দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা- মাস্যাসুসেট, মিশিগান এবং ক্যানাডা সফরপর্ব- বার
১১ জুলাই ২০১৬ সাল। রুহুলের গাড়ি চড়ে
টেইলর পার্কে যাই। টিলার উপর পিকনিক করার মাট। উপত্যকা জুড়ে বৃক্ষলতা ফলফুল ঘাসফুল
ও ঝর্নাধারা। এই পার্ক অনেকটা আমাদের লাউয়াছড়ার মত। এক ঘন্টা ঠাণ্ডা বাতাসে হাঁটি
ও দৌড়াই। জেফারকে নিয়ে পাহাড় টেকিং করি, নিচের ঝর্নায় নেমে
যাই। পাইন, উইলো ও ম্যাপল বন। বৃক্ষতলায় শুকনো পাতার
গালিচা। ওদেশের বন সম্পর্কে তেমন জানিনা। যদি সাপ বেরিয়ে আসে তাই খুব সাবধানে
হাঁটি। অসংখ্য লাল টিয়া ও হলুদ পাখি চোখে পড়ে। নানা ধরনের কাটবিড়ালি খটখট আওয়াজ
করে লাফালাফি করছে। বিরহী ও বিষন্ন রূপবৃক্ষ উইলোর তলায় আমাদের ছবি তুলি। এই
পার্কে মানুষ তাদের প্রিয়জনের স্মরনে অসংখ্য বৃক্ষরোপন করে।
বড় বড় বৃক্ষ শিকড়ের সন্নিকটে ঢালাই খোটার
মাথায় প্রয়াত প্রিয়জনের নাম, ঠিকানা, জন্ম ও মৃত্যু
তারিখ লিখে সৌজন্য নিজের নাম ঠিকানা মার্বেল পাতরে খোদাই করে কাচের প্রলেপে ঢেকে
রাখে। অর্ধ শতাব্দী আগেকারও অনেক স্মৃতিফলক চোখে পড়ে। মনে হল নিজেকে হারানো
প্রিয়জনের সাথে স্মরনীয় করে রাখার এ এক উত্তম ব্যাবস্থা। এই স্মৃতিবৃক্ষ রোপন
প্রথা বাংলাদেশে চালু করা গেলে এদেশ বৃক্ষে বৃক্ষে সবুজ হয়ে যাবে। ১৬ কোটি
বাঙ্গালী প্রত্যেকে যদি প্রিয়জনের স্মরনে একটি করে বৃক্ষরোপন করে স্মৃতিফলক বসায়
তাহলে দেশে ষোলকোটি দৈত্যাকার বৃক্ষ জন্মাতে সময় লাগবেনা।
আমার ক্যানাডা প্রবাসী দোলাভাই আব্দুল
কুদ্দুস চৌধুরী বহুবছর কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার সাতাশ
বিঘার একটি পাহাড়ি ফল বাগান ছিল। লোকে বলতো
চেয়ারম্যান টিলা। খুবসম্ভব তিনি কানাডার ন্যাচারপার্কে দেখে অনুপ্রানিত হয়ে এই
চেয়ারম্যান টিলার সামনে রাস্থার ধারে একটি স্মৃতি বটবৃক্ষ লাগান। এই বটবৃক্ষের
শিকড়ে তিনি স্মৃতিফলকে যে কবিতাটি লিখে দেন তা আপনাদের কাছে বর্ননা করার লোভ আমি
সামলাতে পারছিনা।
বটবৃক্ষ
শাহজাহানের স্মৃতি আছে যমুনার তীরে,
স্মরণ করছে লোকে যুগ যুগ ধরে।
রোপিলাম বটবৃক্ষ চেয়ারম্যান টিলায়,
পথিকেরা ছায়া পাবে, দুপুর বেলায়।
কোকিল ডাকিবে গাছে সুমধুর সুরে,
বধুরা শুনিবে বসে নিজ নিজ ঘরে।
ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি এসে খাবে তার ফল,
ময়না টিয়া আর শালিকের দল।
কেহ যেন নাহি কাটে ভূলেও কখন,
শিকারীরা এলে পরে করিও বারন।
কোনকালে যদি গাছ মরে যায় আমার,
রোপন করিও একটি নুতন আবার।
ছদগায়ে জারিয়া রূপে থাকিবে সদায়,
আমি যবে চলে যাব চিরনিদ্রায়।
রচয়িতাঃ
আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী (ক্যানাডা
প্রবাসী)
সাবেক চেয়ারম্যান, হাজিপুর ইউনিয়ন, কুলাউড়া।
প্রায়ই টরেন্টো টেইলর পার্কের জলাবনে প্রবেশ করি। নিরব নিস্থব্দ এক হিরন্ময় বন। জলের মধ্যে ছোট ছোট গুচ্ছ দ্বীপে নানা ধরনের লতাপাতা ঘাসের সমাহার। কোন এক শ্বেতাঙ্গ দম্পতিকে বনে জন্মানো এক ধরনের ফুল কুড়াতে দেখি। ভাসমান ছোট্ট জলাবনে কচ্ছপরা রোদ পোহাচ্ছে। প্রচুর ব্যাঙ লাফালাফি করছে। নাতি ওয়ামিকে বললাম তুমি ব্যাঙের ডাক শুনবা। তাহলে শুনো বলে ছোট ছোট করে পম্প পম্প বললাম। ওমনি আনেকগুলো ব্যাঙ পম্প পম্প করে ডাকাডাকি শুরু করে দিল। মাছরাঙ্গা, বক, নানা প্রজাতির জলচর পাখি ও বুনো হাঁস এখানে বিচরন করতে দেখি।(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন