সিলেট শিক্ষাবোর্ডের শ্রেষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্টান ব্লুবার্ড
স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিংবডিতে আমার দুই বছর দুই মাস
১৯৬২ সালে প্রতিষ্টিত ব্লুবার্ড
স্কুল এন্ড কলেজ সিলেট শিক্ষা বোর্ডের শ্রেষ্ট স্কুল। এই প্রতিষ্টানের মুল কাঠামো
মীরেরময়দান সিলেট বেতারের বিপরীতে অবস্থিত। এখানে ষষ্ট শ্রেণী হতে দ্বাদশ শ্রেনির
ক্লাশ হয়। অফিস, পাঠাগার, শিক্ষক মিলনায়তন, অডিটোরিয়াম, পুকুর, প্রাঙ্গণ সব এখানে
রয়েছে। আগে ও পিছে দুটি গেট দিয়ে সবাই এখানে আসা যাওয়া করেন। স্কুলের অন্য অংশের
অবস্থান সামান্য উত্তরে সিলেট প্রেসক্লাবের সামনে সুবিদবাজারে। এখানে কেজিস্কুল
হতে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত পাঠদান হয়। এই স্কুলের প্রাঙ্গণে স্বাধীনতা ও বিজয়দিবসের
অনুষ্টানাদি কনসার্ট, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, ইত্যাদি অনুষ্টিত হয়। এটি আমার পুত্র
জেফারের চৌদ্দ বছরের কতনা মধুর স্মৃতিবিজড়িত স্কুল।
একদিন অফিসে যাচ্ছি, সিলেট
পূর্বাঞ্চলিক অফিস, তেলিহাওর। অফিসে যেতে স্বাস্থ্য রক্ষায় আমি পনের মিনিট পায়ে হেঁটে
তারপর রিকশায় চড়ি। বাসা হতে পাঁচ মিনিটের রাস্থা এগুতেই ঐতিহ্যবাহী ব্লুবার্ড
স্কুল এন্ড কলেজের সামনে এসে গেলাম। তখনই এই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক বিশেষ করে আমার
পুত্র জেফারের প্রাইভেট শিক্ষক জিল্লুর স্যার, মাহবুব স্যার এবং মারুফ স্যার
প্রমুখ আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, স্যার আপনি আমাদের প্রতিষ্টানের সদস্য হলে আমরা
খুব খুশী হব। এখানে মন্দলোকেরা ঢূকে পড়লে আমাদের খুব সমস্যা হয়। আপনাদের মত গুণীজন
আসলে প্রতিষ্টানের লাভ হবে। বললাম আমি কোন গুনীজন নই, তাছাড়া আমি একটি ব্যাংকের
সহকারী মহাব্যবস্থাপক। আমি এখানে সদস্য হলে আপনাদেরে তেমন সময় দিতে পারবনা বরং
অন্য কাউকে খোঁজে নিন।
শিক্ষকরা এবার আমাকে বললেন সময়
কেবল ছুটির দিনে দিলেই হবে। পদাধিকার বলে কমিটির স্থায়ী সভাপতি সিলেটের জেলা
প্রশাসক কেবল ছূটির দিনেই তার বাসভবনে কিংবা স্কুলের প্রিন্সিপাল কক্ষে কমিটির সভা
ডাকেন। এই সভাগুলোতে হাজির হলেই চলবে।
ব্লুবার্ড স্যাররা আমাকে বললেন
একজন চিকিৎসককে তারা প্রার্থী হতে অনুরোধ করেছিলেন
কিন্তু তিনি প্রথমে রাজি হলেও পরে সরে যান। এখন তাদের একমাত্র নিশানা আমি
ব্যাংকের এজিএম, লেখক ও কবি ইসফাক কুরেশী।
আমার অফিসের সময় হয়ে গেছে, আমি
পরে সিন্ধান্ত জানাব বলে রিকশায় চড়ে বসি।
পাচ মিনিট আগেও এই শ্রেষ্ট
স্কুলের পরিচালনা কমিটির সদস্য হব এমন কোন খেয়াল আমার মাথায় ছিলনা। আচমকা এই উপহার
আসমান হতে হঠাৎ আমার উপর বজ্রপাত নাকি স্বর্নপাত বর্ষন বুঝে উঠতে অনেকক্ষন সময়
লেগে গেল।
আমার বেগম ডাঃ নুরজাহানের কাছে
কি করব পরামর্শ চাইলে তিনি বললেন অসুবিধা কিসের? আমার পূত্র জেফার এখান হতে
এইচএসসি দেবে। এখানে সদস্য হওয়া বেশ সম্মানজনক, তারা যখন ধরেছে মনে হয় ভালই হবে।
অফিসের মোহন্ত বাবু বললেন ভালই হবে, আমাদের ছেলেপেলেরা সহজে ভর্তি হতে পারবে।
জকিগঞ্জি সিরাজ সাহেব বললেন এসব নামিদামি স্কুল কমিটিতে আপনারা যাবেননা তো যাবে
কারা। খাড়া হয়ে যান।
পরদিন কয়েক হাজার টাকা মূল্যে মনোনয়ন
ফরম এবং ভোটার তালিকা কিনি। ভোটার প্রত্যেক ছাত্রছাত্রিদের একজন করে অভিভাবক।
ছাত্রছাত্রি সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার তাই ভোটারও সমসংখ্যক। আমি কলেজ কমিটির সদস্য
পদে দাড় হলাম। মনোনয়ন পত্রে দুইজন ভোটারের সমর্থন লাগে। আমাকে সমর্থন করলেন আমার
পুত্র জেফারের সহপাঠী শাহ আলভীর আব্বা ভাদেশ্বর মহিলা কলেজের বাংলার অধ্যাপক শাহ
আশরাফ হোসেন এবং হামাদানের আম্মা। আমার পাড়া সাঘরদিঘিপারেই শাহ আলভীর সুন্দর
ডুপ্লেক্স বাসা। হামাদানের বাবা মদিনায় থাকেন। সেও শৈশব সৌদি আরবে কাটিয়েছে। তারা
পাশের সুবিধবাজারে ভাড়া বাসায় থেকে লেখাপড়া করছে।
আমার জীবনে এই প্রথম ভোটযুদ্ধে
অবতীর্ন হই। কলেজ কমিটিতে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী। আমার উদ্দেশ্য জেতা নয় নির্বাচন
কেমন তা পরখ করে দেখা, যা কোনদিন রাজনীতিতে পা রাখলে হয়ত কাজে লাগবে। আমি,
জকিগঞ্জি সিরাজ সাহেব ও মোহন্তবাবু মিলে ‘আমার জীবন ডাটা ও কেন সদস্য হতে চাই’ এমন
একটি লিফলেট লিখে ভোটারদের সমর্থন কামনা করি। লাল নীল হলুদ ও সবুজ কাগজে লিফলেটটি
ফটোস্ট্যাট করে কয়েকশত কপি পরদিন লালকারে বাসায় নিয়ে যাই।
নির্বাচন যুদ্ধ করতে হল দুইতিন
সাপ্তাহ। এই যুদ্ধ যে এত কঠিন কাজ আগে জানলে হয়ত যুদ্ধমাঠে পা রাখতাম না। এত
ভোটারের বাসায় বাসায় গিয়ে ধর্না দেয়া, লিফলেট তদের হাতে পৌছে দেয়া চাট্টিখানি কথা
নয়। আমার বেগম সাহেবা আমাকে নির্বাচনে পাশ করাতে মাথাবেধে রাস্থায় নামলেন। ছুটির
সারা দিন এবং অফিস হতে ফিরে রাত বারটা পর্যন্ত চলল ভোটারদের দ্বারে দ্বারে হাত
পেতে ঘুরা। জেফারের সহপাঠী সাদাতের আম্মা ও আমার বেগম সাহেবা ডাঃ নুরজাহান বেগম
লালকারে বসে আমাকে নিয়ে ছুটলেন সিলেট শহরের আনাচে কানাচে বাসায় বাসায়। স্কুল ছুটির
সময় আমরা গিয়ে স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে ছাত্রদের হাতে আমার লিফলেট তুলে দিতাম। আমার
কাছে দাড়াতেন আমার চিকিৎসক পত্নী ডাঃ নুরজাহান বেগম চৌধুরী এবং তার চেম্বারের
কর্মচারি অঞ্জনা দেবী। আমাকে ছাত্রদের মেছে মেছে নিয়ে যান এমাদ স্যার ও জিল্লুর
স্যার, আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন ও তাদের অভিভাবকরা যাতে গ্রাম হতে এসে আমাকে ভোট দেন
এব্যাপারে অনুপ্রানিত করেন।
প্রাইমারী স্কুল কমিটিতে
সদস্যপ্রার্থি আমার ফুফুতো ভাইয়ের ছেলে মুফতি মোহাম্মদ শামিম তার নিজের ভোট
ক্যানভাসের সময় আমার জন্যও ভোট চাইতেন। সময় টিভির সিলেট প্রতিনিধি ও সিলেট
প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবির ছিলেন হাইস্কুল সদস্য পদপ্রার্থী, তিনিও নিজে
জেতার পাশাপাশি আমাকে জেতাতে কাজ করলেন। ব্লুবার্ড স্কুল এন্ড কলেজের জিল্লুর
স্যার, মাহবুব স্যার, মারুফ স্যার, কবির স্যার, ইংলিশ শিক্ষক শফিকুল হক স্যার এবং
এমাদ হোসেন স্যার প্রমুখ আমাকে এই নির্বাচনে দাড় করান এবং তারা আপ্রান চেষ্টা করেন
আমি যেন নির্বাচনে বিজয়ী হই।
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৯
জানুয়ারি ২০১৫। নির্বাচনের তিনদিন আগে ২৬ জানুয়ারি আমাকে শহর হতে বিদায় করা হয় শহরের
বাসা হতে দশ মাইল দূরে জন্মগ্রামের চৌধুরীবাজার শাখায়। সেখানকার ব্যবস্থাপক আব্দুল
জব্বার খুব ভাল ও পরোপকারী লোক। তিনি এখান থেকে অবসরে যাবেন। গিয়েই তাকে সব বলে
দুইদিনের ছুটি চাইলাম। তিনি বললেন কুরেশী সাহেব কোন অসুবিধে নেই, আপনি সব কাজ সেরে
আসেন।
সিলেট পূর্বাঞ্চলিক অফিসে বিগত
এক বছরে আমি কোনদিন ছুটি নেই নাই। একদিন নৈমিত্তিক ছুটি চাইলে অঞ্চলপ্রধান সিরাজুল
হক চৌধুরী একটা লম্বা ওয়াজ দিলেন। এই নিম-তিতা বক্তৃতা শুনে আমি আর
কোনদিন ছুটি নিতেই যাইনি, যদিও বছরে ২০ দিন নৈমিত্তিক ছূটি ভোগের অধিকার সবার
রয়েছে। আমার ধর্ম হল যেখানে আমার আর্জি একবার অকারনে ফেরত হয়, সেখানে আমি দ্বিতীয়বার
সাধারনতঃ আর হাত পাততে যাইনা। তাই আঞ্চলিক অফিসে এক বছর আমি কোন নৈমিত্তিক ছূটির জন্য
আর আবেদন করিনি বরং কষ্ট হলেও অফিসের ফাঁকে বেরিয়ে খুব জরুরি কাজগুলো সেরে নিতাম।
অঞ্চল প্রধান সিরাজুল হক চৌধুরী অফিসে
খুব অল্পই অবস্থান করতেন। তিনি সারাক্ষণ টো টো করে বাইরে ঘুরে বেড়াতেন তাই অফিসের কর্মীরা প্রয়োজন মত
বেরিয়ে ব্যক্তিগত সব কাজ সেরে নিত যা কখনও তার নজরে পড়তনা। অফিসেরও তেমন অসুবিধা
হতনা কারণ এখানে শাখার মত গ্রাহকদের আগমন নির্গমন ও হৈ চৈ
নেই, দরকার হলে বিকেলে অতিরিক্ত সময় পরিশ্রম করে তারা দিনের জমে থাকা কাজ সমাপ্ত
করে নিত।
বাংলাদেশ বেতার সিলেটের পাশের ব্লুবার্ড
স্কুলের প্রধান ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপিত হয়। ভোটের সময় যত আসন্ন হয় হার্টবিট ততই
বেড়ে যায়। যদি ফেল করি তবে বিরাট এক লজ্জা পাবো। যে সকল অভিভাবক আমাকে নিশ্চিত ভোট
দিবেন ভোটের আগের দিন আমি তাদের ভোট নম্বর বাসায় বাসায় পৌছে দেই।
ভোটের আগের দিন বিকেলে স্কুলের
সামনে প্রার্থিরা অনেকগুলো বাশ-কাপড়ের প্যান্ডেল নির্মান করেন। পিছনের ব্যানারে
প্রার্থিদের বড়বড় ছবি শোভা পায়। প্যান্ডেলে চেয়ার ও টেবিল বসে। সদস্যপ্রার্থি
যুবলিগ নেতা শাহরিয়ার সেলিম নিজের ছবি সম্বলিত একটি বিরাট গেট নির্মান করেন। নির্বাচনের
দিন খুব সকালে স্কুল গেটে গিয়ে আমার চক্ষু চড়কগাছ। একটি স্কুল কমিটির নির্বাচনে এত
মানুষের আগমন এত হৈ চৈ। বেতার সিলেটের ওয়ালঘেষে অনেকের নির্বাচনী অফিস, স্কুল
গেটের সামনের সুবিধাজনক জায়গা ইতিমধ্যে দখল হয়ে গেছে। আত্মীয় মুফতি শামিম আগেও
নির্বাচন করে সদস্য হয়েছিল। আমার কোন নির্বাচনী অফিস নেই দেখে সে বলল চাচা কোন চিন্তা
করবেন না, আমার অফিসে বসে কাজ সেরে নেন।
আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেন ভাগ্না
তানভির, ডাঃ নুরজাহানের খালাতো বোনপো সেলিম এবং আমার বন্ধু সিদ্দিকুর
রহমান নির্ঝরের কনিষ্ঠ ভ্রাতা ডালিম। তারা লোক লাগিয়ে সিলেট
বেতারের ওয়াল ঘেষে দ্রুত পর্দাঘেরা চাঁদোয়া ঢাকা একটি নির্বাচনি অফিস বানিয়ে
ফেলেন। কাছেই ডাঃ নুরজাহানের চেম্বার হতে প্লাস্টিকের বেশ কয়েকটি চেয়ার ও টেবিল
এসে গেল। ভোটার তালিকা নিয়ে ডালিম কাজে লেগে যান। লন্ডনি রোডে আমার প্রভাত হাটার
সাথি মুরব্বী এসে স্বেচ্ছায় আমার অফিসে বসে ক্যানভাসে লেগে যান।
ডালিম কিছুদিন আগে বিয়ে করে। আমরা
মুন্সিপাড়া গিয়ে তার সুন্দরী বউঁকে একনজর দেখে আসি। অতীব দুঃখের বিষয় এই
নির্বাচনের কিছুদিন পর ডালিম হার্ডএট্যাক হয়ে অল্প বয়সে পরপারে চলে যায়। বালক বয়স
হতে ছোটভ্রাতার মত স্নেহের চোখে দেখা ডালিমের লাশ তাদের গ্রামের বাড়ি রশিদপুর নিয়ে
গিয়ে আমরা দাফন করি। এই মৃত্যু আমার মনে খুব আঘাত হানে, মহান আল্লাহ আমার পরম হিতাকাঙ্ক্ষী ডালিমকে
বেহেশত নসিব করুন।
প্রত্যেক প্রার্থীর দশ পনের জন সমর্থক রাস্থায় দাঁড়িয়ে ভোটারগণকে প্রভাবিত করছেন। লিফলেট
এগিয়ে দিচ্ছেন। চারপাশে হৈ-হল্লা, এক উৎসবমুখর পরিবেশ। স্কুল সদস্য পদপ্রার্থি
আওয়ামী লিগের কেন্দ্রিয় কমিটির প্রচার সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের ভাই শামসুর
রহমানের পক্ষে ডাঃ মিফতাউল হোসেন সুইট সহ অনেক প্রভাবশালী আওয়ামী লিগ নেতাকে ভোট চাইতে
দেখলাম। আমি ধারনা ছিল তিনি নিশ্চিত পাশ করবেন, কিন্তু রাতে ভোট গননায় দেখা গেল
তিনি হেরে গেছেন। যুবলীগ নেতা শাহরিয়ার সেলিম ভোটের দিন বিশাল ডেগভর্তি আখনি পোলাও
নিয়ে আসেন।
এবার আমি স্কুলের ভোটকেন্দ্রে
গিয়ে নিজের ভোট দিলাম। নির্বাচন পরিচালনা করছেন সিলেট জেলা প্রশাসন। আমি কিছুক্ষন
কেন্দ্রে বসে পোলিং অফিসারদের সাথে আলাপ করি। ভোটকেন্দ্রে আমার কোন এজেন্ট না
থাকলেও অন্য সদস্য প্রার্থিদের এজেন্টরা বসে আছেন। জাল ভোট দিতে কেউ যাচ্ছেনা
তারপরও কেউ যাতে জাল ভোট না দেয় তারা কড়া পাহারা দিচ্ছেন। মনে হল আমার কোন এজেন্ট না
থাকলে কি হবে আমার কাজ অন্যরা সেরে দিচ্ছে। আমি নিজ পরিচয় দিয়ে কিছুক্ষণ নির্বাচনী
কর্মকর্তাদেরদের সাথে সামনে বসে আলাপ করি। পোলিং কর্মকর্তাদের বলি, আমি হারি কিংবা
জিতি কোন দুঃখ নেই, আমি খুশী হব যদি নির্বাচন জালভোটমুক্ত ও সুষ্ট হয়। আমার
প্রতিদ্বন্দ্বী একজন জালভোট দিতে গেলে কর্মকর্তারা বুঝতে পেরে ইশারা দিয়ে তাকে বিদায়
করে দেন।
আমি এই নির্বাচনে জয়ী হব কিনা
খুবই সন্দিহান ছিলাম। বিকেল পাচটার পর আমাদের সামনে ভোট গননা হয়। কলেজ সদস্যের
গননা আগেই সমাপ্ত হল। বিজয়ী প্রথম যে নামটি ঘোষিত হল তা হল কলেজ কমিটির সদস্য সি
আই আর কুরেশী। সবাই হাত ও বুক মেলাতে এগিয়ে আসলেন। বাহিরে আমার কয়েকজন সমর্থক
আনন্দে চিৎকার করলেন, যেমনটি অন্যসব নির্বাচনে হয়। আল্লাহর অশেষ শোকরিয়া আদায় করে
বাসায় ফিরলাম। গ্রামে বদলী, ভোটের জঞ্জাল এসবে ক্লান্ত শ্রান্ত আমি বহুদিন পর
দিলাম এক শান্তির ঘুম।
পরদিন সিলেটের স্থানীয়
পত্রিকাসমুহে বিজয়ীদের নামসহ ছবি দেখতে পাই। পুবালী ব্যাংকের আঞ্চলিক অফিস
প্রধানের শত অপমানের মধ্যেও এই বিজয়ে নিজেকে বেশ ধন্য ও সফল মনে হল। সুদখানার
সুদের হারাম টাকায় ভুড়ি ফোলানো ব্যাংকের চূড়ে চূড়ে বসা বড়কর্তারা আমাকে যথাযত
সম্মান না দিলেও আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাকে ঠিকই সম্মান দিলেন।
কমিটির সভাপতি পদাধিকারবলে সিলেটের
জেলাপ্রশাসক জয়নাল আবেদিন, সহসভাপতি প্রিন্সিপাল হোসনে আরা, শিক্ষক সদস্য কবির
রায়হান ও লিলি টিচার। এই প্রতিষ্টানের ভূমি মালিক আসলে সিলেটের সুবিদবাজারের
ঐতিহ্যবাহী হিন্দু দস্তিদার জমিদারবাড়ি। এবাড়ির লোকজন ১৯৪৭সালে ভারতে চলে যাওয়ায়
দাতা সদস্য করার জন্য তাদের কোন বংশধর আজ আর খুঁজে পাওয়া যায়না। একসময় পাচলক্ষ
টাকা অনুদান দিয়ে কয়েকজন দানবীর স্কুলের দাতা কমিটির সদস্য হন। এই দাতা কমিটির
সদস্যদের কেউ নির্বাচনে প্রতিযোগিতা না করায় বেশ কয়েকবার ধরে বিনা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্কুলের একমাত্র দাতা সদস্যপদ দখল করে আছেন এডভোকেট কমরেড আব্দুল মালেক।
নির্বাচন করে কমিটিতে আসি আমি সি
আই আর কুরেশী সহকারী মহাব্যবস্থাপক পুবালী ব্যাংক লিমিটেড, রোটারিয়ান মুফতি শামিম
দরগা মহল্লা, ইকরামুল কবির সভাপতি সিলেট প্রেসক্লাব, হোসনে আরা কলি মহিলা কমিশনার
সিলেট সিটি কর্পোরেশন, শাহরিয়ার সেলিম নেতা বাংলাদেশ যুবলীগ এবং ব্যবসায়ী শাহ আলম।
নতুন নির্বাচিত কমিটির প্রথম সভা
হল এক শুক্রবার বিকেলে কলেজের প্রিন্সিপাল কক্ষে। সভাপতিত্ব করেন প্রিন্সিপাল
হোসনে আরা এবং প্রধান অতিথি হন সিলেটের জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন। সব সদস্য
সেজেগুজে স্মার্ট হয়ে এই সভায় আসেন। আমি স্যুট কোর্ট টাই পরে লালকার হেকে হাজির
হই। আমাদেরকে ফুলের তুড়া দিয়ে কলেজ কতৃপক্ষ বরন করেন এবং রাতে পরিবেশন করেন বেশ মজাদার
খাবার। সেদিন আমরা স্কুলের বেশ কিছু দরকারি বিল পাস করে দেই। ভালই লাগল সিলেটের
সেরা স্কুলের কমিটিতে প্রথমদিন কাজ করে।
প্রতিষ্টানে চাকুরী করেন প্রায়
দুই শতাধিক শিক্ষক কিন্তু তাদের মধ্যে হাতেগুনা প্রবীণ কয়েকজন বুদ্ধিমান শিক্ষক
প্রিন্সিপাল হোসনে আরার পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেন। তারা ব্রজেন বাবু, মাধব
বাবু, অলক বাবু, সাহেদা টিচার, বেবি টিচার, লিলি টিচার, শফিকুল হক, কবির রায়হান
প্রমুখ। প্রায় মাসিক সভায় তারা প্রিন্সিপালের পাশে পাশে থাকতেন। অফিস কর্মকর্তারা
ফাইল পত্র নিয়ে কাছেই অবস্থান করতেন যাতে তলব করামাত্র হাজির হন।
স্কুলকমিটি নির্বাচনের কিছুদিন
আগে কলেজ কতৃপক্ষ বিভিন্ন শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি করেন। এই ভর্তি নতুন কমিটি অনুমোদন
করতে রাজি হলনা। কমিটির অভিমত কলেজ কতৃপক্ষ কমিটিকে পাশ কাটিয়ে ভোটের আগে চতুরতা
করে ছাত্রছাত্রি ভর্তি করে এখন আমাদের কাছে অনুমোদন নিতে এসেছেন। এব্যাপারে
প্রিন্সিপাল হোসনে আরার সাথে সদস্যদের তীব্র বাদানুবাদ শুরু হল। অবস্থা এমন
পর্যায়ে গেল যে কেউ কেউ অধ্যক্ষা হোসনে আরার পদত্যাগ দাবী করে বসেন। আগের কমিটিতে
থাকা সদস্য এডভোকেট কমরেড আব্দুল মালেক, মুফতি শামিম, কলি আপারা বললেন আগের
বছরগুলোতে ভর্তির ব্যাপারে সদস্যদের ভর্তিকোঠা ছিল। কমিটি সদস্যদের এই ভর্তিকোঠা ঠকায়ে
অধ্যক্ষা হোসনে আরা নিজের ইচ্ছেমত ভর্তিকাজ সমাধা করে ফেলেছেন। ভাবলাম কোঠা সব সময়
যোগ্যদেরকে বঞ্চিত করে। কোঠার চাপে পড়ে যোগ্য শিক্ষার্থিরা যদি ভর্তি না হয়, তবে
ঐতিহ্যবাহী স্কুলটি সুনাম ধরে রাখবে কেমন করে?
আমার কানে আসল ভর্তি নিয়ে এখানে
বানিজ্য হয়। আমার পুত্র জেফার এখানে কেজি স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। তাই বিষয়টা নিরীক্ষা
করতে আমি ফেন্সুগঞ্জ সারকারখানা হতে এসে ব্লুবার্ড স্কুলে ভর্তি হওয়া আমার ভাগনা
মুফতি তাসনিমের (হিমু) বাসায় যাই। তার কাছে প্রশ্ন করি তুমি এই স্কুলে কিভাবে
ভর্তি হয়েছিলে। সে জবাব দিল ফেন্সুগঞ্জ সারকারখানা হতে এক সহপাঠীসহ তারা দুইজন
ভর্তির জন্য অধ্যক্ষা হোসনে আরার কক্ষে যান। অধ্যক্ষা তাদের মার্কসিট দেখে দুজনকে
ভর্তি করে দেন। তাদের কাছে অতিরিক্ত কোন অর্থ ভর্তির জন্য চাওয়া হয়েছিল কিনা জানতে
চাইলে সে জবাব দিল ‘না’।
আবার বললাম ভর্তি ফি ও বাৎসরিক
ফি ছাড়া কোন টাকা তারা দাবী করেছে কিনা। আবার জবাব পেলাম ‘না’।
তবে আর একটু পরীক্ষা করে দু একটা
প্রমাণ পেলাম আগেকার বিভিন্ন কমিটিতে থাকা দু একজন অসৎ কমিটি সদস্য ভর্তি বানিজ্য
করে অমেধাবী ছাত্রছাত্রিদেরকে ভর্তি করাতে অধ্যক্ষাকে বাধ্য করেন। সাধারণত
রাজনীতিবিদ হতে আসা কমিটি সদস্যরা এধরনের অপকর্মে বেশি জড়িত ছিলেন। এখানে অযোগ্যরা
ভর্তি হলে পরীক্ষায় ফেল মারে এবং স্কুলের সুনামের স্বার্থে তাদেরকে বের করে দেয়া
হয়। আমি কমিটিতে বললাম যারা ভর্তির জন্য বিভিন্ন ক্লাশে আবেদন করবে তাদের বিগত পরীক্ষার
ফলাফল দেখে এবং ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে মেধাবী ও যোগ্যদেরকে ভর্তি করা হউক। কিন্তু
আমার এই ভাষন হালে পানি পেলনা।
বিষয়টি নিয়ে এমন জটিলতা তৈরি হল
যে কমিটি মাসিক সভা বর্জন করল। জেলাপ্রশাসক জয়নাল আবেদিন তার বাস ভবনে সভা ডাকলেন।
কমিটির সদস্যরা অধ্যক্ষা হোসনে আরার বিরূদ্ধে একটি লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব
জেলাপ্রশাসকের কাছে পেশ করলেন। কমিটির সব সদস্য আমার বাসায় হাজির হলে আমি অনেকটা
বাধ্য হয়ে তাতে সই করি। অধ্যক্ষা হোসনে আরা রাগ করে বললেন আমরা এখানকার স্থায়ী
বাসিন্দা, তারা দুই বছরের জন্য কমিটিতে এসে আমাদের উপর অন্যায় প্রভাব খাটাচ্ছে।
দেখে নেব কারা কদিন এখানে থাকে এবং কারা যায়? এই অচলাবস্থা চলাকালে স্কুল
প্রাঙ্গণে অভিভাবক সম্বর্ধনা অনুষ্টিত হয়। আমি আমন্ত্রনপত্র পেয়ে সস্ত্রীক অনুষ্টানে
হাজির হই। অনুষ্টানে জেলাপ্রশাসক ছাড়া আর কোন কমিটি সদস্যের দেখা পেলাম না। কলেজ
কতৃপক্ষ আমার পত্নী ডাঃ নুরজাহান বেগমকে দর্শকসারির সামনের কাতারের ভি আই পি
চেয়ারে বসান। আমাকে খুব সম্মান দেন এবং মঞ্চে জেলাপ্রশাসকের বাম চেয়ারে বসান।
সেদিন আমি স্কুলপ্রাঙ্গণে ভর্তি ছাত্রছাত্রি ও অভিভাবকের সামনে আমার জীবনের একটি
সুন্দর ঞ্জানগর্ব ভাষন দেই। ছাত্রছাত্রিদের পানে তাকিয়ে বলা সেই ভাষনের একটি লাইন
এখনও মনে আছে- ‘আজকে আমার সামনে আমি ভবিষ্যত বাংলাদেশকে দেখতে পাচ্ছি। এই বাচ্ছারা
আমাদের আগামী দিনের সোনার বাংলাদেশ’। সভায় উপস্থিত পরিচিতরা পরে আমাকে এই সুন্দর
প্রাঞ্জল ভাষণ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
এই সভায় যোগদান করায় কমিটির অন্য
সদস্যরা আমার উপর বেশ ক্ষুব্ধ হন।
কলেজ কমিটির মতানৈক্য কলেজের
বিলপাসে ও প্রয়োজনীয় সিন্ধান্ত গ্রহণে বেশ অচলাবস্থা সৃষ্টি করে। এই অচলাবস্থা দূর
করতে এবার জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদিন হস্তক্ষেপ করেন। একজন তরুণ ম্যাজিস্টেট
সবকিছু তদন্ত করে দেখেন। জেলা প্রশাসক প্রস্তাব করেন অতীতের ভর্তি নিয়ে কান্নাকাটি করে কোন লাভ নেই।
এই ভর্তি বাতিল করাও সম্ভব নয়। যা গেছে যাক, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবুন। কমরেড আব্দুল
মালেক তা সমর্থন করলেন।
কমিটি সদস্যরা দাবি করলেন আগামী
ভর্তিকালে প্রত্যেক সদস্যকে দশটি করে ভর্তি কোঠা দিতে হবে। অনেক বিতর্কের পর কোঠা
এসে সাতে ঠেকলো। আমিও সাতটি ভর্তিকোঠা পেলাম। আমার কাছে দুইটি অনুরোধ আসল। একজন
মেধাবী ছাত্রিকে ভর্তি করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন ভাতিজা কামাল কুরেশী যে মেয়েটি
পরে ক্লাশে প্রথম স্থান দখল করে। দ্বিতীয় অনুরোধ জানান এক ভাতিজাকে ভর্তি করে
দেবার জন্য আমার বস অঞ্চলপ্রধান আহমদ এনায়েত মঞ্জুর। আমি অধ্যক্ষাকে ফোনে বলে দেই।
তবে এই ছাত্র ভর্তি হয়েছিল কিনা আর খবর পাইনি। আমার শূন্য পাচটি কোঠায় সুযোগ নিতে
অন্য সদস্যরা আমার পিছু ছুটলেন। তারা চৌধুরীবাজার শাখায়ও ছুটে যান। কিন্তু আমার আর
করার কিছু রইল না। আমি উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে কাজ করতে চাই। কেউ মনে করুক আমি
সদস্য হয়ে ভর্তি বানিজ্য করছি, অবৈধ টাকা কামাচ্ছি, তা আমি হতে দেইনি।
আমি সম্মানের জন্য আমার একমাত্র পুত্র
জেফারের চৌদ্দ বছরের স্মৃতি বিজড়িত এই স্কুলের পরিচালনা কমিটিতে আসি এবং উজ্জ্বল
ভাবমূর্তি নিয়েই বিদায় হই।
বিদ্যালয়ের মিলাদ মাহফিল,
খেলাধুলা ইত্যাদি অনুষ্ঠানে আমি সপরিবারে উপস্থিত হতাম। কারন স্কুলের সামনেই ছিল
আমার বেগম সাহেবার ডাক্তার চেম্বার। এখানে অনেক শিক্ষকের পত্নীরা ছিলেন তার নিয়মিত
পেসেন্ট। মিলাদ মাহফিল হতে ফেরার সময় শিক্ষকরা কয়েক পকেট আখনি বিরিয়ানী আমার কারে
তুলে দিতেন। আমার মেয়াদকাল শেষ হবার পরও অধ্যক্ষা হোসনে আরা বিভিন্ন অনুষ্টানে
আমাকে আমন্ত্রন জানাতেন কিন্তু আমি সিলেট শহর ছেড়ে দূরাঞ্চলে বদলী হওয়ায় উপস্থিত
হওয়া সম্ভব হতনা।
স্কুলের প্রধান অনুষ্টান হল
বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। দুই বছরে আমরা দুইটি বাৎসরিক ক্রীড়া অনুষ্টানে অতিথি
হিসাবে সভামঞ্চে আরোহন করি। প্রথমবার প্রধান অতিথি হয়ে আসেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল
ইসলাম নাহিদ এমপি। কলেজের সামনে বড় রাস্থায় বিরাট গেট নির্মান করা হয়। ব্লুবার্ডের
পক্ষ হতে আমাদেরকে বিশেষ ধরনের পাজামা পাঞ্জাবি ও উত্তরীয় পরানো হয়। ছাত্রছাত্রিরা
সুন্দর মার্চপাস্ট করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, জেলা প্রশাসক জয়নাল
আবেদিন ও অধ্যক্ষা হোসনে আরাকে সালাম প্রদান করে। প্রতি ইভেন্টে তিনজন করে বিজয়ীর
হাতে পুরস্কার তুলে দেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রি। মন্ত্রি একটি দীর্ঘ্য বক্তব্য
রাখেন। সভাশেষে মন্ত্রীকে নিয়ে আমরা প্রিন্সিপাল রূমে খেতে বসি।
স্কুলকমিটি সদস্যদের জন্য চেয়ার
দখল, বেলুন ফাটানো ইত্যাদি খেলা ছিল। আমরা কলেজ হতে উপহার পাই ফুলের তোড়া এবং বেশকিছু
মূল্যবান তৈজসপত্র। সবশেষে অধ্যক্ষার কক্ষে একটি ছোট্ট অনুষ্ঠান করে আমার রচিত এককপি
‘ইসফাক কুরায়শী রচনাসমগ্র’ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাতে তুলে
দেয়া হয়। অধ্যক্ষা হোসনে আরা এবং সিলেটের জেলাপ্রশাসকের পত্নী এসময় আমার পাশে ছিলেন। এই ছবিটি মোবাইলে ধারন
করেন সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ও স্কুলকমিটি সদস্য ইকরামুল কবির। তার কাছ থেকে
ছবিটি নিয়ে আমি ফেসবুকে পোস্ট করি। এই ছবিটি ভাইরাল হয় এবং পাচ হাজারেরও বেশী লাইক
পড়ে।
পরবর্তি বছরের বার্ষিক ক্রীড়া
অনুষ্টানে আমরা অনুরূপ উপহার পাই। আমাদেরকে রেমন্ডের একটি দামি কোট পরানো হয়। এই
কোটের পকেটের উপর ‘ব্লুবার্ড স্কুল এন্ড কলেজ’ লিখা কাপড়ের স্টিকার ছিল। গাঢ় নীলে
কালো চেক সুন্দর এই কোটটি পরলে আজও আমার ব্লু বার্ড স্কুলের মধুর স্মৃতি মনে পড়ে
যায়।
বাৎসরিক সভায় জেলাপ্রশাসক জয়নাল
আবেদিন আমাকে বললেন, আপনি ব্যাংকার তাই আপনি অর্থকমিটির প্রধান। দুইকোটি টাকার
এফডিআর করানোর দায়িত্ব তিনি আমাকে দেন। আমাকে গ্রামের শাখায় বদলি করায় সেখানে এই
ডিপোজিট নেয়া সম্ভব নয়। পূবালী ব্যাংকের সিলেট শহরের যে কোন শাখায় এই এফডিআর করানো
যেত কিন্তু আমি আগ্রহী হলাম না। পূবালী ব্যাংক কতৃপক্ষ আমাকে যেখানে সিলেট শহরে থাকার
স্থান দিচ্ছেনা, আমি কেন এখানের কোন শাখায় ডিপোজিট সাপ্লাই দিতে যাবো। আসলে সিরাজুল
হক চৌধুরীর হটকারিতার কারণে এখানেই পুবালী ব্যাংক দুই বছরে চারকোটি টাকা ডিপোজিট
হারালো।
ব্রজেন চক্রবর্তী স্যারের বাসা
বাগবাড়ি। তিনি আমার পুত্র জেফারের গণিতের টিচার। তার সুন্দর দুতলা বাসায় গিয়ে
জেফার প্রাইভেট পড়ত। তার একমাত্র পুত্রকে হঠাৎ মরন রোগ ক্যান্সারে পেয়ে বসে। সে
ইতিমধ্যে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। ব্লুবার্ডে বছর দুয়েক আগে তার
চিকিৎসার খরচ সংগ্রহে কনসার্ট আনুষ্টিত হয়। আমি তখন কমিটিতে ছিলাম না। একটি বড়
অঙ্কের সাহায্য আমি সেদিন করেছিলাম। কলেজ থেকে একদিন ফোন আসল স্কুলের সাবেক ছাত্র
ও ব্রজেন স্যারের একমাত্র পুত্র রাতে ঢাকায় মারা গেছেন। সকালে ব্লুবার্ড স্কুলে
তার লাশ আনা হল। আমি, মুফতি শামিম, ইকরামুল কবির, এডভোকেট আব্দুল মালেক, অধ্যক্ষা
হোসনে আরা প্রমুখ স্কুল প্রাঙ্গণে গিয়ে কফিনে পুষ্পস্থবক অর্পণ করি। ব্রজেন
স্যারের একমাত্র পুত্রের মৃত্যু সবার চোখ অশ্রুসজল করে দেয়।
আমি ও ডাঃ নুরজাহান রাতে ব্রজেন
স্যারকে সান্তনা দিতে তাদের বাসায় যাই। একমাত্র পুত্রের একটি বড় পোট্রেটে
পুষ্পমাল্য দিয়ে তার মা আহাজারি করছেন। সারাটা কক্ষে ছেলের বইপত্র কাপড় চোপড় ছড়িয়ে
ছিটিয়ে রয়েছে। পুত্রহারা মা সন্তানকে নিয়ে তার স্বপ্ন ও ক্যান্সারে তার হারিয়ে
যাবার করুন কাহিনী শোনালেন সজল চোখে। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কয়েক বছরের কষ্টকর
যুদ্ধে তরুণ পুত্রের ধর্য্য ও সাহসের বীরত্ব কাহিনি শোনালেন। মাত্র
উনিশ বিশ বছরের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে ব্রজেন
দম্পতি বাকহারা হয়ে যান। আমরাও চোখে পানি আটকে রাখতে পারিনি, চোখ মুছে মুছে ব্রজেন
স্যারের বাসা হতে সেই রাতে বেরিয়ে আসি।
২০১৪ সালে পুত্র জেফার বিঞ্জানে
এসএসসি পরীক্ষায় খুব ভাল রেজাল্ট করে পাস করে। আমি তাকে এমসি কলেজে ভর্তি করার
চেষ্টা করি। এমসি কলেজে গিয়ে দেখি আমরা যেমন স্বচ্ছভাবে এখানে ১৯৮১ সালে ভর্তি
হয়েছিলাম এখন আর সেই স্বচ্ছতা নেই। এখানে ছাত্রলিগের নামে অনিয়ম ও ভর্তি বানিজ্য
চলছে। কারা এখানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে সেই তালিকা টাঙ্গানোমাত্র ছাত্রলিগ ছিড়ে
ফেলে। আমাকে ছাত্রলিগের এক নেতার নাম বলা হল তার কাছে গিয়ে ভর্তির ব্যাপারে আলাপ
করতে হবে। জেফারের সহপাঠী সাদাতের আম্মা কয়েকদিন ধরে সকাল হতে বিকেল কলেজ
প্রাঙ্গণে কাটিয়ে পূত্রকে কোনমতে ভর্তি করেন। আমার চিকিৎসক পত্নী ও আমি ব্যাংকারের
এই ঘোড়দৌড় দেবার সময় কোথায়? তাই শেষমেশ মনমরা পূত্রকে এমসি কলেজের পরিবর্তে বাসার
কাছে এই ব্লুবার্ড স্কুল এন্ড কলেজের বিঞ্জান অনুষদে ভর্তি করে দেই। তার সহপাঠিরা
এমসি কলেজে ভর্তি হলেও সে ভর্তি হতে না পেরে খুব মানসিক আঘাত পায়। আমার বাবা সফিক
চৌধুরী, আমি চৌধুরী ইসফাক এই দুই প্রজন্ম এমসি কলেজে অধ্যয়ন করলেও তৃতীয় প্রজন্ম
জেফারের ভাগ্যে এমসি কলেজে পড়ার সুযোগ হয়নি, তাও আবার ভর্তি দুর্নীতির কারনে। এসব
ভেবে ও পূত্রের মানসিক কষ্ট দেখে রাতে ঘুমানোর সময় আমার চোখে বেশ জল আসে। মহান
আল্লাহের দরবারে পুত্রের উজ্জল ভবিষ্যৎ প্রার্থনা করে বালিশে চোখমুছে এক সময়
ঘুমিয়ে পড়ি।
আমার পুত্র জেফার ২০১৬ সালের
জুনে এই ব্লুবার্ড কলেজ হতে বিঞ্জানে এইচ এস সি পরীক্ষা দেবে। আমরা সপরিবারে ২০১৫
এবং ২০১৬ সালে দুইবার যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডা সফরে গিয়ে প্রায় আড়াই মাস সময় নষ্ট
করি। এই সফর জেফারকে লেখাপড়ায় বেশ পিছনে ফেলে দেয়। পরীক্ষায় আগে জেফারের মনবল
ভেঙ্গে যায়। সে কিছু অদ্ভুদ আচরন করতে শুরু করে। অযথা রেগে যাওয়া, বইখাতা ছুড়ে
মারা, কথাবার্তা না বলা, খাট পালঙ্গে বাসার দেয়ালে লাতি মারা ইত্যাদি আমাদেরকে বেশ
চিন্তাগ্রস্ত করে দেয়। এমনকি রাতে তার ঘুমেও ব্যাঘাত হতে থাকে। আমি ও নুরজাহান
বেগম তাকে নিয়ে এক গভীর সঙ্কটে পড়ে যাই। জমজমের পানি, হুজুরের দোয়া তাবিজ কিছুতেই
কাজ হলনা। একদিন শাহজালালের(রহঃ) দরগা মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে নিয়ে গেলাম। তার
পরিচয় পাই, তিনি বালাউটের চৌধুরী পরিবারের সন্থান মৌলানা আবু হুজায়ফা চৌধুরী। আমি
বেশ অবাকই হলাম, এই পেশ ইমামের সাথে আমার আগে কখনও দেখা হয়নি, অথচ তিনি জেফারের
দিকে তাকিয়ে বললেন সে আপনার একমাত্র সন্থান তাই একটু বেশী আদর যত্নে বড় হওয়ায় এসব
হচ্ছে। আমি অবাকই হলাম তিনি কেমন করে জানলেন জেফার আমার একমাত্র সন্থান। তারপর
বললেন, এখানে কোন ধরণের জাদু বা ভৌতিক কিছু নেই। তিনি তার মাথায় হাত রেখে জিকির
পড়ে বার-কয়েক ফু দেন এবং এক বোতল পানিপড়া দিয়ে বিদায় জানান।
আমার পত্নী জেফারকে নিয়ে যান
ওসমানী মেডিকেলে তার সিনিয়র ক্লাশে অধ্যয়নকারী মানসিক রোগ বিশেষঞ্জ ডাঃ দীপেন্দ্র নারায়ন
বাবুর চেম্বারে। দীপেন্দ্র দা হবিগঞ্জের সন্থান এবং আমার সমনদি গনিতের অধ্যাপক
কবির আহমদ চৌধুরীর ছাত্র। তিনি খুব দরদ দিয়ে জেফারকে দেখলেন নিজ সন্থানের মত। তার
ঔষধ সেবন করে জেফারের ঘুম হয় ও অস্থিরতা কিছুটা কমে যায়। তিনি বললেন পরীক্ষা নিয়ে
হাইপারটেনশন হতে সে এই মানসিক আচরন করছে। রোগ প্রাথমিক অবস্থায় আছে, দুচিন্তা দূর
হলে ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে যাবে। সাবধান করলেন পরীক্ষা পর্যন্ত ঔষধ সেবন করাতে হবে,
নইলে সে পরীক্ষা দিতে পারবেনা।
দুইতিন মাস ধরে জেফার লেখাপড়া
করতে পারছেনা। আমরা ভীষণ দুশ্চিন্তা করছি, এখানেই কি আমাদের ছেলের শিক্ষাজীবন ইতি
হয়ে গেল। এত উচ্চ শিক্ষিত মা-বাবার সন্থান হয়ে সে এসএসসিতেই খতম। নূরজাহান উদাহরন
দেন, ডাঃ শ্যামাপদ দার একমাত্র পূত্র কেবল ইন্টারমেডিয়েট হয়েছে এবং আমার বাসায়
তিনতলার ভাড়াটিয়া ডাঃ গাজির একমাত্র ছেলেটি ক্লাশ এইটেই শেষ হয়ে গেছে। নাজানি
তাদের অন্তরে যে কি দুঃখ জাবর কেটেছিল। আমার একমাত্র পূত্র জেফারকে নিয়ে সেই
অসহনীয় যন্ত্রণা আজ আমাদের বুকটা ক্ষুরে ক্ষুরে খাচ্ছে।
এইচ এস সি পরীক্ষার সময়কাল গনিয়ে
আসছে। জেফার ক্লাস করছেনা, এমনকি প্রেকটিক্যাল ক্লাশে যাচ্ছেনা। পদার্থবিঞ্জান
জীবনবিঞ্জান ও রসায়ন বিঞ্জানের প্রেকটিক্যাল খাতা তৈরী করতে পারছেনা। আমরা সবাই
মিলে খাতাগূলো প্রস্তুত করলাম। শিক্ষকরা সবাই ব্যবহারিক খাতা দস্তখত করে দিলেও
পদার্থবিঞ্জানের ব্যবহারিক খাতায় দস্তখত করতে মাধব চক্রবর্তী স্যার রাজি হলেন না।
আমার বেগম সাহেবা ফোন করলে রেগে গিয়ে মাধব স্যার বললেন সেই কবে সময় পার হয়ে গেছে,
এখন আর সম্ভব নয়। সকালে আমি মাধব স্যারকে ফোন করে পরিচয় দিলাম, আমি ইসফাক কুরেশী কলেজ
কমিটির সদস্য বলছি আমার পুত্র জেফারের খাতায় আপনার দস্তখত হয়নি। এতটুকু বলতেই
বললেন, বলুন আমি কখন আপনার বাসায় এসে খাতায় দস্তখত করে দেবো? আমি জবাব দিলাম আপনার
আসার দরকার নেই, আপনার বাসার ঠিকানা দেন আমি গাড়ি নিয়ে এখনই চলে আসব। কালিবাড়ি
একটি টিলার উপর তার বাসা, আমাকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে সাথে সাথে দস্তখত করে দিলেন।
পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল আম্বরখানা বালিকা স্কুল এন্ড কলেজ। তিন চার মাস কোন অধ্যয়ন না
করেই জেফার পরীক্ষা কেন্দ্রে গেল। পরীক্ষার হলে নিয়ে যাওয়া ছিল বেশ সংগ্রামের কাজ।
তার একটাই জবাব আমি কিছুই পারবোনা। আমার ভাগনা তানভীর তার মোটর সাইকেলে নিয়ে কেন্দ্রে
ঢূকিয়ে দিত। একদিন কোনমতেই তাকে পরীক্ষা হলে নেয়া যাচ্ছেনা। পরীক্ষা আরম্ভ হবার দশ
বার মিনিট পর তানভির তাকে কোনমতে কেন্দ্রে ঢূকাল। অথচ সেদিন তার পরীক্ষা ভালই হল।
সেইদিন পরীক্ষা হলে তাকে পাঠানো নাগেলে এখানেই তার শিক্ষা জীবনের বারটা বেজে যেত।
জেফারের রিজাল্ট কি হবে তা নিয়ে
আমরা ছিলাম খুব উদ্ভিগ্ন। আমি আল্লাহকে বললাম হে দয়াময় আমার একমাত্র পূত্র জেফার
ফেল না করে একটা সাধারন ফলাফল করলেই আমি খুশী হব, তোমার দরবারে শোকর গোজার করব।
কোনমতে উত্তীর্ন হলেই সহজ কোন বিষয়ে তাকে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি করে দেব।
একসময় পরীক্ষার ফলাফল বেরুল।
জেফার ফেল করার ভয়ে কলেজে ফলাফলের তালিকা দেখতে যাচ্ছেনা। তার মা যেতে চাইলে তাকেও
যেতে দিচ্ছেনা। হঠাৎ সহপাঠী সাদাতের আম্মা ফোন দিলেন জেফার খুব ভাল রেজাল্ট করেছে।
সে এ-প্লাস পেয়েছে। আমার হিসেব মতে দুই বছর কোর্সের সিলেবাসে মাত্র এক বছর লেখাপড়া
করে সে এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়েছে, তাই এই রেজাল্ট সত্যই বিস্ময়কর। আমার বেগন ডাঃ
নুরজাহান আল্লাহর প্রতি শোকরিয়া স্বরূপ কোন একজন গরীব ছাত্রের শিক্ষা খরচের জন্য
পঞ্চাশ হাজার টাকা দান করলেন। আসলে আমার পূত্র জেফার খুব মেধাবী, একটু পরিশ্রমী হলে
এভারেস্টের চূড়ায় উঠা তার জন্য কোন বিষয়ই ছিলনা। কিন্তু সে তার মেধা সম্পর্কে বেখেয়াল
এবং অল্প বয়সে সব পেয়ে যাওয়ায় কেমন যেন স্বপ্নহীন। আসলে জীবনে স্বপ্নবাজ না হলে
অতি মেধাবীরাও কিছু করতে পারেনা।
বদলী হয়ে চৌধুরীবাজার শাখায়
অস্বস্তিকর অবস্থায় সময় পার করলেও আমি সিলেট শহরে আসার কোন চেষ্টা করিনি, কারন
এমডি আমার আত্মীয় ও তার নির্দেশনায় আমি চৌধুরীবাজার আছি। আমার বিশ্বাস ছিল সামনে
পদোন্নতির ডাক পড়লেই আমি সম্মানজনক অবস্থানে এমনিতেই চলে আসব।
কিন্তু আমার নিজের ঘনিষ্ঠ লোকদের
সুবাদে এই সুদখানার পানি যে উত্তর দিকে বইতে শুরু করেছে তা আমি আদৌ টাহর করতে
পারিনি। আমি এত বোকা যে আমার বিরুদ্ধে একটি দুষ্টচক্র পুবালী পাড়ায় গভীর চক্রান্ত
করে যাচ্ছে তাও বুঝতে পারিনি। দুষ্টদের চক্রান্তে আমার ঘনিষ্ঠদের কুঠার আমার অঙ্গে
আঘাত হানবে তা বুঝবোইবা কেমন করে। আমি কারও সাথেও নেই পাচেও নেই। আছি বোবার মত। লোকে
বলে বোবার কোন শত্রু নেই। তাই ধরে নিলাম আমার কোন শত্রু নেই। যারা চারপাশে আছে
তারা সবাই আমার মিত্র। আমার হিতাকাঙ্খী। কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা নিতে ভাতিজিবর
এমডি হালিম সাহেবের সাথে আগ বাড়িয়ে লাইন মারতে কিংবা ঘষাঘষি করতে আমি কখনও যাইনি। এমডি
সিলেট এলে চাটুকারের দল তার পিছু পিছু দৌড়াতো কিন্তু মনে পড়ে আমি একদিনও তার সাথে
দেখা করতে যাইনি। এই সুযোগই আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগায় পূবালীর দুষ্টচক্রের
হোতারা।
২০১৬ সালের এপ্রিলে আচমকা
মৌলভীবাজার বদলি হলাম। তারপর আমার প্রিয় ব্লুবার্ডের সাথে যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে আসে।
কেবল শুক্র ও শনিবার কোন অনুষ্ঠান কিংবা সভা হলে আমি উপস্থিত হতাম। এই স্কুলকমিটির
মেয়াদকালের শেষ মাসিক সভাটি ২০১৭ সালের মার্চের কোন এক বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসকের
বাসায় অনুষ্ঠিত হয়। আমার খুব ইচ্ছে ছিল ব্লুবার্ডের শেষ এই সভায় যোগদান
করি। মৌলভীবাজার হতে রওয়ানা হই এই সভায় যোগ দিতে কিন্তু আসতে বেশ দেরি হয়ে যায়। রাত
নয় ঘটিকায় আমি যখন সিলেটের ডিসি বাংলোয় ঢুকি তখন সভা সমাপ্ত হয়ে যায়। সবার সাথে
হাত মিলায়ে কেবল রাতের মজাদার ডিনারে শরিক হই।
কিছুদিনের মধ্যে আবার নির্বাচন
হল, নতুন স্কুল কমিটি হল। একদিন প্রিন্সিপাল হোসনে আরা আমাকে নতুন কমিটির পরিচিতি
সভায় আমন্ত্রণ জানান। নতুন ও পুরাতন দুই কমিটির কুশল বিনিময় হল। নামটা মনে
নেই একজন নতুন জেলা প্রশাসক বদলী হয়ে এসেছেন। তিনি এই সভার মধ্যমনি হন। নতুনদের
সাথে আমরা বিদায়ীরাও বড় বড় ফুলের তুড়া উপহার পেলাম। আমি কমিটি হতে চলে গেলে কি হবে,
ব্লুবার্ড স্কুল আমাকে মনে রেখেছে বহুদিন। পরবর্তী কয়েক বৎসর আমি তাদের আচার অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছি। কিন্তু যেতে পারিনি, কারণ তখন
চাকুরী উপলক্ষে আমার আবাস সুদূর মৌলভীবাজার।
আমার পরম মমতাভরা ব্লুবার্ড
স্কুল ও কলেজে পুত্র জেফারের সুদীর্ঘ চৌদ্দ বছর এবং তার পিতা আমি ইসফাক কুরেশীর
দুই বছরের সুখস্মৃতি আজীবন চির অম্লান হয়ে থাকবে। প্রার্থনা করি ব্লুবার্ড স্কুল
এন্ড কলেজ তার সুনাম ও সুখ্যাতি যেন চিরকাল ধরে রাখে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন