সিলেট
শাখার বৈদেশিক বিনিময় বিভাগের কিছু স্মৃতিঃ
আমি বেশ
কয়েক মাস পূবালী ব্যাংকের সিলেট শাখার বৈদেশিক বিনিমিয় বিভাগে কাজ করি। এখানে
কর্মরত গনিতে মাস্টার্স জানুঅফিসার সৈয়দ এহসানুর রেজা ভাই প্রমোশন না পেয়ে ঢাকা
ব্যাংকে চলে যান। আমি দুতলায় তার টেবিলে গিয়ে বসি। এখানে কুলাঊড়ার খলিল ভাইয়ের
সাথে কাজ করে বেশ আনন্দই পাই। মুখে বসন্তের দাগ খলিল ভাই ভীষন মজার মানুষ। তিনি
দুহাতে টাকা উড়াতেন। প্রায়ই দুপুরে বলতেন কুরেশী আস, আমরা দুইভাই মিলে একসাথে খেয়ে
আসি। বিল পরিশোধ তিনিই করতেন। হোটেলের কর্মিদের তিনি প্রচুর ট্রিপস দিতেন। তিনি
রিকশা কিংবা বেবীট্রেক্সিতে দরদাম না করেই চড়তেন এবং হাতের আন্তাজে অতিরিক্ত ভাড়া
দিতেন। বলতেন এরা গরীব মানুষ, আমরা
টাকা না দিলে এরা চলবে কেমন করে। খলিল ভাই দুহাতে টাকা উড়ায়ে রিক্ত হয়ে যেতেন এবং
সব সময় দেনায় আকন্ঠ নিমজ্জিত থাকতেন। তবে ধারকর্জ করে একসময় ছোট ভাইদেরে লন্ডনে
পাঠিয়ে দেন। সেই সময় খলিল ভাইয়ের একমাত্র মেয়েটি আয়শা ক্লিনিকে আমার পত্নী ডাঃ
নুরজাহান বেগম চৌধুরীর হাতে জন্মগ্রহন করে। অনেক অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে এই
চাঁদকন্যা পেয়ে খলিল ভাইয়ের যে কি আনন্দ, তা ভাষায় বর্ননাতীত?
এখানে তখন
টাইপিস্টের কাজ করতেন আনিল বাবু। অনিল বাবু একজন রাগহীন চিকন লোক। তিনকন্যার বাপ
অনিল বাবু কেবল হাসতেন আর কাজ করতেন। ফরেইন এক্সচেঞ্জে আমার সাধারণত তিনটি কাজ
করতে হত- এল সি ইস্যুকরা, ফরেইন ড্রাফট পেমেন্ট করা এবং এল সি লজমেন্ট করে বিদেশে
আকু ডলার পরিশোধ করা।
আমাদের বড়
কাস্টমার রশিদ আলী ভাই প্রচুর এলসি করতেন। তিনি লেখাপড়া জানতেন না তবে কোনমতে এলসি
ফরমের স্থানে স্থানে তার টিপসহি বসিয়ে দিতেন। একবার রশিদ আলী ভাই হজ্জ করে আসেন।
এসেই দস্তখতে ‘হাজি’ শব্দটি যোগ করে দেন। দস্তখতের এই ‘হাজি’ বেশ জটিলতা তৈরি করল।
সবাই বুঝালেন কিন্তু কোন আপোষ নেই, রশিদ আলী ভাই ‘হাজি’ লিখবেন ই লিখবেন। এই ‘হাজি’
শব্দটি সর্বত্র যোগ করতে গিয়ে ব্যাংককে অযথা অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হল। এখানে
মিষ্টি মধুর হাসি হেসে কয়লার এল সি করতে আসতেন মেসার্স মেডিমেঘ
এন্টারপ্রাইজের ডাঃ সাইদুর রহমান ভাই। তিনি আমার পত্নীর মেডিকেল সহপাঠিনী ডাঃ
আফরুজা বেগম শিলার স্বামী। কামাল ভাই ও খসরু ভাই ব্যাংকের টাকায় এলসি করতেন কিন্তু
এলসি লজমেন্টের আগেই মালবিক্রি করে সমুদয় টাকা জমা করে দিতেন। অতিচালু খসরু ভাইয়ের
কাছ থেকে ব্যাংক তাই কখনও সুদ আদায় করার কোন সুযোগই পেতনা।
এবার পি বি
টি আই এ আমি ১৭ দিনব্যাপী ‘বৈদেশিক বিনিমিয় লেনদেন ও আন্তর্জাতিক বানিজ্য’ বিষয়ে
একটি প্রশিক্ষনের সুযোগ লাভ করি। ১৬ জুনে ১৯৯৬ সালে পি বি
টি আই তে শুরু হওয়া প্রশিক্ষণটি ৪ জুলাই ১৯৯৬ তে শেষ হয়। মহামান্য এম ডি হেলাল
আহমদ চৌধুরী স্যারসহ বাংলাদেশ ইন্সতিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজম্যেন্টের সুযোগ্য
শিক্ষকরা সেই প্রশিক্ষণ ক্লাসে অংশগ্রহণ করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন