বুধবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৬

ভূমিকম্পে তছনছ হলাম আমি

ভূমিকম্পে তছনছ হলাম আমি


ফাগুনের আগুনে ভরা সোনার সিলেট,
ঝাপসা মেঘে ঢাকা আকাশ।
বৃষ্টি ভেজা দিন ছিল,
ঘুম-জড়ানো রোদ ছিল,
উচ্ছল বাতাস ছিল।
সরকারী কলেজের ঝাউবনে, 
বায়ু মহানন্দে নাচছিল,
সবুজের বুকে বুকে, শতবর্ণে শত ফুল,
প্রনয়ের জোয়ারে ভাসছিল।
দুর দিগন্তময় সারি সারি টিলার ধারা,
সামনে চিরদিনের চঞ্চল ঝর্ণার নৃত্য,
আশে পাশে সুরম্য ইমারত,
দীঘির কালো জলে পদ্মপাতার অপূর্ব সমারোহ।
সুন্দর কমলের সলাজ মুখ, সহাস্যে বলছিল,

“ সুন্দর আমি, সৌরভ আমি, সুরম্য আমি;
আমি অমৃত সুধা,
আমি হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটাই,
মানব মনের দাবী করি পূর্ণ,
অশান্ত প্রাণে ঢেলে দেই, শান্তির জলাশয়।
আমি পতঙ্গের আকর্ষণ,
প্রজাপতির প্রেমনেশা,
মক্ষিকার সাধনার ধন।
রূপপিপাসু পরিতৃপ্ত হয় আমার রূপশ্রী দেখে।
 আমি ভালবাসার খনি, পৃথিবীতে সবার,
আমি আমৃত্যু দাঁড়িয়ে থাকি
বক্ষ উম্মোচিত করে
বাতাসে মেলে ধরে প্রাণ।
বিলিয়ে দিতে আমার হৃদয়ের শ্বাসত সম্বল,
রূপ রস গন্ধ শোভা প্রেম ভালবাসা।
কে আছ; প্রাণভরে ভালবাসবে আমায়,
আমি স্থবির রপসী এক সবার ভালবাসার,
প্রেমের বাস্তব এক তৈলচিত্র আমি।"
মুহুর্তে কলাভবনের চূড়া হতে
উড়ে গেল একজোড়া জালালী কবুতর,
বাতাসে বাকুম বাকুম সুরের লহরী তুলে।
বসলো আমার শিরোভাগে,
কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়ার বর্ণীল রূপাগ্নি দেশে।
পাশে দাড়িয়ে আছে
ধূয়ারাঙ্গা ফুলে সেজে এক স্থবির বন্ধু
জানি না কি নাম সে বন্ধু বৃক্ষের?
নাম জেনেই বা লাভ কী আমার।
টাকালতা শাড়ি পরে বধু সেজে,
পাশে ছিল পামতরু সারি। 
তাদেরই ছায়ায় কচি ঘাসের বিছানায়
ওগো মোর শিমি ...
তুমি একমনে জপছিলে পরীক্ষার পড়া,
চঞ্চল চোখ দু’টি আমার নিজের অজান্তে
নিক্ষিপ্ত হয়েছিল তোমার অপরূপ নয়নে,
রূপসী চেহারায়।
সেদিন সলজ্জ আখি দু’টি তোমার,
সযতনে গিয়েছিল ফিরে,
আমার হৃদয়ের তারে বীনার ঝংকার তুলে,
বুকের প্রকোষ্টে সুতীব্র আগুন জ্বেলে,
আমাকে সুপ্রশস্থ করে সাগরের মতন। 
তোমার স্মৃতি ভিডিও রেকর্ডিং হয়ে
বসে গেল অন্ধকারে,
আমার হৃদয়ের জনশূন্য ঘরে।
তোমার আমার শুভদৃষ্টি এক হয়ে শেষে,
ভীষণ যন্ত্রনায় ছুড়লো আমায়,
প্রচন্ড ভূমিকম্পে তছনছ হলাম আমি।

রচনাকালঃ 
মার্চ, ১৯৮৩ সাল
 আমার এম সি কলেজ জীবন  


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন