ড্রাইভার এনাম আহমদের দুর্নীতি তদন্তঃ
পুবালী ব্যাংকের ড্রাইভার এনাম
আহমদের বিরুদ্ধে একদিন দুর্নীতি দমন কমিশন হতে কিছু অভিযোগ তদন্তের আদেশ আসে।
আঞ্চলিক প্রধান সিরাজুল হক চৌধুরী আমাকে এই তদন্তের দায়িত্ব দেন। এনাম আমার
গ্রামের লোক, আমাদের বংশের কোনার চৌধুরীবাড়ির কাছের লোক। হীন দরিদ্র এনাম আমার
ছোটভাইয়ের সাথে উঠবস করত। সে কোনমতে গাড়ি চালানো শিখে নিয়েছে। আমার বেগম ডাঃ
নুরজাহান বেগম তাকে আয়শা ক্লিনিকের এম্বুল্যান্স চালকের কাজ দেন। এখানে মজুরি কম, রাতদিন
কঠিন পরিশ্রম। এবার তিনি তাকে আমাদের নর্থইস্ট মেডিক্যাল কলেজের চালকের কাজে নিয়ে
যান। আমি চাইলাম সে আমাদের ব্যাংকে আসুক, তাহলে দীনহীন এনামের জীবনের একটি সুন্দর
গতি হয়ে যাবে। একদিন ব্যাংকে চালক নিয়োগের খবর শুনে তাকে দিয়ে আবেদন করাই। সে
সত্যিই ভাগ্যবান, সিলেট আঞ্চলিক অফিস হতে মাস দুয়েকের মধ্যে আমার হাতে তার
নিয়োগপত্র আসে।
এইদিনই আমার অনুজ নিশাত বলল
তাদের কোন এক ব্যবসার টাকা এনাম তছরুফ করেছে। হিসাব দিচ্ছেনা, টাকাও দিচ্ছেনা। সে
বলল এই নিয়োগপত্র আটকিয়ে এই পাওনা আদায় করা যায় কিনা। আমি জবাব দিলাম ‘না’। আল্লাহ
তার ভাগ্যে এই চাকুরী জুটিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার করার কিছু নেই। আমি এনামকে বাসায়
ডেকে এনে নিয়োগপত্র তার হাতে তুলে দেই। এনাম খুব ধুর্ত ও তোষামুদে। চাকুরী পাবার
পর তার দ্রুত উন্নতি হয়, ব্যবসাপাতি করে গ্রামে ধনবান হয়। যে চৌধুরী বাড়ির তারা
নানাকার প্রজা ছিল, সেই নির্বংশ খালি বাড়িটি সে কৌশলে দখল করে নেয়। এখানে বাড়ি করে
ও স্কুল ব্যবসা জুড়ে দেয়।
অফিসের একজন সহকর্মিকে সাথে নিয়ে
ঘটনাস্থল দাউদপুর কোনার চৌধুরীবাড়িতে গিয়ে লোকজনকে ডেকে আনি। আমি সবগুলো অভিযোগ
একে একে পরীক্ষা নিরীক্ষা করি। অনেক কষ্টে তদন্তকাজ শেষ হল। সবশেষে অভিযোগকারী
আলচন আলী মেম্বার ও ফারুক আলীকে ডাকি। অভিযোগপত্রে তাদের স্বাক্ষর দেখিয়ে বলি, এই
অভিযোগ কি আপনারা করেছেন? তারা সাফ জবাব দিল- আমরা কেউ এই অভিযোগ করিনি। কেঊ হয়ত
আমাদের স্বাক্ষর জাল করে এই অভিযোগ করেছে।
বুঝে ফেলি এতক্ষণে ধূর্ত এনাম এই
দুই অভিযোগকারীকে সুকৌশলে হাত করে ফেলেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন