শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রে সপরিবারে প্রথম যাত্রা- নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, রালী, কলম্বিয়া, আটলান্টা সফর পর্ব- ছয়

 


যুক্তরাষ্ট্রে সপরিবারে প্রথম যাত্রা- নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, রালী, কলম্বিয়া, আটলান্টা সফর
  পর্ব- ছয়

সড়কের দুপাশে পাতাঝরা বৃক্ষের বন শীতকালে সব পত্র ঝরে পরে ও শাখা-প্রশাখা নিয়ে বৃক্ষরাজি মৃতবৎ দাঁড়িয়ে থাকে আমাদের সৌভাগ্য শীতের আগে শরতকালে আমেরিকা এসেছি শীত হানা দেবার আগে বৃক্ষপাতা প্রথমে হলুদ ও পরে লালে লাল হয়ে যায় মাইলের পর মাইল সড়কের দুইপাশ রক্তিম ডালিমের রঙ ধারন করে আমেরিকানরা তখন অরন্যের এই সৌন্দর্য্য অবগাহন করতে গাড়ি চালিয়ে মাইলের পর মাইল ঘুরে বেড়ান

নিউইয়র্ক ওয়াশিংটন মহাসড়কে একধরনের গাড়ি দেখি এই গাড়ি বাসার মত সুসজ্জিত এই গাড়িতে কিচেন, ডাইনিং, ওয়াসরুম, বাথরুম, স্লিপিং বেড সব রয়েছে পরিবার পরিজন ও কুকুর নিয়ে আমেরিকানরা এধরনের গাড়ি চড়ে দূরদূরান্তে ঘুরে বেড়ান গাড়িটি একই সাথে বাহন ও বাসস্থানের অভাব পুরন করে এই গাড়ি নিয়ে বের হলে হোটেলবাসের কোন দরকার নেই নিরাপদ জায়গায় থামিয়ে রাত পার করে দিলেই হল আমেরিকার মত দৈত্যাকার মহাদেশে ঘুরে বেড়াতে গাড়িটি খুবই কার্যকর হ্যাঁ, গাড়িটির নাম ক্যারাভান

আমেরিকার সড়কের দুপাশে অদ্ভুদ নিরবতা মানুষের ছায়া দেখা ভার বাংলাদেশের মত যেখানে সেখানে লোকালয় নেই পথে বাল্টিমোরে ৫/৭ মিনিট বাস থামে সামান্য বিস্কুট ও কলা খেয়ে আবার বাসে উঠি ওয়াশিংটন ডিসি আসার আগেই সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসে নিউইয়র্ক হতে বিকেল ২টায় যাত্রা করে নির্ধারিত সময়ের ৫মিনিট আগে ৭টা ৫৫মিনিটে মেঘাবাস ওয়াশিংটন ইউনিয়ন স্টেশন টার্মিনালে এসে থামে এই ওয়াশিংটন ইউনিয়ন স্টেশন টার্মিনাল বহুতল ভবন উপরে দ্বিতল বাস টার্মিনাল এবং ভূতলে কয়েকতলা ট্রেন স্টেশন এক্সেলেটরে দুইবার নিচে নেমে এক্সিট দিয়ে বের হয়ে একটি সুসজ্জিত মাটের দেখা পাই গেটের সামনে তিনটি মার্কিন পতাকা বাতাসে উড়ছে প্রতিটি পতাকা এত বড় যে তা দৈর্ঘ্যে ৫০ হাতের কম হবেনা মাটের চারপাশে রাস্থা, এই মাটে এসে মেঝমামা ও মামিকে সামনে পেয়ে যাই মামা গাড়ি চালিয়ে আমাদেরকে  তাদের ভার্জিনিয়ার বাসায় নিয়ে যান গাড়িতে বসে মামা আমাদেরকে কিশমিশ, কাজুবাদাম ও শুকনো ফল খেতে দেন বাসার দূরত্ব ২৫ মাইল বড় বড় সড়ক দিয়ে এসে গাড়ি একটি পরিপাঠি সুন্দর আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করে সড়কের একপাশে বিখ্যাত Adam’s Mosque এবং অন্যপাশে এই আবাসিক এলাকা এই আবাসিক এলাকার ডিজাইন এমন যে, তিনতলা বিশিষ্ট ১৫/১৬ টি ভবন প্রচুর খালি জায়গা রেখে রেখে একটি সুন্দর পার্কের মধ্যে নির্মান করা হয়েছে এই আবাসিকে যতজন লোক থাকেন ততটি গাড়ি পার্কিং স্পেশ চিহ্নিত আছে তাছাড়াও ভিজিটার গেস্টের গাড়ি রাখার স্থান নিদৃষ্ট করা আছে

আমেরিকার একটি অভিজাত আবাসিক এলাকা কত যে সুন্দর হতে পারে তা না দেখে বুঝার উপায় নেই এই আবাসিক এলাকার ভিতর আছে সুন্দর সুন্দর বাগান, যেখানে ফুটে আছে কলাফুল, কাশফুল, ডালিয়া, গাঁদা ছাড়াও নাম নাজানা অনেক জাতের ফুল আছে শিশুপার্ক, লন টেনিস, বাস্কেট বল, সকার বল ইত্যাদি খেলার মাট আর আছে সুইমিংপুল ও ব্যায়ামাগার ব্যায়ামাগারে আট/দশ ধরনের মজাদার ব্যায়াম মেশিন সবুজ ঘাসের লন, পাশে টিলা ও বন এধরনের একটি আবাসিক এলাকায় বসবাস করাটাই সৌভাগ্যের বিষয় মেঝমামার বাসা একটি ভবনের ২য় তলায় কাটের সিড়ি বেয়ে সেই বাসায় যাই বাসার সিড়িঘর ও মেঝে সব কাটের তৈরী অত্যাধুনিক নির্মান সামগ্রীতে তৈরী এই বাসার প্রতিটি কক্ষে উচ্চ প্রযুক্তির সমন্নয় ঘটেছে বাসাটি দামী পর্দা ও উন্নত কার্পেটে মুড়ানো দামি সোফা ও আসবাবে সুসজ্জিত বাসাটি আমাদের শ্রীমঙ্গলের হোটেল গ্রেন্ড সুলতানের কক্ষ ও লবির মত হবে তখন ওয়াশিংটনের আবহাওয়া ছিল আমাদের দেশের শেষ হেমন্তের মত মধুময়

বাংলাদেশে বেড়াতে এসে আমাদের বাসা বাড়িতে থাকতে মামির কেন যে অসুবিধা হত তা বুঝতে পারলাম, যদিও মামি তা কখনো প্রকাশ হতে দিতেন না বাথটবে কুসুম গরম পানিতে গোসল করে নানাপদের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি আমার তিন মামা ও দুই খালা সবাই জীবিত, কেবল আমার মা নেই ২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি আল্লাহ পাকের সাহ্নিধ্যে চলে যান বুঝতে পারি মাতৃহারা ভাগনাকে পেয়ে মামা ও মামি আনন্দে আত্মহারা

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সাল ঘুম হতে জেগে নামাজ পড়ি বাসার বাহিরের পার্কে হাঁটি বাসায় এসে খাবার টেবিলে নানা আমেরিকান ফল সাজানো পাই গাড় গোলাপী ড্রাগন ফলের সাদা টুকরো কালিজিরায় ভরা হালকা মিস্টি ফিরনীর মত এই ফলে আছে কালিজিরের স্বাদ সেদিন ড্রাগন ফল আমি প্রথম খাই ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলি শোকর আলহামদুলিল্লাহ কিউই (Kiwy) নামক আরেকটি বিদেশী ফল প্রথম খাই ফলটি গোলাকার লম্বাটে ক্ষীরার মত বর্ন ও স্বাদে যেন আমাদের কামরাঙা তবে কামরাঙ্গার চেয়ে অনেক সুস্বাধু

আমেরিকার ব্যবসা এখন বড় বড় মার্কেটিং কোম্পানীদের দখলে এসব কোম্পানীগুলো বড় বড় সপিংমল তৈরী করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করে নিউইয়র্কে বড় বড় মার্কেটিং কোম্পানীদের ব্যবসা করার অনুমতি নেই। তাই এই মহানগরে ছোট ও মধ্যম ব্যবসা এখনো টিকে আছে। আমেরিকার অন্য স্টেটে ব্যবসা বহুজাতিক মার্কিন কোম্পানীগুলো দখল করে নিয়েছে। আমরা ওয়াশিংটন ডিসিতে ওয়ালমার্টের (Walmart) মল পরিদর্শন করি। একটি মলেই আমাদের পুরো বন্দর বাজার কিংবা আম্বরখানা ঢুকে যাবে। লাইনে লাইনে পন্য সাজানো। মলের বোর্ডে লিখা আছে কোথায় গার্মেন্টস, কোথায় ঔষধ, কোথায় ট্র্যলেটিজ, কোথায় ফুড-ব্যাভারেজ। একটি মলে মানুষের ব্যবহার্য্য সধরনের পন্য রয়েছে। এমন কি রয়েছে ফুলের টব, সারযুক্ত মাটি, হ্যালোইন ও ঘর সাজানোর  সামগ্রী।

সামস ক্লাব (Sams Club) আরেক মার্কেটিং কোম্পানী, যেখানে পন্য কিনতে হলে তাদের সদস্য হতে হয়। বাৎসরিক সদস্য ফি ১৫০ ডলার। এখানে পন্য অনেক সস্তা কিন্তু বেশি পন্য কিনতে হয়। মামাতো ভাই মুর্শেদ ওদের সদস্য। মুর্শেদের কার্ড ব্যবহার করে তার অপর দুই ভাই ও মামা বেশ সস্তায় সামস ক্লাবে বাজার করেন। সামসের মল আমাদের জিন্দাবাজারের চেয়ে বড় হবে। এই মলে পন্যের প্রকার, ধরন ও পরিমান জিন্দাবাজারকে পেরিয়ে যাবে। ঐদিন বিকেলে হোমডিপো (Home Depo) মলে আমরা মাল কিনি মাছ মাংস, ফল মূল, শাক সবজি সহ এত পন্যের সমাবেশ দেখে হতবাক হই

রাতে আমরা বাসায় খুশগল্প করে কাটাই মামা একজন সফিক মামুর গল্প শুনান জুড়ির সফিক মামা ভাগ্যগুনে হঠাৎ নিউইয়র্কে পাড়ি জমান জেএফকে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পুলসিরাতের পুল পার হয়েই খুশিতে আটকানা হয়ে মামাকে ফোন করেন, আমি নিজের যোগ্যতা বলে এদ্দুর এসে গেছি, এখন তুমি আমারে সামলাও মামা সামাল দিতে তাকে নিয়ে আসেন এস্টোরিয়ার বাসায় পরদিন ঘুম থেকে জেগে সফিক মামু বললেন, এই বরফের দেশে তোমরা এত ঠান্ডা পানিতে কেমনে গোসল কর? গতরাতে এই ঠান্ডা পানিতে গোসল করে আমার জ্বর হয়ে গেছে মেঝমামা জবাব দেন, সফিক রে, তর কপালটা বড় ভাল, শরীরটা যে পুড়াস নি ভাগ্য ভাল, তর সামান্য জ্বর হয়েছে, উলটো টা ঘটলে তুই এখন হাসপাতালে থাকতি (চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন