের উপর নির্মিত সুইমিংপুলে ঘুরে বেড়াই। কেউ কেউ গোসল করেন, সাঁতার কাটেন। ভোরে আমরা প্যালেসের ব্যায়ামাগারে ব্যায়াম করি, লুকোচুরি খেলার সবুজবনে সবাই হারিয়ে যাই। তাদের কফিহাউসে কপি ও গরম ভুট্টা মুড়ি কিনে খাই। ইনডোর গেমের ভবনে টেবিল টেনিস হাতে নেই।    

রাতের আলোকসজ্জায় প্যালেস এক অপরূপ মোহনীয় রূপ নেয়। রাতের প্রদীপমেলায় আমরা পাঁচজন সারাটা প্যালেস প্রাঙ্গণ ঘুরে বেড়াই। রাতে প্যালেসের জলসা ঘরে আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্টান হয়। মঞ্চের ব্যানারে ইংরেজিতে লেখা হয় Family get together, Board of Directors, Notheast Medical College and Services Ltd’ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন শামসুল আলম হেলাল ভাই। প্রত্যেক পরিচালক সপরিবারে মঞ্চে গিয়ে নিজেদের পরিচিতি দেন। আমরা তিনজন মঞ্চে গিয়ে পরিচিত হই এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য যারা দিনরাত খেটে যাচ্ছেন তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতঞ্জতা জানাই। ডাঃ নুরজাহান বিশেষ করে ডাঃ শাহরিয়ার ভাইয়ের অবদান কৃতঞ্জতা ভরে স্মরণ করেন। তবে সবার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত, মূল বিষয় সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। সিলেট থেকে সঙ্গীত ও লাইভ কনসার্টের জন্য শিল্পী টিম নিয়ে আসা হয়। আমরা সংগীতের মধুরাজ্যে হারিয়ে যাই। সেই রাতে লটারী ড্র হয়, প্রত্যেক পরিচালক একটি করে টিকেট তুলেন। টিকেটে টাকার পরিমান লিখা আছে। প্রতি টিকেটে দুই হতে দশ হাজারের মধ্য এমাউন্ট লিখা আছে, যার ভাগ্যে যে এমাউন্ট উঠে তিনি সেই পরিমান টাকা পান। লটারীর টিকেট প্রথম পুরস্কার দশ হাজার টাকা পান মেডিসিন বিশেষঞ্জ ডাঃ নাজমুল ভাই, দ্বিতীয় পুরস্কার নয় হাজার টাকা পান ডাঃ নাহদ ইলোরা। তারা দুইজনই বিশেষঞ্জ এবং এফসিপিএস ডিগ্রিদারী। ভাবলাম ভাগ্য বুঝি ভাগ্যবানদের খোঁজে বেড়ায়। আমরা এখানকার সবচেয়ে গরিব পরিচালক, অথচ আমাদের লটারী ভাগ্যে জুটে মাত্র তিন হাজার আট শত টাকা। সবাই লটারীতে পাওয়া টাকা গ্রহণ করলেও শিশু বিশেষঞ্জ সৈয়দ মুসা কাইউম ভাইয়ের শিক্ষিকা পত্নী অভিমত প্রকাশ করেন লটারি হারাম এবং তিনি লটারিতে পাওয়া ছয় হাজার টাকা গ্রহণ করেননি। তার এই সুকান্ড দেখে ভাবি আমরাইতো প্রকৃত ভাগ্যবান, আল্লাহ আমাদেরকে বেশী ভালবাসেন বলেই লটারির হারাম মানি অল্পই দিয়েছেন। পরক্ষণেই মনে পড়ে যায়, অনেকবার লাফ দিয়েও উপরে ঝুলে থাকা আঙ্গুরথোকা ধরতে না পেরে এক শৃগাল বলেছিল, ভালই হয়েছে, আঙ্গুর ফল টক।    

মানুষের জীবনে কোন কোন দিন, কোন কোন রাত হয় আনন্দফুর্তির এবং পরস্পর মিলনের। রিসোর্ট প্যালেসের সেই একদিন ও একরাত ছিল এমনই একটি দিন ও রাত। এযেন বাদশাহ হারুনুর রশিদের আরব্যরজনীর হাজার রাতের কোন এক আলৌকিক রাত।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন