বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা- মাস্যাসুসেট, মিশিগান এবং ক্যানাডা সফরপর্ব- আট

 


দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা- মাস্যাসুসেট
, মিশিগান এবং ক্যানাডা সফরপর্ব- আট

কানাডার রাস্থার দু’পাশের অপূর্ব সুন্দর পাহাড়, ক্ষেত, ওক ও পাইনের বনে রাতের আধার নেমে আসে। রাস্থায় কেবল গাড়ির লাইটের আলো। রুহুল বলল আমরা এখন কানাডার সবচেয়ে বড় শহর টরেন্টো এসে গেছি।

সুন্দর আলো ঝলমলে নগরী টরেন্টো। ওয়াশিংটন ডিসির মত বড় বড় রাস্থা, বাগান, ওভারব্রিজ অতিক্রম করে টরেন্টো সিটির ক্রিসেন্ট টাউনে আসি। বোন সেহার বাসা এই ক্রিসেন্ট টাউনের ৯ ক্রিসেন্ট প্যালেসের ২৮ তলা ভবনের দু’তলার ১০ নম্বার ফ্ল্যাট। এই একটি ভবনেই আছে ছয়শত ফ্ল্যাট। ভবনটির চারপাশ জুড়ে সুরম্য উদ্যান। ফুলবাগানে বসার জায়গা, হাঁটার রাস্থা, ব্যায়ামাগার, শিশুস্কুল, স্নানাগার সব নাগরিক সুবিধা ভবনটিকে ঘিরে আছে।

এই দৈত্যাকার ভবনের Ground Level হচ্ছে L. এখানে Visitor parking place. Under Ground এ P-1, P-2, P-3 নামে তিনতলা Parking এ প্রতি তলায় ২০০টি করে গাড়ি parking এর ব্যবস্থা রয়েছে। ভবনের ৬০০ ফ্লাটের ৬০০ টি গাড়ি রাখার জন্য  P-1, P-2, P-3  Parking Space ব্যবহার করা হয়। তিনবেড তিনবাথের বড়সড় বাসা। ড্রয়িং, ডাইনিং ও কিচেন বেশ প্রশস্থ। বড় বারান্দায় দাঁড়িয়ে টিলা শহর টরেন্টোর সৌন্দর্য্য প্রানভরে উপভোগ করা যায়।

৮ জুলাই ২০১৬ সাল, শুক্রবার। ঘুম হতে জেগে ট্রেডমিলে ব্যায়াম করি। জুমুয়ার নামাজ পড়তে আমরা গাড়ি নিয়ে টরেন্টো মসজিদে যাই। বিশাল মসজিদটি Steel Frame Structure এ নির্মিত। ছাদ সাদা টিনে তৈরী। মসজিদের আয়তাকার বারান্দায় খেজুর, শিরনি, হাতে তৈরি খাদ্য বিতরন করতে দেখি। মসজিদের পার্কিং এলাকা বিশাল হওয়ায় মুসল্লিদের শত শত গাড়ি পার্কিং করতে কোন অসুবিধা হচ্ছেনা।

আমার দোলাভাই কাম ফুফুতো ভাই আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এই সুদক্ষ মানুষটি চেয়ারম্যানগীরির সাথে আব্দুর রশিদ ওয়াকফ স্টেটের চাবাগান দেখাশুনা করতেন। সিরাজনগর চাবাগানের লেকঘেরা টিলায় নির্মিত অপূর্ব সুন্দর বাংলোতে অবস্থান করে চাবাগান ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানী পরিচালনা করতেন। একসাথে দু’টি কঠিন দায়িত্ব পালন তার কাছে কিছুই ছিলনা। কুদ্দুস চৌধুরীর আরেক অফিস ছিল পূর্ব দরগাগেটের রশিদ মঞ্জিল। রশিদ মঞ্জিল জরাজীর্ন হলে তিনি সংস্কার করান এবং সিলেটে এলে তিনি এখানে অবস্থান করতেন। স্পিকার ও মন্ত্রী হুমাউন রশিদ চৌধুরী ছিলেন তার ঘনিষ্ট আত্মীয়।

আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরীর একমাত্র পুত্র রুহুল চৌধুরী এবং পাঁচ কন্যা চুন্নী, গিন্নী, উর্মি ও সুর্মিকে নিয়ে বাংলাদেশে এক সুখী জীবন কাটিয়ে কানাডায় আসেন। এখন এই কানাডার টরেন্টো শহরে সবাই মিলে এক শান্তিময় নিস্তরঙ্গ জীবন পার করছেন তারা। পুত্র রুহুলকে বিয়ে দেন ফুলবাড়ি গ্রামের এমপি ফাতেমা চৌধুরীর টিলাবাড়ি।

বড়কন্যা চুন্নী বৃটেনে, গিন্নী কানাডার সেকচেচুয়ান, মুন্নী এই একই ভবনে এবং সুর্মি, উর্মি রুহুল একসাথে একই ফ্ল্যাটে আছেন।

৯ জুলাই ২০১৬ সাল, শনিবার। সকাল ঘুম হতে জেগে বাহিরে আসি। আমাদের বসন্তকালের মত আরাম বাতাস বইছে। টরেন্টোর অপূর্ব সুন্দর সকাল। পরিচ্ছন্ন সুপ্রশস্ত রাস্থা। রাস্থার একপাশে ডেন্টনিয়া পার্ক অন্যপাশে নানাজাতের কুসুমসজ্জিত বাসা সারি সারি। হেঁটে হেঁটে ডেনফোর্ড বাজারে চলে আসি। এখানে বেশ কয়েকটি বাংলাদেশী গ্রোসারি আছে। এসব বাংলাদেশী দোকানে দেশের সব ধরনের উৎকৃষ্ট মানের মাছ, তরিতরকারী, শাকসবজি ও ফলমূল পাওয়া যায়। রাস্থার অন্যপাশে Shopper Mol এর ব্যবসাকেন্দ্র ও পার্কিং এলাকা।

ক্যানাডা খুব পরিচ্ছন্ন দেশ, কোথায়ও কোন ময়লার ছিটাফুটা নেই। এখানকার মানুষ ভদ্র ও স্বল্পভাষী। এখানকার শিশুদেরকেও কোন ধরনের হৈ-চৈ, চিল্লা-চিল্লী করতে দেখা যায়না। কি যেন এক নির্জনতা ও প্রশান্তি সারা দেশটিকে জড়িয়ে রয়েছে।(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন