দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা- মাস্যাসুসেট, মিশিগান এবং ক্যানাডা সফরপর্ব- চার
চ্যানেলের পার বরাবর খানিক ঝুলন্ত রাস্থা
এবং চ্যানেলপার ঢালাই করে রাস্থার নিচে যুক্ত করা। ছলাৎ ছলাৎ করে ঢেউয়ের পর ঢেউ
আচড়ে পড়ছে রাস্থার নিচে চ্যানেলের তীরের কিনারায়। একদিকে ঠান্ডা বাতাস ও ঢেউ, অন্যদিকে পার্কের
ফুলের অপূর্ব সমারোহ। পাশে পাঁচ তারকা Mariot Hotel এর বিশাল চত্বর।
হেঁটে হেঁটে বিখ্যাত জেনারেল মটরস কোম্পানীর এলাকায় চলে আসি। গাড়ি আবিস্কারক
উইলিয়াম ফোর্ডের প্রতিস্টিত এই কোম্পানীই আমেরিকাকে চাকার উপর দাড় করিয়েছিল।
পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ গাড়ি নির্মাতা এই
কোম্পানির চত্বরে অসংখ্য সুউচ্চ ভবন। এই ভবনমালায় রয়েছে তাদের শ’রোম, অফিস, কারখানা, ট্রেইনিং সেন্টার, কনভেনশন সেন্টার
ইত্যাদি। প্রায় ত্রিশ ফুট উপর দিয়ে অসংখ্য খুঁটির উপর বসানো হয়েছে মিটারগেজ ট্রেন
লাইন। দুই বগির একটি ট্রেন সব সময় জেনারেল মটরস কোম্পানির প্রতিটি ভবনের সামনের
প্লেটফর্মে থেমে থেমে প্রদক্ষিন করছে। কোম্পানির কর্মি, কাস্টমার ও
স্টেকহোল্ডারগন বিনা ভাড়ায় কোম্পানির বিশাল কমপ্লেক্স ঘুরে বেড়াতে পারেন। আমরা
জেনারেল মটরসের প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ করে শ’রুমে রাখা দামি
দামি গাড়ি দেখি ও ছবি উঠাই। তারপর ট্রেনে চড়ে চল্লিশ পঞ্চাশ মিনিটে পুরো কমপ্লেক্স
ঘুরে আসি। ট্রেনের বেশ কিছু অংশ লেকের গা-ঘেষে নির্মিত। ট্রেনের জানালা দিয়ে চেয়ে
দেখি লোকজন চেনেলে স্পিডবোট চড়ে ও ছোট্ট জলযান হেঁকে জলক্রীড়া করছে। বিশাল আকারের
একটি জাহাজ দেখি যা অসংখ্য কার্গো বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকা ও কানাডার সীমানাবর্তী
বিশাল আয়তনের পাঁচ লেকের পারে দু’দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্য রয়েছে। তারা এই
পাঁচ লেকে চ্যানেল দিয়ে তাদের আন্তুর্জাতিক বানিজ্য পরিচালনা করে থাকে।
লেকপার দিয়ে অনেকক্ষন হাঁটাহাঁটি করি।
লেকপারের আসনে বসে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ নরনারীরা শুয়ে শুয়ে সামারের নাতিষিতুষ্ণ
রোদে শীতল সমির অঙ্গে মাখছে। জায়গায় জায়গায় ফোয়ারায় কৃত্রিম বৃষ্টি হচ্ছে।
শ্বেতকায় এবং কৃষ্ণকায় শিশুরা ফোয়ারার ছিটানো জলে ভিজে খেলে খেলে স্নান করছে।
তাদের মায়েরাও কম যান না। ফোয়ারার জলে তাদের অর্ধনগ্ন শরীর ভিজে চুপসে আছে। তুফার
মেয়েটিও ফোয়ার জলে ভিজে খেলা করে। ১৭৭৬ সালের ৪ঠা জুলাই যুক্তরাষ্ট্র বৃটেনের কাছ
থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। ঐদিন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। সন্ধ্যার পর
সারাটা মহানগর জুড়ে আতশবাজি শুরু হয়। আমেরিকার অন্ধকার আকাশ আতশবাজির আলোয় ঝলমল
করে উঠে। দুইতিন ঘন্টা আতশবাজির তীব্রশব্দ ও অগ্নি স্ফুলিঙ্গে ডেট্রয়েট মহানগরী এক
বর্নিল আলোকসজ্জায় পরিনত হয়। অজস্র ফানুষ তারার প্রদীপ হয়ে আকাশে উড়তে থাকে।
প্রতিটি বাসার সামনে বারুদে আগুন দেওয়া হচ্ছে, আর তা আকাশে গিয়ে
বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে ফুলঝুরি হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। ঐদিন এভাবেই আমেরিকানরা
তাদের স্বাধীনতাকে স্মরন করতে দেখি।
এই স্বাধীনতা দিবসের রাতে নয়টায় আমরা
পাঁচ তারকা ম্যারিওট হোটেলের গ্রাউন্ড লেবেলে ঈদমেলায় যাই। প্রচুর কাপড়ের দোকান, ক্রেতা বিক্রেতা
প্রায় সবাই দক্ষিন এশিয়ার লোক। খুবসম্ভব তারা বাংলাদেশী, ভারতীয়, পাকিস্থানী ও
আরবী। এই ঈদমেলার প্রধান আকর্ষন মেহদি উৎসব। দশ ডলার খরচ করে মেয়েরা হাতে মেহদীর
নানা ডিজাইনের আলপনা আঁকছেন। এখানে কেবল আনন্দের বন্যা বইছে।
আলম ভাই ও নিয়াজ ভাইয়ের দুইগাড়ি লোড হয়ে
মেরিওট হোটেলে যাবার সময়ও আকাশে সশব্দে আতশবাজির তীব্র আলো-ফুলের মালা আকাশে ছড়িয়ে
পড়ছিল। ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সরকারী বিধিনিষেধ না থাকায় স্বাধীনতা দিবসের রাতে
আমেরিকাবাসী আতশবাজি পুড়িয়ে কোটি কোটি ডলার হাওয়া করে দেয়।(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন