উমরা পালনে দ্বিতীয়বার সৌদি আরব গমন। এবার প্রথম দেখলাম হেরা গোহা ও জ্বীনের উপত্যকা। পর্ব- দুই
একদিন হেঁটে হেঁটে কাবার
খানিক দূরে অবস্থিত মক্কার পবিত্র জান্নাতুল মাওয়া কবরগাহে প্রবেশ করি। গেটের ভিতর
রসুলের প্রিয় সহধর্মিনী উম্মুল মুমিনীন হজরত খাদিজা তাহেরার(রঃ) সমাধীতে যাই।
এখানে অজস্র সাহাবী, তাবেইন, তাবে তাবেইন সহ অনেক পূন্যবান মানুষ ঘুমিয়ে আছেন।
যথেষ্ট সময় নিয়ে অতিভক্তি সহকারে জেয়ারত করে আমি ও জেফার বেরিয়ে আসি।
একদিন আমরা লতিফ
ট্রেভেলসের বাসে মক্কা জিয়ারায় বের হই। আমি নিশাত ও জেফার গাড়ি মিস করে অন্য একটা
ভাড়া কারে চড়ে মিনা, মুজদালিবা, জামারাত ও আরাফাতের ময়দান ঘুরে আসি। মক্কায়
অবস্থানকালে একদিন গাড়ি ভাড়া করে জেদ্দা যাই। আমার চিকিৎসক পত্নী ডাঃ নুরজাহান বেগমের একজন রোগিনীর
স্বামী আমাদেরকে নিয়ে সারা জেদ্দা শহর ঘুরে দেখান। পোড়ামক্কা নামক স্থানে হজরত
হাওয়ার(আঃ) সমাধী, লোহিত সাগরের বাঁধানো তীরবর্তী সৈকতে লাল সূর্য সমুদ্রে সন্ধ্যার
আলো বর্ষন করতে করতে ডুবে যাবার দৃশ্য দেখি। সাগরের তরঙ্গমালা ও উদ্যম বাতাসের
সহিত আমাদের মাখামাখি হয়। মরুভূমি ও সাগর ঘেরা হাইটেক নগরী জেদ্দা মরুফুল ও বৃক্ষে
সুসজ্জিত হয়ে শতশত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারন করে আছে।
২২ ডিসেম্বর ২০১৭ সাল। আমরা একটি বড় বাসে চড়ে অর্ধশত যাত্রি বাদজোহর মদীনায় রওয়ানা হই। পথে গাড়ী থামিয়ে স্থানে স্থানে আসর এবং মাগরিবের নামাজ পড়ানো হয়। প্রতিস্থানে ছোট বাজার রয়েছে। সবশেষে এক মহাসড়ক বাজারে গাড়ী যাত্রা-বিরতি করে। আমরা এসার নামাজ আদায় করে বড় একটি খাবার দোকানে প্রবেশ করি। একটি টেবিলের খালি চেয়ারে বসামাত্র এক বিদেশী দম্পতি তাদের সমুদয় খাবার মোরগ বিরিয়ানী ও পানীয় আমাদের দিকে ঠেলে দিয়ে উঠে যান। আমাদের আর তেমন কোন খাবার কিনতে হয়নি। আমরা তিনজন আল্লাহ প্রদত্ত উপহার তৃপ্তি সহকারে উদরে পাঠিয়ে দেই। দারূন শান্তির শহর মদীনা। এযাত্রায় আমাদের আবাস হোটেল আস সালাহিয়া। মসজিদে নবুবীর সন্নিকটে হোটেলটির অবস্থান। চারপাচ মিনিট হাঁটলেই মসজিদে নবুবী চত্বরে প্রবেশ করা যায়। মদীনা মসজিদের বহির বাউন্ডারীতে প্রতি গেটে ধারাবাহিক নম্বর রয়েছে। এই নম্বর মনে রাখলেই পথ চিনতে ভূল হয়না। মদীনা মসজিদ কাবা মসজিদের মত গোলাকার নয় বরং আয়তাকার। মূল মসজিদে নবুবী রওজা মোবারক সহ বর্গাকার এবং সম্প্রসারিত হয়ে পরবর্তীকালে নির্মিত পিছনে বিশাল আয়তাকার মসজিদ। নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা অজু, বাথরুম ও ভিতরে মসজিদ প্রাঙ্গণ। মক্কা কাবাঘর দক্ষিনে, তাই এই মসজিদের কিবলা দক্ষিন দিকে রয়েছে।
২২ ডিসেম্বর হতে ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোঠ আটদিন আমরা পবিত্র মদীনায় অবস্থান করি। শেষরাতে মসজিদে নবুবীতে প্রবেশ করে প্রতিদিন তাহাজ্জুদ, সালাতুস তাসবিহ ও জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করি। তারপর রাসুলের(সঃ) রওজা মোবারক জেয়ারত করে ব্রেকফাস্ট সেরে হোটেলে এসে ঘুমিয়ে পড়তাম। কাবাতে প্রতি রাকাতে একলক্ষ রাকাত ও মসজিদে নবুবীতে পঞ্চাশ হাজার রাকাত নামাজ পড়ার সওয়াব অর্জিত হয়। তাই সময় নষ্ট না করে এই দুই মসজিদে অধিক সময় অবস্থানের চেষ্টা করি। নবুবী মসজিদের মিম্বর হতে রসুলের(সঃ) রওজা পর্যন্ত স্থানটি সবুজ কার্পেটে আবৃত। এই জায়গা হল রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের টুকরা। এখানে প্রায় ২০০/২৫০ জন লোক এক্ত্রে নামাজ পড়তে পারেন। এখানে তীব্র প্রতিযোগিতা করে ডুকতে হয়। প্রতি দশ মিনিটে ২৫০ জন মুসল্লী ডুকে নামাজ আদায় করে ভিন্ন পথে বেরিয়ে যান। সকালে নিদৃষ্ট সময় মহিলাদের জন্য রিয়াজুল জান্নাত বরাদ্ধ থাকে। সৌদি মসজিদ পুলিশ অতি শৃংখলায় রিয়াজুল জান্নাতে ২৪ ঘণ্টা ৩৬৫ দিন মুসল্লীদের নামাজ পরিচালনা করেন। আমি ও জেফার প্রতিদিন ৪০/৫০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশ করে রসুলের রওজা শরীফ ঘেষে দাঁড়িয়ে অনেক রাকাত নফল নামাজ পড়ি। আল্লাহ পাকের কাছে চাওয়া প্রতিটি ভাল কাজ সম্পাদনে সাহায্য চেয়ে দুইরাকাত করে করে নামাজ পড়ি। আমার জীবনে নিঃস্বার্থ অবদান রেখেছেন এমন কয়েকজন মানুষ যেমন মা-বাবা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, চাচাতো ভাই সাবেক আইজিপি ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী, ফুফুতো বোন সিরিয়া আপার স্বামী ভাদেশ্বরের নালিউরি গ্রামের সৈয়দ মইনুল ইসলাম কদই মিয়া প্রমুখের প্রতি কৃতঞ্জতা প্রকাশে দুই রাকাত করে নামাজ পড়ে তাদের রূহের প্রতি বখসিয়ে দেই।
লতিফ ট্রেভেলসের উদ্যোগে
একদিন আমরা বড় বাসে মদীনা জিয়ারাহ করি। গাইড ছিলেন ভারতের করিমগঞ্জের একজন হুজুর।
তিনি লাউড স্পিকারে ওহুদ ও খন্দকের ইতিহাস ঐসব স্থানে যাবার পর বর্ননা করেন। হজরত
আলী(রাঃ) এবং ফাতেমার(রাঃ) বাড়ি দেখি। খন্দকের প্রান্তরে যাবার পথে হজরত
বেলাল(রাঃ), ওসমান(রাঃ), ওমর(রাঃ) ও আবু বকরের(রাঃ) নামে প্রতিষ্টিত সুন্দর সুন্দর
গম্বুজওয়ালা মসজিদ পরিদর্শন করি। এবার ইসলামের প্রথম এবাদাতখানা কুবা মসজিদে নামাজ
পড়ে কিবলাতাইন মসজিদে যাই। এই কিবলাতাইন বা দুই কিবলা মসজিদে আবারও নামাজ পড়ি। এই
কিব্লাতাইন মসজিদে ইসলামের কিবলা জেরুজালেমের বায়তুল মোকাদ্দাস হতে মক্কার
কাবাগৃহে স্থানান্তরিত হয়। দুই মসজিদে প্রচন্ড ভীড়। অসংখ্য খেজুর বাগান পার হয়ে এক
সুবিস্তৃত খেজুর বৃক্ষের রাজ্যে প্রবেশ করি। অসংখ্য গাড় সবুজ অনুচ্চ সারি সারি
খেজুর বৃক্ষ। শত সহস্র চড়ুই পাখি গাছে গাছে কিচির মিচির করছে। বাগানের মাটি ভেজা
ভেজা ও কিছু কিছু ঘাসও রয়েছে। রোদ ও পত্রছায়া জড়াজড়ি করে খেজুর বীথিকে দারুন
আকর্ষনীয় করে রেখেছে। খেজুর বাগানের ভিতর আমরা এক ছাউনী ঘেরা বিশাল খেজুর বাগানে
প্রবেশ করি। এখানে ২০/২৫ ধরনের খেজুর বিক্রয় করা হয়। লাল, হলুদ টিয়া কালো নানা
বর্নের সাথে ক্ষুদ্রাকৃতি, বৃহদাকৃতি, গোলাকৃতি, ডিম্বাকৃতি নানাবর্ন ও আকৃতির
খেজুর এখানে রয়েছে। আজোয়া খেজুর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও দামী। ধারনা করা হয় রসুলের(সঃ)
হাতে লাগানো খেজুর গাছের বংশধ্র বৃক্ষে আজওয়া খেজুর জন্মে। প্রায় ২৫/৩০ কেজি খেজুর
কিনে আমরা বাসে ফিরে আসি। গাইড হুজুর আজোয়া খেজুর বিচির গুনাগুন ও ফজিলত বর্ননা
করে এই বিচির গুড়াকে সর্বরোগের মহা ঔষধে পরিনত করেন। হাজীগন হুজুরের বয়ানে আকৃষ্ট
হয়ে প্রচুর পরিমানে গুড়োখেজুরের কৌটা ক্রয় করেন। হুজুরের প্রচুর আয় হয়। সবার
বিশ্বাস এই গুড়া খেয়ে তাদের সর্বরোগ চিরতরে ভাল হয়ে যাবে।
একদিন মদীনা মসজিদের
সামনে কোরান এক্সিভিশনে প্রবেশ করি। কোরানের আয়াতের অর্থ বহন করে পৃথিবীতে ছ্ড়ানো
এমন নিদর্শনের অনেক ছবি ও ভিডিও চিত্র দেখি। এখানে হাজার বছর আগের হাতে লিখা
অসংখ্য কোরান শরীফ পর্যবেক্ষন করি। কালো, লাল, হলুদ, নীল ও সোনালী হরফে পেপিরাস
কাগজে লিখা এই কপিসমূহ মনে হয় হাতে নয় যেন অত্যাধুনিক ছাপাখানায় মুদ্রিত। হাতে লিখা
কোরানের পবিত্র কপিগুলো অনেক বৃহদাকৃতির। ২ ফুট * ৩ ফুট এবং প্রায় ৪/৬ ইঞ্চি
উচ্চতারও কোরান শরীফ রয়েছে। কাগজ অনেকটা আমাদের দেশের ট্রেসিং পেপারের মত।
প্রাচীন মানুষের হস্তলিখিত কোরান প্রত্যক্ষ করে সেই লিপিকার শিল্পীদের পরিশ্রম ও
নৈপুন্যের প্রশংসাই করতে হয়। আরেকদিন আসমা উল হুসনা বা আল্লাহের গুনবাচক নামের
প্রদর্শনিতে প্রবেশ করি। এখানে কোরানে বর্নিত আল্লাহের প্রতিটি নামের অর্থ ও
বাখ্যা রয়েছে। টেলিভিশনের পর্দায় পৃথিবী ও মহাবিশ্বে স্রষ্টার নামগুলোর যে প্রভাব
ও কার্যকারিতা বয়ে যাচ্ছে এর অসংখ্য নিদর্শন দেখানো হচ্ছে। নিরাকার ও
সর্বশক্তিমানের সিফতের নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ করে অন্তরের উপলব্ধি শানিত হয়। আকাশমন্ডলী,
ছায়াপথ, নক্ষত্রগুচ্ছ, সৌরজগত, বেহেশত ও দোযখের কাল্পনিক চিত্র বিশাল টিভি পর্দায়
ফুটে উঠে। পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য ও বৈচিত্র যেন মহান স্রষ্টার সৃষ্টিশক্তির মহিমা
ঘোষনা করছে। তখন মানুষের মুখ দিয়ে মনের গভীর গহীন হতে বেরিয়ে আসে-‘সোবহান আল্লাহ,
আলহামদু লিল্লাহ, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবর’। যার মর্মার্থ- ‘আল্লাহ
পবিত্র, আল্লাহ প্রশংসিত, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি মহান’।
একদিন মদীনা মসজিদের
পাশে জাদুঘরে প্রবেশ করি। এখানে রাসুলের যুগের মসজিদে নবুবী ও রসুলের বাড়ির
মিনিয়েচার প্রত্যক্ষ করি। খেজুর খুটি, মাটির ওয়াল ও খেজুর পাতার ছাউনী ডাকা তাও
আবার অর্ধেক ছাদ সেকালের মদীনা মসজিদ ও বাড়িঘরগুলার সাথে বর্তমান কালের আলো ঝলমলে
মদীনা মসজিদ ও শহরকে কোনমতেই মেলানো সম্ভব নয়। মদীনা শহর হতে ৪০/৪৫ মাইল দূরে
অদ্ভুদ একটি জায়গা ওয়াদী আল জ্বীন বা জ্বীনের উপত্যকা। এক সুন্দর ঠান্ডা সকালে
আমরা একই পরিবারের সাতজন বাস ভাড়া করে জ্বীনের উপত্যকায় রওয়ানা হই। মদীনা শহর হতে
বের হয়েই চোখে পড়ে ঝিলের মত একটি জলাভূমি। এরকম জলাভূমি আমি আরবের অন্য কোথাও
দেখিনি। রাস্থার দু’দিকে বালির মাট সুদূর পাহাড় পর্যন্ত প্রসারিত। হলুদ বালি ও
পাতুরে পাহাড় ভোরের আলোয় দারূন সুন্দর লাগছিল। পাহাড় হতে রাস্থা পর্যন্ত দ’দিকের
বালির প্রান্তর জুড়ে অজস্র খেজুরবীথি। কোথাও ফ্যাকাসে কোথায়ও সবুজ। এখানে ঋতু
তিনটি- গ্রীষ্ম, বসন্ত ও শীত। শীতের আগে বসন্তে এসব বাগানে খেজুর শস্য উঠানো হয়ে
গেছে। এখনও দু’চারটা গাছ ফুলে ফলে সুশোভিত হলেও বেশীর ভাগ বৃক্ষই শুন্য। তবে এসব
বাগানের আলাদা একটা সৌন্দর্য রয়েছে। সারিবদ্ধ খেজুর বাগানগুলো যেন মরুভূমির
অঙ্গশোভা। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর অপূর্ব সুন্দর মরুপথ ও খেজুর বীথি পার হয়ে আমরা
ওয়াদী আল জ্বীনে পৌছি। ওয়াদী আল জ্বীন এক অপ্রাকৃতিক ঘটনা সংঘটিত হবার জন্য
বিখ্যাত। এখানে পৃথিবীর মধ্যাকর্ষন শক্তি যেন উল্টো কাজ করে। এখানে পানি, বোতল,
গোলাকার বল ইত্যাদি রাস্থায় রাখলে ঢালুর দিকে না গিয়ে উল্টো উপরের দিকে গড়য়ে যায়।
এমন কি গাড়ি থামিয়ে ব্রেক নিস্ক্রিয় রাখলে গাড়ি উপরের দিকে ধাবমান হয়। এই উদ্ধমুখি
দিকে মদীনার অবস্থান হওয়ায় লোকে বিশ্বাস করতো আল্লাহর রসুলের আকর্ষনে এই
অপ্রাকৃতিক ঘটনা সংঘটিত হয়। আবার প্রাক ইসলামী যুগের মানুষ মনে করত অদৃশ্য
জ্বীনেরা এসব ঘটনা ঘটায়, তাই তারা এই পাহাড়ি জায়গাটির নাম দেয় ওয়াদী আল জ্বীন বা
জ্বীনের উপত্যকা। আমরা দেখি অসংখ্য মানুষ এই অপ্রকৃতিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করছে।
সবশেষে অনেক ঘাটাঘাটি করে জানলাম পৃথিবীতে এধরনের আরও চার পাঁচটি জায়গা রয়েছে। এই
স্থানগুলো আমরা দু’চোখে যেভাবে দেখি বাস্তবে তেমনটি নয়। পৃথিবীপৃষ্টের সহিত
দৃষ্টিগোচর উঁচু দিক হচ্ছে আসলে নিচু ও যে দিক আমরা নিচু দেখি তা প্রকৃতপক্ষে উঁচু
অবস্থায় রয়েছে। এটা আসলে এক ধরনের দৃষ্টিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছু নয় এবং এই
দৃষ্টিভ্রান্তির জন্য মনে হয় মধ্যাকর্ষন শক্তি যেন এখানে উল্টোভাবে কাজ করছে।
একদিন মদীনায় এক সুন্দর পার্কে প্রবেশ করি। কয়েকজন বাংলাদেশী পার্কটিতে কাজ করেন। তাদের কাছে শুনলাম এটা হজরত আবু বকর(রাঃ) পার্ক। ইসলামের প্রাথমিক যুগে এই জায়গা ক্রয় করে হজরত আবু বকর(রাঃ) এই বাগান প্রতিষ্টা করেন। হজরত মুহাম্মদ(সঃ) ও তার সাহাবীরা এই বাগানে বসে প্রায়ই গল্পগোজব করতেন। মক্কা ও মদীনায় প্রচুর বাংলাদেশী ও পাকিস্থানী লোকজন বসবাস করেন। এখানে পাকিস্থানীরা সংখ্যায় সৌদিদের চেয়েও অধিক। মক্কা-মদীনার ব্যবসাপাতি সবই পাকিস্থানী উর্দুভাষীদের দখলে রয়েছে। এখানে ভিক্ষাবৃত্তি হতে শুরু করে সব ধরনের কাজের কাজী পাকিস্থানীরা। পাকিস্থানী নরনারীরা সাফা-মারওয়া, কাবা প্রাঙ্গণ, মসজিদে নবুবী সর্বত্র আচমকা হাত পেতে ভিক্ষা কিংবা সাহায্য চেয়ে বসে, যেন পকেটমার তাদের সবকিছু সাবাড় করে ফেলেছে। এদেশে কিছু সংখ্যক বাংলাদেশীরা ব্যবসা বানিজ্য করলেও বেশীরভাগই শ্রমিকের কাজ করেন। বাংলাদেশীরা আত্মমর্যাদাশীল, তাদেরকে কখনও ভিক্ষাবৃত্তিতে দেখা যায়না। মদীনার ঢাকা হোটেল হতে বাংলাদেশী খাবার কিনে আনি। প্রতিদিনের এই খাবারে দেশী মাছ, মাংস, শাকসবজি সবই রয়েছে। চট্টগ্রামের লোকজন কতৃক পরিবেশিত এই খাবার খুবই মজাদার ও সুস্বাধু। আমি ও জেফার প্রতিদিন সকালে পাকিস্থানী দোকানে ফাস্টফুড খেয়ে পুষিয়ে নিতাম।
২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ খৃষ্টাব্দ। দেশে ফেরার সময় ঘনিয়ে এলো। মদীনা ছাড়তে কারও মন চায়না। রসুলের রওজা শেষ জেয়ারত করে একবুক যন্ত্রনা নিয়ে সবাই বিদায় নেন। জলসিক্ত নয়নে আমরা অর্ধশত লোক বাসে জেদ্দা পানে রওয়ানা হই। বাংলাদেশ বিমানের যাত্রিসেবার মান আন্তর্জাতিক মানের ও প্রশংসনীয়। তাছাড়া বিমানের সময়সূচিতে কোন অনিয়ম হয়নি। যথাসময়ে বিমানের ফ্লাইটটি আমাদেরকে নিয়ে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণ করে। মনে হল বাংলাদেশ বিমান ধীরে ধীরে উচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্টিত হতে চলেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন