শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রে সপরিবারে প্রথম যাত্রা- নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, রালী, কলম্বিয়া, আটলান্টা সফর পর্ব- উনিশ

     চিত্রঃ কলম্বিয়া সাউথ ক্যারোলিনার পার্কে আমি ও পুত্র জেফার

যুক্তরাষ্ট্রে সপরিবারে প্রথম যাত্রা- নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, রালী, কলম্বিয়া, আটলান্টা সফর  পর্ব- উনিশ

আমেরিকানরা যৌবন রঙ্গে রসে কাটালেও বার্ধক্যে একাকিত্বের শিকার হন। ব্যস্ত ছেলে মেয়েরা জীবন জীবিকার টানে বিশাল আমেরিকার দুরদূরান্তে পাড়ি জমায়। যৌবনের উম্মাদনায় বাপমাকে ভূলে যায়। তারা খুব একটা পিতামাতার কাছে আসেনা। তাই এখানে বুড়োদের দেখাশুনা করার দায়িত্ব সরকারের। অসুস্থ হলে সন্থানদের দায়িত্ব বড়জুর হাসপাতালে ভর্তি করে আসা। সরকারী নার্সরা দেখাশুনা করে, সরকারি চিকিৎসকরা চিকিৎসা দেন। চিকিৎসা বিল ইনস্যুরেন্স কোম্পানী অথবা সরকার বহন করে।

বুড়োরা বয়স বাষট্টির পর বার্ধক্য ভাতা পান। চিকিৎসা ফ্রি, সরকারী বাসায় অল্প কিংবা ফ্রি ভাড়ায় থাকার সুযোগ পান। অক্ষম মানুষ এদেশে খুব বেশী রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পান। প্রতিটি পার্কিং এলাকায় ডিজেবলদের গাড়ি রাখায় কোঠা আছে। তাদের পার্কিং এলাকা খালি থাকলেও কেউ গাড়ি রাখেনা। এখানে গাড়ি রাখলেই ৫০ ডলার জরিমানার টিকেট আসে। অক্ষম বা পঙ্গু মানুষের থাকা খাওয়া চিকিৎসা সবই সরকার বহন করে। অক্ষম মানুষের দেখাশুনা করে পরিবারের সদস্যরা বেতনও পেয়ে থাকেন। আমেরিকায় অক্ষম লোকদেরে সম্মানের চোখে দেখা হয়। আমাদের দেশের মত তাদেরকে নিয়ে কেউ হাসি মশকরা করেনা।

আমেরিকানরা মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী। তাদের বিশ্বাসের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় কোন বাঁধা বিপত্তি নেই। আমেরিকায় নারী ও পুরুষকে আলাদা করা যাবেনা। এখানে নারী ও পুরুষ একই কোল, একই প্রজাতি। সর্বত্র উভয়ের সমান বিচরন। আমাদের দেশে নারীদের উপর পুরুষ জাতির একটা অদৃশ্য ও অলিখিত কতৃত্ব থাকে কিন্তু আমেরিকা নারীরা এতই স্বাধীন যে তাদের উপর পুরুষদের কোন দৃশ্যমান বা অদৃশ্য কতৃত্ব নেই। দুইজনের মধ্যে সমস্যা হলে যে যার পথে চলে যাবে, বাচ্চারা বাবা কিংবা মা যেখানে চাইবে সেখানে থাকবে। বাবা-মা দায়িত্ব না নিলে এসব বাচ্চাদের দায়িত্ব সরকার গ্রহন করে।

আমেরিকা এমন একটি দেশ যেখানে নারী কিংবা পুরুষ, জীবন ও জীবিকার জন্য কেউই কারো উপর নির্ভরশীল নয়। সবাই রোজগার করে, কেউ কারো খায়না, পরেনা, তাই কেউ কারো ধার ধারেনা। কোন চাপে নয়, কেবলমাত্র পারস্পারিক ভালবাসা ও সম্মতির মধ্যমেই এখানে দাম্পত্য জীবন টিকে রয়। এখানে অনেক নরনারী আছেন যারা পোষাক বদলের মত সঙ্গী পরিবর্তন করে থাকে।

আমেরিকার সমাজব্যবস্থা গনতান্ত্রিক। এখানে পরমতকে সম্মান করা হয়। তাই তাদের রাজনীতিতে আমাদের মত কোন্দল ও স্বেচ্ছাচার নেই। গনতন্ত্র ও আইনের মাধ্যমে তাদের রাজনীতি চলে। তাই তাদের রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র নেই, মারামারি নেই, নেই পেশীশক্তির ব্যবহার। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কখনও সামরিক শাসন কিংবা একনায়কতন্ত্রের উদ্ভব হয়নি, হবার সম্ভাবনাও তেমনটি নেই। শত শত বছরের সাংবিধানিক নিয়মের বাইরে এখানে ক্ষমতার জবরদখলের কোন রাস্থা নেই। (চলবে}

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন