প্রসঙ্গঃ
এক এগার- ২০০৭, ফখর উদ্দিন-মইন উদ্দিন সরকারঃ
২০০৬ সাল
ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতার বছর, এই বছর খালেদা জিয়া সরকারের পাঁচ বৎসর মেয়াদকাল
সমাপ্ত হওয়ামাত্রই ভোট পরিচালনার তত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে
ভীষণ সংঘাত শুরু হয়। ১৯৯০ হতে যাত্রা শুরু করা গনতন্ত্রের পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে গেল।
কয়েকমাসের একটানা রক্তাক্ত সংঘর্ষের পর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি
সেনাবাহিনীর সমর্থনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরউদ্দিন আহমদ সরকার গঠন
করলেন। বিভিন্ন বাহিনীর সময়ন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী রাস্থায় নেমে এসে শক্তহাতে
এতদিনের অরাজকতা দমন করে। ফলে বহুদিন পর সাধারণ মানুষ বেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেলেন।
কিছুদিন পার
হলে এই সরকার রাজনৈতিক সংস্কার শুরু করলেন। তারা আওয়ামী লীগ হতে শেখ হাসিনা এবং বি
এন পি হতে খালেদা জিয়াকে বাতিল করে দেওয়ার কাজে নামলেন। এখন থেকে এই দুইজন নারীকে
বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি পরিচালিত হবে। ফলে ফখরউদ্দিন সরকার এই দুই নেত্রীকে
জেলে নিক্ষেপ করেন। পরে ইহা জিরো-২ ফর্মুলা নামে অভিহিত
হয়। তবে শতচেষ্টা করেও ফখরউদ্দিন সরকার শেষপর্যন্ত এই দুইজন মহিয়সী নারীকে বাংলাদেশের
রাজনীতি হতে শূন্য করতে সক্ষম হন নি।
কিছুদিন পর
সারাদেশে যৌথ বাহিনী অবৈধভাবে দখল করা সরকারি
জমি উদ্ধারে অভিযানে নামল। অতীতের বিভিন্ন সরকারের আমলে দীর্ঘদিন প্রভাবশালী
গডফাদারদের মধ্যে ইচ্ছেমত সরকারি জমিজামা
দখলের মহোৎসব চলছিল। সারাদেশে লক্ষ লক্ষ একর জমি হতে অবৈধ দখলদার বাজে লোকদের
বিতাড়িত করা হল।
একদিন রাতে
মোটর সাইকেল চড়ে আমার বাসায় ছুটে আসেন আমার অফিস ভবনের জমিদার জাহাঙ্গীর ভাই।
ভীতসন্ত্রস্ত জাহাঙ্গীর ভাই বললেন, যৌথবাহিনী তার ভবনের বারান্দা বরাবর লালদাগ
দিয়েছে। পুরো বারান্দা ও সিড়ির অর্ধেক ভেঙ্গে ফেলতে হবে। বসে থাকা যাবেনা, কারন
যৌথবাহিনী বিশাল বুলডজার নিয়ে ঘুরাঘুরি করছে। যে কোন
সময় বুলডজার চালিয়ে দিতে পারে। যৌথবাহিনীর দানব এই বুলডজার ধাক্কা
দিলে পুরো ভবনই ধ্বংশ করে ফেলবে।
আমি বললাম
আপনাদের ভবনের সামনের বারান্দা কি সরকারের রাস্থার জায়গায়? তিনি জবাব দেন- না,
আমাদের জায়গায়। আমি বললাম তাহলে কেন লালদাগ দিল? বললেন, সরকারী আইন হল রাস্থার
প্রান্তরেখা হতে পাচফুট ছেড়ে ভবন নির্মান করতে হবে। আমাদের
ভবনের উপরের বারান্দা এই পাচফুটের মধ্যে রয়েছে। ভবন নির্মানকালে পৌরসভা কোন বাঁধা
দেয় নাই। এমনকি আমরাও নির্মানকালে এই আইন সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।
পরদিন অফিসে
গিয়ে দেখলাম শ্রমিকেরা হাতুড়ি পিঠিয়ে বারান্দা ভাঙছে। আম্বরখানা হতে ঈদগাহ পর্যন্ত
রাস্থার দুইদিকে একটার পর একটা পাকাভবন
শতশত শ্রমিক হাতুড়ি মেরে ভাঙছে।
চারপাশ ধুলায় সয়লাব। হাতুড়ির আঘাতের শব্দে কান জালাপালা।
একটু পর ভবন
মালিক জাহাঙ্গীর ভাই ও এনাম ভাই নিচে তাদের দোকান হতে এসে আমার সামনে বসেন। আমাকে
বললেন, তারা গতরাতে সিলেট স্টেডিয়াম মার্কেটে যৌথ বাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে ব্যাংকের
কথা বলে সিঁড়ি ও উপরের ব্যাংকে ঢুকার
বারান্দার অংশ আপাতত না ভাঙ্গার অনুমতি নিয়ে এসেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে বারান্দা
ভাঙ্গা শেষ হল, কিন্তু জমিদারগণের মনে এত
ভীতির সঞ্চার হল যে, এবার আমার পরামর্শ উপেক্ষা করে তারা সিঁড়ি ভাঙ্গা আরম্ভ করেন।
আমরা বিকল্প একটি খাড়া লোহার সিঁড়ি স্থাপন করে তবে ব্যাংকে প্রবেশের রাস্থা করে
নেই। এবার শাখাটি বারান্দাহীন হয়ে পড়ে, যা অনেকটা একটি গোদামঘরের আকার ধারন
করে।
সরকারি
রাস্থা যারা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে,
তারা যেমন ভেঙ্গে দখল ছেড়ে দিচ্ছে অনুরূপ যারা নিজ জায়গায় পাচফুট বাদ দিয়ে ভবন
তৈরি করে নাই তারাও একইভাবে ভেঙ্গে দিচ্ছেন। আমার কাছে মনে
হল উভয়ের অপরাধ সমান না হলেও শাস্তি যেন একই সমান হয়ে
যাচ্ছে। নিজ জমিতে যারা স্থাপনা ভেঙ্গে দিচ্ছে তাদেরকেও পাবলিক সরকারী জায়গা
দখলকারী দুর্জনই মনে করছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন