শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আমার বড় কাস্টমার চেয়ারম্যান হাফিজ মজুমদার এম পিঃ

 

আমার বড় কাস্টমার চেয়ারম্যান হাফিজ মজুমদার এম পিঃ

একটা মজার ব্যাপার হল এই শাখায় আমার সবচেয়ে বড় কাস্টমার ছিলেন স্বয়ং এই ব্যাংকের সম্মানিত চেয়ারম্যান, জকিগঞ্জের এমপি হাফিজ আহমদ মজুমদারআমি তার মালিকানাধীন স্কলার্সহোম স্কুলের হিসাব পরিচালনা করতাম। তিনি আমাকে খুবস্নেহ করতেন। ক্লিনসেভ শ্বেতকায়া বুদ্ধিমান এই ভদ্রলোক যে কাউকে আকর্ষ করার অদ্ভুদ ক্ষমতা রাখতেন। তার বেগম সাহেবা হাফসা মজুমদার, আমার বড় দোলাভাই মুফতি মোঃ খালেদের খালাতো বোন এবং মধ্যম দোলাভাই আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরীর চাচাত বোন। কিন্তু আমি তাকে কখনও এই আত্মীয়তার পরিচয় দেই নি, কিংবা ব্যাংকে কোন সুযোগ সুবিধা আদায়ে তার স্মরণাপন্ন হই নি। আমি তার কাছে কেবল ব্যাংকের প্রয়োজনেই আসা যাওয়া করতাম। 

তার স্কলার্সহোম স্কুলের লাখ লাখ টাকার এফডিয়ার আমার শাখায় ছিল। এক সময় উচ্চসুদের এফডিয়ারের জন্য আমার শাখার লাভ কমতে থাকে। ব্যাংকের হাতে তখন প্রচুর অলস টাকা পড়ে আছে। এমতাবস্থায় উচ্চসুদের আমানত আহরণে ব্যাংকের তেমন কোন উৎসাহ নেইআমি উচ্চসুদের আমানত কমিয়ে আনার সিন্ধান্ত নেই। ব্যাংক এসিয়ার অঞ্চলপ্রধান আমার সহপাঠি নিয়াজ আহমদ চৌধুরীকে দিয়ে তাদের এমডির সাথে আলোচনা করিয়ে ১৪.৫০% সুদে আমি সেখানে স্কলার্সহোম স্কুলের দুইতিন কোটি টাকার এফডিয়ার করিয়ে দেই। এব্যাপারে লোকমান উদ্দিন চৌধুরীর সাথে আলাপ করে আমি ভয়ে ভয়ে হাফিজ এ মজুমদারের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি বিষ্মিত হয়ে বললেন, আমরা ঋ দিয়ে এত ঝুঁকি নিয়ে মাত্র ১৪% সুদ নেই, আর এইসব ব্যাংক ১৪.৫০% সুদ প্রদান করে আমানত সংগ্রহ করে কেমনে? পূবালী ব্যাংকে তখন স্থায়ী আমানতের সুদ ৮% এর বেশি ছিল না। আমার ব্যাংকের প্রিয় চেয়ারম্যান হাফিজ মজুমদার তাই আমার উপর খুশই হন।

হাফিজ মজুমদারের অবর্তমানে স্কলার্সহোমের লেনদেন দেখাশুনা করতেন তার সহযোগী লোকমান উদ্দিন চৌধুরীহাফিজ মজুমদারের দস্তখতবিহীন অলিখিত চেক নিয়ে আসতেন লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, স্কুলের প্রিন্সিপাল ব্রিগেডিয়ার জুবায়ের সিদ্দিকি চাহিদামত টাকার পরিমান চেকে লিখে দিতেন। আমি চেয়ারম্যান হাফিজ মজুমদারের নাম্বারে ফোন করে তার অনুমতি নিয়ে চেকের টাকা লোকমান সাহেবের হাতে তুলে দিতাম। তিনি সিলেটে আসলে স্কলারর্সহোমে গিয়ে চেকের উপর তার দস্তখত নিয়ে আসতাম। আমার ব্যবস্থাপনার চার বছরে মাত্র একদিন তিনি শাখায় এসেছিলেন, কিন্তু আমি খুব দুঃখ পাই সেদিন আমি অফিসের কাজে বাহিরে ছিলাম।

প্রতি সাপ্তাহেই কয়েকবার জনাব মজুমদারের সাথে আমাকে টেলিফোনে আলাপ করতে হত। একদিন আমার এক সহকর্ম মোবাইলে একটি দেশাত্মকবোদক গান, ‘এই পদ্মা, এই মেঘনা, এই যমুনা সুরমা নদীতটে, আমার রাখাল মন গান গেয়ে যায়। এই আমার দেশ, এই আমার প্রেম।ঢুকিয়ে রাখে। মোবাইল করেই মনে হল গান বেজে উঠবে যদি তিনি কিছু মনে করে বসেন। আমি ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে সালাম দিতেই তিনি বললেন, কুরেশী তুমি বেশ চমৎকার একটি  গান ঢুকিয়েছ, শুনে বেশ ভালই লাগল।

একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করতাম, তিনি তার জন্মভূমি জকিগঞ্জের মানুষের প্রতি ছিলেন খুব নিবেদিত প্রা। হয়ত এমন হতে পারে জকিগঞ্জের মানুষ বারবার তাকে ভোট দিয়ে তাদের এমপি নির্বাচন করেছে। এখানে তিনি অনেক অনেক স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশের প্রথম সূর্যোদয়ের এই উপজেলায় তিনি ছিলেন সদা প্রজ্জলিত এক সূর্যের  উপমা স্কলার্সহোমে ও পূবালী ব্যাংকে তার সৌজন্যে জকিগঞ্জিদের বেশ ছড়াছড়ি ঘটে।

জকিগঞ্জের লোক নজরুল ইসলাম আমার কাস্টমার। তার চলতি হিসাবে পার ব্যবসার প্রচুর টাকা লেনদেন হয়। একদিন সে আমার কাছে সি সি লিমিট ঋ চায়। বন্ধক দেবার মত কোন জায়গা সিলেটে না থাকায় সে জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জে তাদের কিছু জমি বন্ধক দিয়ে ঈদগাহ হতে নিতে চায়। এত দূরের জায়গা বন্ধক রেখে সিসি লিমিট প্রদান বেশ জটিল ব্যাপার। পরবর্তীকালে প্রতিবছর ঋণটি পুনঃ নবায়নের জন্য ঈদগাহ শাখার ব্যবস্থাপকগকে সিকিউরিটি ভূমি পরিদর্শনে সেখানে গমন করাও যন্ত্রণাদায়ক হবে। আমি তাদেরকে আমাদের কালিগঞ্জ শাখা হতে ঋ নিতে অনুরোধ করলাম। একদিন মজুমদার সাহেবের কল বেজে উঠল, ওহে কুরেশী, কালিগঞ্জের নজরুল ইসলাম তোমার কাছে কি লোন চাইতে গেছে? আমি জবাব দিলাম হ্যা এসেছে তারপর বলি তিনি আমার পুরানো কাস্টমার, তাকে ঋ দিতে আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু বন্ধক রাখার মত কোন জমি তার সিলেটে নেই। কালিগঞ্জে  বন্ধক দেওয়ার মত জমিজামা তার রয়েছে, তিনি চাইলে আমাদের কালিগঞ্জ শাখা হতে সহজে ঋন গ্রহ করতে পারেএবার জনাব মজুমদার বললেন, একটা কথা শুনো কুরেশী সে সিলেটে ব্যবসা করে, তার সব লেনদেন এই সিলেটে, জানি তোমার একটু অসুবিধা হবে, তারপরও ওকে একটু সাহায্য কর। এই মহান মানুষের ফোন, তিনি আমাকে আদেশ দিতে পারেন, কিন্তু আদেশ নয়, করলেন যেন অনুরোধ। আর কি বসে থাকা যায়। আমি পরবর্তী শুক্রবারে বন্ধকী জমি দেখতে ছুটে গেলাম কালিগঞ্জ। মাসদিনের মধ্যেই একটি সিসি লিমিট ঋ আমাদের প্রধান কার্যালয় হতে তাকে বরাদ্ধ করে দিলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন