২০০৯ সালে সংঘটিত কিছু স্মরণীয় ঘটনাঃ
ফখর উদ্দিন
সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ
নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে এবং ক্ষমতা হারানোর সুদীর্ঘ আট বৎসর পর ৮জানুয়ারি
২০০৯ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার সরকার গঠন করেন।
তার ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন যেতে না যেতেই ফেব্রুয়ারি
২০০৯ বাংলাদেশের ইতিহাসের এক মর্মান্তিক রক্তক্ষয়ী ঘটনার জন্ম হয়। পিলখানার বিজিবি
হেড কোয়ার্টারে এক সৈনিক বিদ্রোহে বিএসএফ প্রধান মেজর জেনারেল সাকিল আহমদ সহ ৭৪ জন
বিভিন্ন পদবীর সেনাঅফিসার বিদ্রোহী সেনাদের হতে নিষ্টুরভাবে শাহাদাত বরণ
করেন। সারাটা বাংলাদেশ চোখের জলে সিক্ত হয়ে এই নিহত সেনাঅফিসারদের শেষবিদায় জানায়। মানুষ
গেয়ে উঠে ‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার/ বুকের ব্যথাগুলো
বুকে চাপা দিয়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।/ কত ব্যথা বুকে চাপালেই তাঁকে বলি আমি
ধৈর্য/ নির্মমতা কতটুকু হলে জাতি হবে নির্লজ্জ।‘ পিলখানায় সংঘটিত এই
ঘটনা আমি পাশেই ধানমন্ডি বাসায় বসে প্রত্যক্ষ
করি এবং আমার মনে যথেষ্ট যন্ত্রণার দাগ কাটে।
বিয়ের পর
আমার ছোটভাই নিশাত কিছুদিন আমার বাসায় ছিল, তারপর উপশহরে একটি বাসা ভাড়া করে চলে
যায়। শাহজালাল উপশহরের ডি ব্লকের সেই ভাড়া বাসায় অবস্থানকালে ২০০৯ সালের ৪ঠা আগস্ট
রাত ১১ ঘটিকায় সোফানীঘাটের মা ও শিশু হাসপাতালে এক সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে
আমার ভাতিজি জাইমা কুরেশীর জন্ম হয়। জন্মের
পর হতেই এই নবজাতকের খাবারে ছিল তীব্র অনীহা এবং সে প্রায়ই অসুস্থ থাকত। এই
নবজাতকের মা বাবা দুইজন চাকুরীজীবি হওয়ায় কাজের মহিলা জরীবিবি তাকে দিনের বেলা
দেখাশুনা করত। আমার মায়ের তখন জীবনের পড়ন্তবেলা যাচ্ছিল। এই নাতনীর প্রতি তার একটা
তীব্র আকর্ষণ ছিল। আমার বাসায় তিনি সারাক্ষণ
কেবল জাইমা জাইমা করে কাটাতেন।
আমাদের
ব্যাংক ভবনের মালিক জাহাঙ্গীর আহমদ। তার বাসা পাশের হাজারিভাগ মহল্লায়। ব্যাংকের নিচে
ছিল তার গ্রোসারি ব্যবসা। হাসিখুশি জাহাঙ্গীর ভাই
ছিলেন আমাদের সবার প্রিয়মুখ। মিষ্টভাষী জাহাঙ্গীর ভাই তার মোটর সাইকেলের পিছনে
আমাকে বসিয়ে সিলেট শহরে ঘুরে বেড়াতেন। একদিন হঠাৎ তার গলে ক্যান্সার হয়। ভারত হতে
চিকিৎসা নিয়ে এসে তিনি কিছুদিন ব্যাংকে আসেন। এক সময় তিনি শয্যাশায়ী হয়ে মারা যান।
সামনের শাহী ইদগাহের এক কোনে একদিন ভারাক্রান্ত
হৃদয়ে তার নামাজে জানাজায় আমরা শরিক হই।
২০০৯ সালে
পূবালী ব্যাংকের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী
পালন উপলক্ষ্যে প্রতিটি শাখাকে দশ হাজার টাকা বরাদ্ধ করা হয়। আমি বেশ ঝাকজমকের
সাথে ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী
অনুষ্টান পালনের সিন্ধান্ত গ্রহন করি। পূবালী ব্যাংকের ব্রান্ডিং কালার হলুদ ও
সবুজ রঙ্গের বেলুন দিয়ে গেট নির্মান করি এবং শাখাটিকে বেলুন ও সুভেনীর দিয়ে মনের
মত করে সাজিয়ে নেই। বনফুল হতে ব্যাংকের জন্মবার্ষিকি উপলক্ষ্যে একটি বড় কেক নিয়ে
আসি। আমাদের ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন ভাদেশ্বর পশ্চিমভাগ গ্রামের মনির আহমদ। তার
বাসা ব্যাংকের পাশে শাহীঈদগায়। আমি স্যারকে এই উদ্বোধনী অনুষ্টানে প্রদান অতিথি হবার
আমন্ত্রন জানাই। তিনি সপরিবারে এসে কেক কাটায় নেতৃত্ব দেন। পরিচালক মনির আহমদ
নিউইয়র্ক প্রবাসী আমার মামা ফজলুর রহমান চৌধুরীর বন্ধু। তিনি একজন কমবয়সী সুন্দরী
পত্নী এবং দুইজন পূত্র কন্যা নিয়ে বাংলাদেশে বসবাস করতেন। মনির আহমদ স্যার সেদিন তার পত্নীর নামে আমাদের শাখায় ২০ লক্ষ টাকার
একটি এফডিয়ার খোলে সৌজন্য প্রকাশ করেন। আমি তার কাছ থেকে পরে আর অনেক ডিপোজিট লাভ
করি। এইদিন অনেক শাখায় এই অনুষ্ঠান একসাথে
অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে আঞ্চলিক
প্রধান ফরিদ উদ্দিন স্যার এই সভায় আসতে পারেননি। সেদিন ইদগাহের
সব গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ এবং কাষ্টমারগণ
এইসভায় এসে অনুষ্ঠানটিকে সার্থক করে তুলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন