দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা- মাস্যাসুসেট, মিশিগান এবং ক্যানাডা সফরপর্ব- ছয়
ছোট মামা বাংলাদেশের অনেক স্মৃতিচারন করেন।
একবার নানাবাড়ির মসজিদের দোলক ঘড়িটি চুরি হয়ে যায়। ঘড়িচোর ধরতে আশপাশের গ্রামে
অনুসন্ধান চলে। ঘড়িটি চোর দূরের এক গ্রামে
বিক্রি করে দেয়। একসময় ঘড়িসহ চোরকে পাকড়াও করে আনা হলো। গ্রামের অনেক লোকজন জমায়েত
হন। সবাই অবাক, চোর পাজামা, পাঞ্জাবী ও টুপি
পরিহিত একজন ইয়া দাড়িওয়ালা হুজুর। যাকে দেখলেই সবার সালাম দিতে ইচ্ছে হয়। খবর নিয়ে
জানা গেল তিনি দূর গায়ের ভাল পরিবারের লোক। ধর্মীয় মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন। আমার
বড়মামা মাওলানা মাহমুদুর রহমান মামই মিয়া তাই চোরের গায়ে কাউকে হাত তুলতে দিলেন
না।
এবার বড়মামা চোরকে জিঞ্জেস করলেন- আপনি
কি মসজিদের ঘড়ি চুরি করেছেন? চোর হুজুর জবাব দেন ‘হ্যাঁ’ মামা বললেন, আমি জানি আপনি
একজন আলেম, চুরি করা শক্ত গোনাহ, তা কি আপনার জানা
নেই? চোর হুজুর জবাব দেন- চৌধুরী সাহেব, সবই আমার জানা আছে
কিন্তু আমার করার কিছুই ছিলনা। তিনদিন ধরে ঘরে খাবার নেই, বউ-বাচ্চারা উপোষ
রয়েছে। রাতে এই মসজিদে নামাজ আদায় করে অনেকক্ষন আল্লাহকে ডাকলাম। লোকজন সব চলে
গেলে দু’হাত তুলে আল্লাহকে বললাম- হে পাক পরোয়ারদিগার, আজ তিনদিন হয়
তোমার দুনিয়ায় কিছুই আমাদের ভাগ্যে জুটে নাই। আমি নিরূপায়। বাঁচার জন্য আমার সামনে
এখন চুরি করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। তাই চুরি যখন করতেই হবে, তাহলে তোমার মাল ঐ
ঘড়িটাই আমি চুরি করবো। হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিও, আপাততঃ তোমার এই
ঘড়িটা বিক্রি করে চাল-ডাল নিয়ে যাই, কয়েকটা প্রাণকে
বাঁচাই।
চোর হুজুরের বিবরন সবাই বিশ্বাস করলেন।
বড়মামা চোর হুজুরকে কোন প্রকার হয়রানি না করে উল্টো প্রচুর টাকা পয়সা দিয়ে
সসম্মানে বিদায় জানান।
বড়মামা বড় আলেম। কোনটি জায়েজ আর কোনটি
নাজায়েজ, তা নিয়ে তিনি সদাই ব্যস্ত। নানাবাড়িতে
একবার প্রচুর কচুর মুকি হয়। কিন্তু সমস্যা হল এই মুকি খেলে গলে চুলকায়। এত মুকি কি
করা যায়। সবাই বললেন হাসমতি ঝির স্বামী অসির মামুকে দিয়ে এই মুকি বিক্রির জন্য
দক্ষিনভাগ বাজারে পাঠানো হউক। এবার বড়মামা বললেন, চুলকানোর কথা গোপন
রেখে ক্রেতার কাছে এই মুকি বিক্রি করা জায়েজ হবেনা। মাওলানা মামু কড়া নির্দেশ দেন, এই মুকি খেলে গলায়
চুলকায় একথা ক্রেতাকে জানিয়ে যেন এই মুকি বিক্রি করা হয়।
অসির মামু মুকি নিয়ে বাজারে বসলেন।
সুন্দর মুকি দেখে লোক কিনতে আসে। অসির মামু বলেন, কিনে নেন তবে এই
মুকির তরকারি খেলে গলায় চুলকায়। বাজার শেষে দেখা গেল একটা মুকিও বিক্রি হয়নি।
বড়মামার আদেশে অসির মামু দুইমন আলু রেল-লাইনের খালে ফেলে বাড়ি ফিরেন।
ঘরে ফিরে অসির মামু বেশ ক্ষেদ নিয়ে বললেন, আজকাল সৎলোকের ভাত
নেই। আমি সততা দেখাই, তাই একটা মুকিও কেউ নেয় নাই। যদি
মিথ্যাচার করতাম, তবে দুইমন মুকির একটিও খালে ফেলতে হতনা।
ছোটমামি সেবন চৌধুরী আমাকে তার প্রবাসের নানা গল্প শুনান। আমেরিকায় এত সন্থান-সন্ততি নিয়ে গিয়ে নিউইয়র্কের কষ্টকর জীবনযুদ্ধ শেষে মিশিগান আগমন। বেবী কেয়ার, কারখানায় বোতল লেবেল করা, একাজ সেকাজ কতকাজ করেছেন। ভোরের বরফে বের হয়েছেন। শীতে গরমে বিরামহীন পরিশ্রম করেছেন। তালবটে অনেক সাধনায় গাড়ি বাড়ি করে স্থায়ী হয়েছেন।
তার কাছে বাংলাদেশেরও নানা গল্প শুনি যা আমারও কৌশর-স্মৃতি। নানাবাড়িতে প্রচুর রাজহাঁস, টেপীহাস, মোরগ পোষা হত। এবাড়িতে প্রচুর ছাগল-খাসীও হত। মামীর একটি বড়সড় খাসি ছিল। টাকার প্রয়োজন হলে একবার ছাগলটাকে বিক্রয়ের জন্য বাজারে পাঠান। হাসমতি ঝির পুত্র মোঠামাথার ছাকিল বলল, চাচি খাসি কতদামে বিক্রি করব? মামী বললেন আমার এক হাজার চার শত টাকা দরকার, এর উপর যা দাম যা হয়। বড়সড় খাসি দেখে ক্রেতা এসেই দাম হাঁকে দুই হাজার টাকা দেবে। ছাকিল জবাব দেয় চাচি বলেছেন চৌদ্দ শত টাকা হলে বিক্রি করে দিতে। বাজারের লোকেরা ছাকিলের কথা শুনে হাসাহাসি করছে। বিধান বাবু দৌড়ে ছোটমামার কাছে গিয়ে বললেন, জলদি এসো, নইলে তোমার বগডুলটা পানির দরে খাসিটা বিক্রি করে দেবে। মামা এগিয়ে যান এবং খাসিটা অবিশ্বাস্য দরে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেন।(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন