বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা- মাস্যাসুসেট, মিশিগান এবং ক্যানাডা সফরপর্ব- পনের

 


দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা- মাস্যাসুসেট
, মিশিগান এবং ক্যানাডা সফরপর্ব- পনের

দুপুরে রাহাদ চৌধুরীর সুরম্য ট্রিপ্লেক্স বাসায় খেতে যাই। তিনি সিলেটের রনকেলী গ্রামের আমার ছোটবোন মান্নার দেবর। কয়েক বছর আগে এই অতি সুন্দর বাড়িটি তিন লক্ষ ক্যানাডিয়ান ডলারে ক্রয় করেন। তিনি বললেন বর্তমানে এই বাড়ির বাজার মূল্য আট লক্ষ ডলার। আমাদের দেশের মত এখানে মানুষ মিস্ত্রি দিয়ে বাড়িঘর তৈরী করেনা। ক্যানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি বানানোর দ্বায়দায়িত্ব নির্মান কোম্পানির। কোম্পানীগুলো তাদের সব মেধা উজাড় করে পরস্পর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই অদ্ভুদ সুন্দর ও সুবিধাময় বাসা নির্মান ও বিক্রয় করে থাকে। এদেশে আইন লংঘন করে কিছু করার উপায় নেই। এক একটি এলাকায় কোম্পানীগুলো একই ধরনের ডিজাইন অনুসরন করে থাকে। বাসার ভিতরের ডিজাইনে একটু রদবদল হলেও পৌর কতৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বাইরের ডিজাইন চুল পরিমান পরিবর্তন করা যাবেনা।

রাহাদ ভাইয়ের শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে দেখা হয় এই বাসায়। তারা একসময় ফেন্সুগঞ্জ সার কারখানায় থাকতেন এবং আমার দোলাভাই ইঞ্জিনিয়ার মুফতি খালেদ ও বড়বোন রেহার খুব ঘনিষ্ট ছিলেন। সাহাদ ভাইয়ের বিয়ের ঘটকালীও করেন আমার বোন রেহা। সাহাদ ভাই পরে তার শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও শালিকাদেরে কানাডায় নিয়ে যান। তার শ্বাশুড়ি লিভার ট্রেন্সপ্লান্ট করে বেঁচে আছেন। প্রতিদিন তার কিডনী ডাইলাইসিস করতে হয়। বড় বাসার এক কক্ষে ডাইলাইসিস মেশিন বসানো। সাপ্তাহে তিনদিন নার্স এসে এখানে ডাইলাইসিস করেন। এখানে চিকিৎসা খরচ সম্পর্ন ফ্রি। যারা হাসপাতালে যেতে অক্ষম তাদের জন্য সরকার বাসায় ডাইলাইসিসের ব্যবস্থা করে দেয়। কানাডার উন্নত চিকিৎসা ও জীবনধারন পদ্ধতি বিদ্যমান থাকায় তাদের গড় আয়ু ৮৮ বৎসর, যা আমাদের চেয়ে (৮৮-৬৩=২৫) পঁচিশ বছর বেশী। দুশ্চিন্তাহীন জীবনও তাদের দীর্ঘ্যায়ু লাভের অন্যতম কারন।

রনকেলীর আরেক বেয়াই আহাদ ভাইয়ের বাসায় নিমন্ত্রন পাই। এখানে রাতে খেয়ে ফেরার সময় পোষাক ও ডলার উপহার পাই। অনেক রাতে বোন সেহা ও আমরা রুহুলের গাড়িতে করে বাসা ফিরি। সেদিন রুহুলের কাছে একজন প্রৌড় শ্বেতাঙ্গ চালকের জীবন কাহিনী শুনি। রুহুল প্রথম ক্যানাডা যাবার পর টেক্সিক্যাব চালাতো, সেই সুবাদে একজন বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ গাড়িচালকের সাথে তার পরিচয় হয়। ঐ বৃদ্ধের গাড়িটি ছিল খুব দামী এবং এই গাড়ি ছাড়া বৃদ্ধের বাড়ি বা অন্য কোন সম্পদ ছিলনা। তিনি ফাস্টফুড খেতেন এবং গাড়িতে ঘুমাতেন। তিনি স্নান সারতেন সরকারী সুইমিংপুলে। সামারের পাচ-ছয় এভাবেই তিনি গাড়িতে কাটিয়ে দিতেন। ক্যানাডায় শীত আসামাত্র কোন গ্যারেজে গাড়ি ফেলে বৃদ্ধ উদাও হয়ে যেতেন। সামারে গাড়ি চালিয়ে জমানো টাকা খরচ করতে ছুটে যেতেন উষ্ণ কোন দেশে। সামারের আগমনে সবটাকা খরচ করে শুন্যহাতে ফিরে আসতেন ক্যানাডায়। এমনই এক বাৎসরিক ঘুর্নীচক্রে এই সাদা বৃদ্ধের জীবন বয়ে যাচ্ছে। তার কোন চিন্তা নেই, রোগ হলে সরকার দেখবে, অক্ষম হলে সরকার সামলাবে, মারা গেলেও দাফন করবে সরকার। তাইতো এই পশ্চিমা বৃদ্ধের No চিন্তা, Do ফূর্তি। বউ-বাচ্চা পরিবারহীন একাকী জীবন তার বয়ে যাচ্ছে বহতা নদীর মতন।

ঘুম হতে উঠে ডেন্টনিয়া পার্কে আমি ও রুহুল হাঁটছি। একজন নীলাক্ষী শ্বেতাঙ্গিনী তার প্রিয় কুকুর নিয়ে হাঁটছেন। রুহুল বলল, Madam your dog is so nice. একথা শুনে ভদ্রমহিলার চোখমুখ খুশীতে ভরে গেল। মহিলার খুশী খুশী ভাব দেখে তাকে আর আনন্দ দেবার জন্য বলল, Madam, you are beautiful but your dog is more beautiful than you. কুকুরটির আর প্রশংসা শুনে মহিলার আনন্দে গদগদ অবস্থা। তিনি কুকুরটাকে দিয়ে আমাদেরকে প্রনাম করিয়ে প্রশংসার প্রতিদান করেন।

১৩ ও ১৪ জুলাই ২০১৬ সাল। এই দুইদিন আমার সহধর্মিনী নুরজাহান বেগমের দুইজন খালাতো ভাইয়ের বাসায় কাটাই। এই দুই খালাতো ভাইয়ের নাম হেদায়েত চৌধুরী ও বেলায়েত চৌধুরী। তাদের বাড়ি ওসমানীনগর উপজেলার গওহরপুর পরগনার রাউতখাই গ্রামের বড়দিঘীওয়ালা চৌধুরীবাড়ি। সন্ধ্যায় ভাগনা নাইম আমাদেরকে নিয়ে যায় ছোট শালক  হেদায়েত চৌধুরীর নিজস্ব বাসায়। বাসার সামনে একটি সুন্দর শিশুপার্ক। সেদিন ছিল আমাদের ফাগুন গরম এবং আমাদের ফাগুনের মত এলোমেলো বাতাস বইছিলো। বাচ্চারা পার্কের ফোয়ারায় জলকেলী করে এবং আমরা বসে বসে বসন্ত বাতাস গায়ে মাখি।(চলবে)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন