প্রিয় জন্মস্থান, আমার অজস্র স্বপ্নাশা ও
ভালবাসাঃ
সিলেটের
একটি প্রাচীন ঐতিহ্যময় বৃহৎ পরগনা রেংগা। পুরাকালে
যুগেযুগে সমাজের সর্বনিম্ন স্থর গ্রাম ও তার উপরের স্থর ছিল পরগনা। ধারণা
করা হয় আদিকালে এখানে বেশ কিছু রণ বা
যুদ্ধ হয় তাই পরগনার নাম হয় রণগা, যাহা
পরে রেংগাতে রূপান্তরিত হয়। পরগনা বিভিন্ন সামন্তযুগে নিম্ন রাজস্ব ও শাসন ইউনিট
হিসাবে গণ্য হত। সিলেট শহরের ফেঞ্ছুগঞ্জ
রোড বরাবর শিববাড়ি হতে চার মাইলব্যাপী হাওর, বিল ও নিম্নাঞ্চল পার হলে প্রাচীন
রেঙ্গা পরগনা শুরু হয়। রেঙ্গা পরগনার উপর দিয়ে স্থাপিত রেলপথ ও স্থলপথ
সিলেট মহানগরকে সারা বাংলাদেশের সাথে সংযুক্ত
করেছে।
এই রেঙ্গা
পরগনার উদর হতে পাকিস্তান আমলে বেরিয়ে আসে দুইটি ইউনিয়ন দাউদপুর ও মোগলাবাজার।
দড়া, মদনগৌরি, শাহনকপুর ঢুকে যায় ফুলবাড়ি
ইউনিয়নে। কিছু বিচ্ছিন্ন গ্রাম আশপাশের ইউনিয়নে চলে যায়। এখানে
খুব একটা পাহাড় টিলা
নেই। রেঙ্গাটিলা নামে যে একটি ছোট্ট টিলা ছিল, প্রতি বৎসর
ঘোড়দৌড় হত, আজ তাহা লতিফা শফি চৌধুরী
মহিলা কলেজে লীন হয়ে গেছে। দু’ফসলা জমির আধিক্য ছিল এই পরগনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এই রেঙ্গা পরগনার দক্ষিণ দিকে
হাকালুকি হাওয়রের কুলহীন তরঙ্গমালা পার হলে কুশিয়ারার দেখা মেলে।
আমার
জন্মগ্রাম দাউদপুর আয়তনে ও জনসংখ্যায় রেঙ্গা পরগনার চল্লিশ পঞ্চাশটি গ্রামের মধ্যে
সর্ববৃহৎ গ্রাম। এই দাউদপুর গ্রামের পুর্বপাড়ায়
পুর্বচৌধুরী বাড়িতে আমার জন্ম। আমার জন্মভুমি রেঙ্গা পরগনার এই দাউদপুর ইউনিয়ন বহুযুগ
সিলেট সদর বা সিলেট কতোয়ালি থানাভূক্ত
ছিল। আদিকালে যেসব থানায় কোতোয়াল অপরাধীকে কতল করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করত এসব
থানাই ছিল সদর বা কোতোয়ালি থানা। ১৯৯০
সালের পর সদর উপজেলা ভেঙ্গে দক্ষিণসুরমা
উপজেলা সৃষ্টি হলে আমার জন্মস্থান এই নতুন উপজেলার
অর্ন্তভূক্ত হয়। আমার বাড়ির দুই কিলোমিটার পুর্বে আমাদের পাশের নৈখাই মৌজার দাউদাবাদ নামক স্থানে
দক্ষিণসুরমা উপজেলার প্রধান কার্যালয়
স্থাপিত হয়। এখানে একসময় দাউদাবাদ নামে একটি রেলস্টেশনও ছিল, যা আজ নেই।
দাউদপুর ইউনিয়নের তিরাশীগাওয়ে পরবর্তীকালে মোগলাবাজার
থানা স্থাপিত হলে আমাদের গ্রামটি ঐ থানায় অঙ্গীভুত
হয়।
প্রতিবেশী
গ্রাম তুড়ুকখলার সাথে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক এতই
সুনিবিড় ছিল যে এই প্রিয় গ্রামটিকেও মনে হয় আমার জন্ম জন্মান্তরের চির আপন
গ্রাম। চৌধুরীবাজার ছিল এই দুইগ্রামের
সম্মিলন কেন্দ্র। আমার রাত কাটতো
দাউদপুরে ও দিবস তুড়ুকখলায়। আমার শৈশব ও কৌশরের অনেক অন্তরঙ্গ
সঙ্গিসাথীরা ছিলেন তুড়ুকখলা
গ্রামের অধিবাসী। এই গ্রামটি আমার স্মৃতি ও অস্তিত্বের সাথে যেন অঙ্গাঅঙ্গি
মিশে আছে। সুতরাং কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে আপনার জন্মস্থান
কোথায়? তবে ইচ্ছে হয় পরিচয় দেই যৌথনামে দাউদপুর-তুড়ুকখলায়। কারণ এই দুই
গ্রামই আসলে আমার জন্মভূমি, আমার প্রিয় জনমমাটি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন