উমরা পালনে দ্বিতীয়বার সৌদি আরব গমন। এবার প্রথম দেখলাম হেরা গোহা ও জ্বীনের উপত্যকা। পর্ব- এক
যাত্রাঃ ১৪ ডিসেম্বর
২০১৬ ফেরাঃ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ অবস্থানঃ ১৫ দিন
আমাদের একমাত্র সন্থান জেফার কুরেশী এইচ এস সি (বিজ্ঞান) পাশ করে নর্থইস্ট মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হলে আমার গিন্নী ডাঃ নুরজাহান বেগম চৌধুরী মহান আল্লাহ পাকের দরবারে শোকরিয়া আদায়ে ছেলেকে পবিত্র কাবাঘর ও রসুলের রওজায় নিয়ে যেতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন। আমাদের সাথে সহযাত্রি হন ছোটবোন মান্না, ছোটভাই জালালাবাদ গ্যাসের ডিপোটি ম্যানেজার নিশাত কুরেশী, তার পত্নী প্রাইম ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ফাহমিদা হোসেন লোমা ও তাদের ছোট্ট মেয়ে জাইমা কুরেশী।
আমরা লতিফ ট্রেভেলসের পঞ্চাশ সদস্যের এক কাফেলায় শরীক হই। মহান আল্লাহ পাকের দরবারে অশেষ শোকরিয়া তিনি আমাদেরকে আবার তার পবিত্র কাবাঘর ও রসুলের রওজায় সপরিবারে তওয়াফের সৌভাগ্য দান করেন। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ খৃষ্টাব্দ হজরত শাহজালাল(রঃ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইহরাম বেঁধে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আমরা বাংলাদেশ বিমানে আরোহন করি। মনে পড়ে ২০১০ সালে ফরজ হজ্জ আদায়ে এখানে আমরা অনুরূপ ইহরাম বেঁধে ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক অর্থাত আমি হাজির ,প্রভূ আমি হাজির’ জপে জপে বিমানে আরোহন করেছিলাম। এ এক দারূন অনুভূতি। ঐশ্বরিক আলো এসে মনকে আচ্ছন্ন করে দেয়। মহান আল্লাহের মেহমান আমি- ভাবতেই মনটা পুলকিত হয়ে উঠে। মনে হয় আমি মেহমানকে আল্লাহ যেন দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার পবিত্র কাবাঘরে।
ভোরের আজানের বেশ আগে আমরা জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরন করি। ফজরের আজান হলে বিমানবন্দরের জামাতে নামাজ পড়ে মক্কা যাবার জন্য বাসে আরোহন করি। আমাদের গাইড হাসান আব্দুল্লাহ যেন একজন দাড়িবিহীন হুজুর। তার বাসা সুবিদবাজার। বাসের মাইকে তিনি উমরা হজ্বের নিয়ম কানুনের সাথে সব প্রয়োজনীয় ধর্মীয় বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমের মত আরবী-বাংলার মিশ্রনে বয়ান পেশ করেন। পুরো পথেই তিনি হ্যান্ডমাইকে আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক তালবা পড়েন এবং সাথীরা সমস্বরে উচ্চারন করেন। বাস মক্কায় প্রবেশ করে কাবাঘরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে সবার চোখ জলে ভিজে যেতে দেখি। বাসটি ইব্রাহিম খলিল রোডে প্রবেশ করে অতি ধীর গতিতে চলে নির্ধারিত দ্বার আল খলিল হোটেলের সামনে আসে। মালামাল নামানো শেষ হলে সামনে আসেন আমাদের সিলেটের পাশের বাসার ভাড়াটিয়া ও আত্মীয় ইসলাম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি এখানে লতিফ ট্রেভেলসের প্রতিনিধি। আমরা সবাই প্রচন্ড ক্লান্তি নিয়ে গোসল ও খাবার সেরে গভীর ঘুমে ডুবে যাই। জোহরের নামাজ কাবাঘরে জামাতে পড়ে উমরা হজ্ব শুরু করি। কাবাঘর তওয়াফ জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা। তওয়াফের মত ইবাদাতি করার সুযোগ অন্য কোথায়ও নেই। হাজরে আসওয়াদ বা পবিত্র পাতরের সোজা রেখা বরাবর এসে সবুজ বাতির নিচে নেমে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহীল হামদ’ পড়ে কাবাঘরকে হাতের বায়ে রেখে তওয়াফ শুরু হয়। এই তওয়াফের মিছিল এখানে বয়ে যাচ্ছে শত শত বছর ধরে।
প্রাক ইসলামী যুগে
ইব্রাহিম(আঃ) এই ঘর প্রতিষ্টার পর হতে এই তওয়াফ শুরু হয়ে শত শত বছর ধরে ৩৬৫ দিন ২৪
ঘন্টা এখানে নানা জাতি- ভাষা- বর্ন নির্বিশেষে মানুষের আল্লাহমুখী অভিযাত্রা চলছে।
এখানে মিছিলে শরীক হয়েছেন হজরত ইব্রাহিম(আঃ), হজরত ইসমাইল(আঃ), আমাদের প্রিয়নবী
হজরত মোহাম্মদ(সঃ), তার সাহাবী, তাবেইন, তাবে তাবেইন সহ মুসলিম বিশ্বের বরেন্য ও ঐতিহাসিক
ব্যক্তিবর্গ ও ধর্মপ্রান জনমন্ডলী। আমাদের সৌভাগ্য দয়াময় স্রষ্টা আমাদের ভাগ্যে ছয়
বছর পর আবার এই আলোর মিছিলে শরীক হবার সুযোগ করে দেন। কাবাঘর সাত বার আবর্তনের সময়
মনটা যেন দেহমুক্ত হয়ে পরমাত্মার সাহ্নিধ্যে চলে যায়। পাশে পবিত্র কাবাঘর- এ যে
মানবাত্মা ও পরমাত্মার সম্মিলন কেন্দ্র। এখানে মানুষের মনের পর্দায় ভেসে উঠে
জীবনের লক্ষ্য ও অভিমুখ। মনে নানা স্বপ্ন জাগে, অজস্র স্বপ্ন মানব মনকে আচ্ছন্ন
করে দেয়। জীবনে ভাল কিছু করার ও মরণোত্তর উত্তম কিছু পাবার আকাঙ্ক্ষা মানুষকে
আবেগতাড়িত করে। এযেন পরমাত্মা স্বয়ং এসে মানবাত্মায় ভর করেন। মানুষকে তিনি পথ
দেখান, স্বপ্ন দেখান। এক ঐশ্বরিক আলো এসে নশ্বর জীবনটাকে নয়নের সামনে তুলে ধরে, আর
বলে পড়-‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতো ওফিল আখিরাতি হাসানাও ওয়াকিনা
আজাবান্নার, ওয়াদ খিলনাল জান্নাতা মা আল আবরার, ইয়া আজিজু, ইয়া গাফফার, ইয়া
রাব্বিল আলামিন।‘ প্রভুর মিছিলের লক্ষ লক্ষ মানুষের উচ্চারনে মুখরিত উক্ত বানীর
অর্থ হচ্ছে-“ হে প্রভু তুমি আমাদের দুনিয়া ও আখেরাত জীবন মঙ্গলময় কর। আমাদেরকে
দোযখ হতে বাচাও ও জান্নাত দান কর। তুমি প্রতাপশালী ও ক্ষমাশীল, তুমি বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের
প্রতিপালক।“ মানুষের এই উদাত্ত ফরিয়াদ মনে হয় তাৎক্ষনিক চলে যায় নিরাকার সর্ব
শক্তিমান আল্লাহর শাহী দরবারে। বিজন মরুপ্রান্তরে পুত্র ইসমাইলের জন্য পানির খোঁজে
সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের দুই পাদদেশে দৌড়ান হজরত ইব্রাহিম(আঃ) পত্নী বিবি
হাজেরা(রাঃ)। আর বিবি জাহেরার(রঃ) পবিত্র স্মৃতির স্মরনে ও অনুকরনে উমরা হজ্বের অংশ হিসাবে সাড়ে তিনবার সাফা হতে
মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে হাটেন ও দৌড়ান হাজীগন। এই দুই পাহাড়ের মধ্যভাগে শিশু হজরত
ইসমাইলের(আঃ) পায়ের আঘাতে তৈরী হয় বিশ্বের সর্ব উৎকৃষ্ট আবে জমজম প্রস্রবন- যার পি
এইচ মান্সম্পন্ন পানি আর কোথায়ও পাওয়া যায়না। এখানে এহরাম পরা মানুষের ধাবমান
মানুষের দ্রুতগামী প্রবাহ দেখলে মনে হয় এযেন খোদাপ্রেমে ফানাফিল্লাহ এক অদম্য
ম্যারাথন দৌড়। যেন এক আদিম অকৃত্রিম মানব মিছিল। এখানে একাকার হয়ে গেছেন রাসুলের
কালো উম্মত, সাদা উম্মত, খাটো উম্মত, দীর্ঘ্য উম্মত, আরবী উম্মত, আজমী উম্মত। এমন
কোন জাতি, বর্ন, ভাষা ও নৃতাত্বিক জনগোষ্টি নেই যাদের উপস্থিতি এখানে নেই।
কাবাঘরে প্রচন্ড ভীড়।
তাওয়াফ একসাথে হলেও নারী ও পুরুষের নামাজের প্রাংম আলাদা তাওয়াফ কালে মাকামে
ইব্রাহিম বারবা দেখা যায়। ভীড় ঠেলে হাতিমে ঢুকে আমি ও জেফার কয়েক রাকাত নামাজ পড়ি।
অর্ধ বৃত্তাকার হাতিম চত্বর এক সময় কাবাঘরের মূল অংশ ছিল। কুরাইশরা কাবাঘর
পুনঃনির্মানের সময় এইস্থান বাদ পড়ে যায়। কাবাঘরে সুউচ্চ দরজার নিচপ্রান্তে হাত
রেখে প্রার্থনাও করি। ২০১০ সালে ফরজ হজ্ব আদায়কালে হাজরে আসওয়াদ স্পর্ষ করা সম্ভব
হলেও এবার ভীড়ের জন্য অগ্রসর হতে সাহস করিনি।
কাবাঘর যেন নরনারী
পরস্পরকে হারিয়ে ফেলার স্থান। ভিন্ন ভিন্ন প্রাঙ্গণে নামাজ পড়ে কিংবা তাওয়াফকালে
চোখের আড়াল হলে ফিরে পাওয়া খুবই কষ্টকর। কাবাঘর আয়তাকার হলেও কাবা মসজিদ ও মাতাফ
প্রাঙ্গণ গোলাকার। এই বৃত্তাকার জায়গায় গোলক ধাঁধা সৃষ্টি হয়। সবদিক সমান ও দেখতে
একই ধরনের এখানে চোখের পলকে সঙ্গিনী নারীরা হারিয়ে যান। অনেক প্রচেষ্টার পর ভাগ্য
সুপ্রসহ্ন হলে খোঁজে পাওয়া যায়, নতুবা দেখা হয় হোটেলে ফিরে। দারূন দুশ্চিন্তায়
কাটে দুজনের বিরহবেলা। সবার পকেটে হোটেলের কার্ড রাখতে হয়। উক্ত কার্ড নারীদেরকে
পৌছে দেয় হোটেলের ঠিকানায়। এই হারিয়ে যাওয়ার যন্ত্রনা প্রতিদিন আমাদেরকে আক্রান্ত করে।
২০১০ সালে হজ্বের সময় মিসফালার যে আল মদীনা হোটেলে ৩৩দিন অবস্থান করি, সেই হোটেলের
কোন অস্থিত্ব খোঁজে পেলাম না। ঘড়ি মিনারের সামনের সবকিছু ভেঙ্গেচুরে বিশাল ময়দান
হয়ে গেছে। এই ময়দানে তাবু ফেলে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে বিচরন ও উড়াউড়ি
করে শতশত কবুতর। ১৪ ডিসেম্বর হতে ২২ ডিসেম্বর ২০১৭সাল পর্যন্ত আমরা মক্কায় অবস্থান
করি। আমার জান্নাতবাসী জনক, জননী ও অসুস্থ বড়বোন রেহার অনুকূলে তিনবার ও নিজের
একবার মোঠ চারবার উমরা হজ্ব করি। কাবাঘরের কিনারায় বাসে চড়ে আয়শা মসজিদে গিয়ে
ইহ্রাম বেঁধে দু’রাকাত নামাজ পড়ে আবার কাবায় ফিরে আসতাম। খরচ হত ছয় দিরহাম। মক্কায়
অবস্থানকালে একদিন জবলে রহমত বা রহমতের পাহাড়ে যাই। নিষিদ্ধ ফল ভক্ষনের অপরাধে
বেহেশত হতে বহিস্কৃত আমাদের আদিপিতা হজরত আদম(আঃ) পৃথিবীতে এসে মা হওয়া(আঃ) হতে
বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। অনেক কান্নাকাটি করে আল্লাহের কাছে বহুবছর প্রার্থনার পর
আল্লাহ তাদের ডাক কবুল করেন এবং এই পাহাড়ের উপর তাদের সম্মিলন ঘটান। জবলে রহমতে
আমাদের সিলেটের সুউচ্চ টিলার মত তবে পাতরের গড়া পাহাড়। এই পাহাড়ের উপরে একটি
চতুভূজ স্থম্ব রয়েছে। এই স্থম্বের ওয়ালে অজস্র মানুষ কি যেন লিখে যাচ্ছে। কাবাঘরের
সন্নিকটে রাসুলের(সঃ) বাড়ি দেখতে যাই। স্থানটায় একটি পাঠাগার দেখতে পাই এখানে নাকি
রাসুলের জন্ম হয়। রাসুলের আর তেমন কোন স্মৃতিচিহ্ন এখানে নেই। ফরজ হজ্ব আদায়কালে
২০১০ সালে জবলে সুরের যে পাহাড়ি গোহায় হিজরতের সময় রাসুল তিনদিন লুকিয়ে ছিলেন
সেখানে আরোহন করি। তখন জবলে নূরের পবিত্র হেরাগোহায় ঢুকার সৌভাগ্য আমার হয়নি। এবার
আশা পূর্ন হল। আমি, জেফার এবং নিশাত একঘন্টা হেঁটে নূরপাহাড়ের চুড়ায় পৌছি। আসরের
নামাজ পড়ে নূর পাহাড়ের পাদদেশে যাই। সেখানে এক পাকিস্থানি দোকানে খেজুর ও পানি
কিনে তা খেয়ে খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করে সিড়ি সিড়ি পাহাড় বেয়ে এক বিশাল উচ্চতায় আরোহন
করি। উপরে কিছু জায়গায় কিছু দোকান আছে। আমাদেরকে প্রথম কোরান শরীফ নাজেল হবার
পবিত্র স্থানটি স্বচক্ষে দেখানোর জন্য মহান আল্লাহ পাককে প্রানভরে শোকরিয়া জানাই ।
পাহাড়ের উপর বিশাল পাতরের গায়ে লিখা রয়েছে পৃথিবীতে সর্বপ্রথম অবতীর্ন হওয়া
কোরানের পবিত্র আয়াত- ‘ইকরা বিসমী রাব্বিকাল্লাজি খালাক্ক, খালাকাল ইনসানা মিন
আলাক্ক’। এদিকে পশ্চিম দিগন্তে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। মাইল খানেক নিচে মক্কাগামী
মহাসড়ক দেখা যাচ্ছে। সুদূরে কাবার সামনের ঘড়িমিনার সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে
আছে। এযুগে এই সুউচ্চ শক্ত শিলার পাহাড়ে ওঠার সিড়িকাটা রাস্থা রয়েছে। কিন্তু
প্রাচীনকালে এই এবড়ো তেবড়ো খাড়া ও ভঙ্গুর পাতুরে পাহাড় বেয়ে আল্লার নবী কিভাবে যে
এত উঁচুতে উঠে আসতেন ভাবলে অবাক লাগে। এখানে দিনের পো দিন, রাতের পর রাত,
ধ্যানমগ্ন নবীকে বিবি খাদিজা(রাঃ) কখনও নিজে কখনও দাসী মারফত খাবার পাঠাতেন। তখন
ঝিরঝির ঠান্ডা বাতাস বইছে। হঠাৎ মাগরিবের আজান শুনা গেল। চারপাশে পিনপতন নিরবতার
খেলা। এই ভয়ঙ্কর নিস্থব্ধতা মানুষকে ধ্যানী করে দেয়। চারপাশে অসংখ্য জায়নামাজ ফলে
রাখা আছে। আমরা অজু অবস্থায় ছিলাম। একটি প্রকান্ড সমতল পাতরের উপর চারটি জায়নামাজ
বিছায়ে আমরা জামাতে নামাজ পড়ার প্রস্তুতি নেই। লাল রক্তিম সূর্য পশ্চিমের পার্যত্য
মরুভূমিতে মিলিয়ে গেল। কাবার ঘড়িমিনার বরাবর কাবার দিকে কিবলামুখী হয়ে আমরা জামাতে
দাড়াই। এই জামাতে আমি ইমামতি করি। একজন আরবী, জেফার ও নিশাত পিছনে দাঁড়ান। সুদূরে
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মসজিদুল হারামাইন সংলগ্ন বিখ্যাত মক্কাঘড়ি। সুরা আল ফিল ও সুরা
আল কুরাইশ আমি নামাজের মধ্যে তেলাওত করি। সুরা ফিল পাঠের সময় মনে হচ্ছিল আব্রাহার
হস্থি বাহিনী হয়তো বা আশপাশেই আবাবিল পাখির আক্রমনে ধ্বংস হয়েছিল। সুরা কুরাইশ
পাঠের সময় মনে পড়ছিল প্রাক ইসলামী যুগের সেই কুরাইশদের কাহিনী যারা শীতে ও
গ্রীষ্মে ইয়ামেন, ওমান, ইরাক, সিরিয়া, মিসর ইত্যাদি দেশে উটের কাফেলা নিয়ে নিরাপদে
ব্যবসা করে বেড়াতো। পবিত্র কাবাঘরের খাদেম হবার সম্মানে কেউ তাদের উপর হামলা বা
লোটতরাজ করার সাহস করতনা। সুনসান নিরবতা সন্ধ্যার বিদায়ী ছায়ায় ছোট ছোট পাহাড়ি
গোহায় বসে ছবি তুলি। আর পাহাড় বেয়ে হেরা গোহার ছাদের উপরে যাই। এবার নেমে এসে
মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে ২০/২৬ ফুট দৈর্ঘ্য এক চিকন সুড়ুংপথ পার হয়ে পবিত্র হেরার
গোহার সামনে যাই। ত্রিকোনাকার গোহা, উপরে ত্রিকোনাকার পাতুরে ছাদ। সামনে দাঁড়ানোর
জন্য প্রায় ১২ফুট x ১৫ ফুট খোলা জায়গা। গোহার একদিক খোলা। গোহাটি প্রায় ২০ফুট লম্বা ও ১০ফুট চওড়া
হবে। সামনে খানিক উচুতে সমতল পাতুরে বসার বেঞ্চের মত জায়গা। পাশঘেষে পাহাড়ের প্রায়
খাড়া ঢালু প্রায় অর্ধমাইল নিচে নেমে গেছে। আনন্দদায়ক শীতল পবন বইছিল তখনও। ইন্দোনেশিয়ার
হাজীরা হেরাগোহায় তখন পালাক্রমে নফল নামাজ পড়ছিল। কোনমতে ভীড় ঠেলে ঠেলে আমি পবিত্র
গোহায় প্রবেশ করি। আল্লাহর রসুলকে স্মরণ করে তখন চোখে জল এসে গেল। এই সেই হেরাগোহা
যেখানে আল্লাহর শ্রেষ্ট গ্রন্থ পবিত্র কোরান সর্বপ্রথম অবতীর্ন হয়। মুহূর্তে মনটা
চোউদ্দশত বৎসর পূর্বের সেই দিনটিতে চলে গেল। এই নূরপাহাড় আছে, হেরার পবিত্র গোহাও
অবিকৃত আছে, কিন্তু সেই সোনালী সময়টি নেই, আর নেই সেই সর্বশ্রেষ্ট মহামানম যার
পফহূলায় এই পাহাড় ধন্য হল। মনে হল এই পাহাড় ও গোহায় যেন তার পবিত্র ছায়া ও মোবারক
দেহস্পর্শ কাঁদছে নিরবে। ‘সালামুন ইয়া রাসুল আল্লাহ আলাইকুম, সালামুন ইয়া নবী
আল্লাহ আলাইকুম’। নিজের অজান্তে চোখের অশ্রু হতে বের হয়ে বাহিরের পাহাড়ি মরু
বাতাসে মিলিয়ে গেল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন