দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা- মাস্যাসুসেট, মিশিগান এবং ক্যানাডা সফরপর্ব- সাত
ক্যানাডা
যাত্রাঃ
৭ম জুলাই ২০১৬ সাল। সকাল ১০টায় আমার
মেঝবোন সেহা ও দোলাভাই আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী আমাদেরকে নিয়ে যেতে কানাডার টরেন্টো
হতে ডেট্রয়েট আসেন। এখানে মামীর হাতের রান্না বাংলাদেশী খাবারে লান্স করা হয়।
আমেরিকার ডেট্রয়েট হতে কানাডার টরেন্টোর দূরত্ব প্রায় ৫০০ মাইল। সেভেন সিটের বড়
গাড়ি। দুপুরের খাবার খেয়ে নামাজ পড়ে গাড়িতে বসি। চালক ভাগনা রুহুল চৌধুরী।
ডেট্রয়েটের নতুন আবাসিক এলাকা ওয়ারেন পার হই। কিছুক্ষন পর গাড়ি ১৬ লেন বিশিষ্ট
যুক্তরাষ্ট্র ক্যানাডা মহাসড়কে উঠে পড়ে। মিটারে তাকিয়ে দেখি গাড়ির গতি ঘন্টায় ১২০
মাইল, বা প্রায় ২০০ কিলোমিটার। আমি একজন চালক
হিসাবে জানি এত গতিবেগে বাংলাদেশের রাস্থায় গাড়ি চালানো অসম্ভব। এই গতিবেগে গাড়ি চালিয়ে বাংলাদেশের ত্রিপুরা হতে রাজশাহী সীমান্ত পার হতে দুঘণ্টার বেশি সময় লাগবেনা। শতশত চকচকে গাড়ী
এই প্রচন্ড গতিতে ছুটে যাচ্ছে। দুঘন্টা পর ব্লুওয়াটার ব্রিজে চলে আসি। ব্রিজটি
পাচ/ছয় মাইল লম্বা এবং রাস্থার মত ষোল লেইন বিশিষ্ট। নিচের সুপ্রশস্ত নদী বা
চ্যানেলটি সাগরসম দুইটি লেককে সংযুক্ত করেছে। ব্লুওয়াটার ব্রিজের এপার যুক্তরাষ্ট্র
এবং ওপার ক্যানাডা। আমাদের গাড়ি ব্রিজ পার হয়ে কানাডার ইমিগ্রেশন অফিসের লাইনে দাড়
হয়। এই অফিস অনেক লোককে এন্ট্রি না দিয়ে ফেরত পাঠায়। মনে মনে ভাবি আমাদেরকে যদি
ঢুকতে না দেয়। তবে সান্তনা কানাডার মাটি ছোঁয়া হয়ে গেছে। তাই নদীতীরের কানাডার
অপার সৌন্দর্য্যের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলাম।
কানাডার ইমিগ্রেশন অফিস আমাদের
গ্রীনকার্ড ও পাসপোর্ট পরীক্ষা করে কোন ধরনের হয়রানী ছাড়াই Go বলে রাস্থা ছেড়ে
দেয়। আমাদের গাড়ির বেনেটে চারটি ব্যাগেজ ছিল তাও পরীক্ষা করেনি। অথচ দেখলাম বেশকিছু
গাড়ি তারা আটকিয়ে মালামাল পরীক্ষা করছে। এই কৃতিত্বটা আমার ভাগনা রুহুলের। সে খুব
স্মার্ট ও ঊয়েল কমিউনিকেটর। অনেকগুলো ভাষায় সে পারদর্শী। কথার ফুলঝরিতে সে
ইমিগ্রেশন অফিসারদের সহজে ম্যানেজ করে নেয়। কানাডার রাস্থা যুক্তরাষ্ট্রের মত ১৬
লেনের, তবে আর মসৃন।
গতবছর নিউইয়র্ক অবস্থানকালে মামাতো ভাই
মুর্শেদকে ফোনে বলি, আমি এখন মিশিগান যাবো। তখন সে বলেছিল-
সেফাক ভাই, আপনি মিশিগান নাগিয়ে আমাদের ওয়াশিংটন
সিটিতে আসেন। মিশিগান আমেরিকার সবচেয়ে Ugly state মিশিগান গেলে
আপনার কাছে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ভূল ধারনা সৃষ্টি হবে।
সত্যিই তো মিশিগানের রাস্থায় একটু
দাগ-টাগ রয়েছে। রাস্থায় ফাটল, কিছু অপরিপাঠি ঘাস, ঝোপঝাড়, দু’একটা কাগজের
টুঙ্গা ছড়ানো যা অন্য রাজ্যগুলোয় নেই। এবার আমাদের গাড়ী কানাডার ছোট্ট শহর লন্ডনে
প্রবেশ করে। খানিক পরে একটি অত্যাধুনিক মহাসড়ক রেস্ট হাউসে প্রবেশ করি। এখানে যে
উচ্চ প্রযুক্তি রয়েছে তা বাংলাদেশে এখনও প্রচলন হয়নি। অটো ফ্লাশ, অটো টেপ, অটো টিস্যু, অটো শুষ্ক-উষ্ণ বাতাস বের হয়ে হাত শুকানো, অটো দরজা, অটো টি/কফি
পরিবেশন ও অটো বিল পরিশোধ- এযেন এক অটোমেশনের রাজ্য। এখানে এসে বুঝতে পারি আমরা
এখনও ম্যানুয়েল যুগে আছি আর উন্নত দেশগুলো অটোমেসন প্রযুক্তির যুগে রয়েছে।
প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তাদের সাথে আমাদের যোজন যোজন ফারাক।
এবার বায়ু-বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী এক বিশাল Wind Fen
Electricity অঞ্চলে প্রবেশ করি। রাস্থার দুপাশে অসংখ্য দৈত্যাকার তিন
ডানার Wind Fen মাইলের পর মাইল জুড়ে ঘুরছে এবং স্বল্প
খরচে প্রচুর Recycle electricity উৎপাদন হচ্ছে।
আমাদের ছেলেবেলায় গ্রামের মেলা হতে আমরা
ফরফরি নামে কাগজের তৈরি এক ধরনের রঙ্গীন খেলনা কিনতাম। বাশের মাথায় বসানো ফরফরিরা
বাতাসে ঘুরতো, আমরা আনন্দ পেতাম। যেদিক হতে বাতাস বয়, ফ্যানগুলো
অটোমেটিক সেদিকে মুখ ফেরায়। তাই উদ্দাম ঝড়ো বাতাসে এই অঞ্চলের কয়েক শত বর্গমাইল
জুড়ে ২৪ ঘণ্টা অটো বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। তবে একটি সমস্যা হল পাখি, উইন্ড ফেনের
ব্লেডে কাটা পড়ে অনেক পাখি মারা যায় যা পরিবেশবাদীরা মেনে নিতে পারছেন না। মনে হয়, আমাদের দেশের হাওর, দ্বীপ, সাগরপার ও
চরাঞ্চলে এধরনের উইন্ড ফেনের সাহায্যে পুনঃ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ করা হলে দেশ
বিদ্যুৎ সক্ষমতায় অনেক এগিয়ে যাবে।(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন