শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মায়ের দেখা একটি স্বপ্ন ও আমার নামকরণ

 

মায়ের দেখা একটি স্বপ্ন ও আমার নামকর

রমজানের সুচনালগ্নে আমার জন্ম হয়। আব্বা সফিকুর রহমান চৌধুরী আমার কানের কাছে আজান দেন। আল্লাহর সীমাহীন মেহেরবানি ও শোকরিয়া আমি জন্মমাত্রই মহান একেশ্বরবাদী ইসলাম ধর্মের একজন গর্বিত সদস্য হলাম।

আমার নাম রাখার তোড়জোড় শুরু হলো, মা বললেন আমার এই ছেলের নাম রাখবেন আমার বড়ভাই বিখ্যাত আলেমে দ্বীন হজরত মৌলানা মাহমুদুর রহমান চৌধুরী(রঃ) সাহেব। আমাকে গর্ভে নিয়ে মাতা কিছুদিন নানাবাড়িতে ছিলেন। তখন একরাতে স্বপ্নে দেখেন এক উজ্জ্বল সূর্য দাউদপুরের পুর্বচৌধুরীবাড়িতে উদয় হয়ে সারাদেশ আলোকিত করে ফেলেছেমাওলানা মামা মাহমুদুর রহমান চৌধুরী স্বপ্নের তিনটি বাখ্যা করলেন- হয়তো মায়ের কোন গোপন আশা পূর্ণ হবে, অথবা নবজাতক পূত্র সন্থান হবে, নতুবা নবজাতক একজন বিখ্যাত ব্যক্তি হবে

মৌলানা মামা বললেন আমি ওর কোন অর্থবহ নাম রাখব। রমজানে আকিকা হল, মামা আসলেন। কিতাব ঘেটে তাঁর বিখ্যাত নবজাতক ভাগ্নার নাম রাখলেন ইসফাকুর রহমান। ইসফাক শব্দের অর্থ “সদাসয় দয়ালু” এবং রহমান শব্দের অর্থ “মেহেরবান” রহমান আল্লাহর একটি গুবাচক নামও বটে

আব্বা আমার নামের আগে বংশ গৌরবের প্রতীক চৌধুরী পিছে সুপ্রাচীন ঐতিহাসক চিহ্ন কুরেশিযুক্ত করে দেন। আমি হয়ে যাই- “চৌধুরী ইসফাকুর রহমান কুরেশিচৌধুরী হলো চৌথ বা ভুমিকর আদায়কারী জমিদার এবং কুরাইশির আভিধানিক অর্থ হলো ব্যবসায়ী।

সেকালে আমাদের চৌধুরী বংশের লোকজনের নাম আশপাশে দ্রুত নকল হয়ে যেত, আমাদের বাড়ির প্রায় নামই আশপাশে কপি পেস্ট হয়ে গেছে। আমরা বড়বোন রেহাকে ফুলবুবু ডাকতাম। এই ফুলবুবু নামটিও পাশের বাড়িতে একটি মেয়ের নাম হয়ে যায়। তাই মৌলানা মামা আমার একটি ডাকনাম রেখে দেন “সেফাক” যে নামের অর্থ ভোরের আলো, সন্ধ্যালোক বা গোধূলীবেলার আলো। নকল হলে এই নামটাই হবে, আসল নামটি রক্ষা পাবে। তবে অদ্ভুদ ব্যাপার, এই সেফাক নামটি কারো ভাল লাগেনি, তাই হয়তো নামটি আশপাশের গ্রামে নকল হয়নি।

শৈশবে ও কৈশরে নাকি আমার গাত্রবর্ণ ছিল উজ্জ্বল গোলাপী, চেহারা ছিল খুব সুন্দর। তাই মা আমাকে আদর করে লালগোলাপ নামেও ডাকতেন। এই লালগোলাপ ছদ্ধনাম ব্যবহার করে আমি এক সময় প্রায় আড়াইশত গান রচনা করি। সুদীর্ঘ নামের একটা বিড়ম্বনা রয়েছে। লোক প্রায়ই জানতে চাইত, আপনি চৌধুরী আবার কেমন করে কুরেশী? আপনার পিতার নাম সফিকুর রহমান চৌধুরী, সেখানে চৌধুরী আছে, কিন্তু কুরেশী নেই কেন? বারবার এইসব অপ্রত্যাশিত প্রশ্নের জবাব দান এবং দীর্ঘলিখন যন্ত্রণা কমাতে আমি সংক্ষেপে সি. আই. আর. কুরেশি নামেই নিজেকে সবসময় চালিয়ে দিতাম। এই সংক্ষিপ্ত নাম ব্যবহার করে আমি এতদিনে কোন সমস্যায় পড়িনি। তবে এখন ভোটার আই ডি তে এভাবে সংক্ষেপে নাম লিখা নিষিদ্ধ, তাই শেষবেলা এসে পূরো নাম লিখে কাজ সারতে হয়। 

আমার নামটি বাংলায় অনুবাদ করলে হয়ে যায় “চৌধুরী সদাসয় দয়ালু মেহেরবান কুরেশি’ ওরফে “প্রভাতালো বা সন্ধ্যালোক”

অবাক ব্যাপার আমার নামের এই অর্থ আমার উপর বাস্তবে খুবই কার্যকর ছিল। আমার হৃদয় এতই কোমল ও দয়ালু যে আমি কাউকে আঘাত করা দূরে থাক, কোন কটুবাক্যও বলতে পারতাম না। সারাটা জীবনভর মানুষের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা আমাকে কেবল পুড়াতো। মানুষের প্রতি যে কোন ধরনের অন্যায় অবিচার আমার কাছে ছিল অসহ্য ও ক্ষমাতীত। সবসময় আমি দুখী ও বিপদাপন্ন মানূষের পাশে দাঁড়িয়েছি। মানুষের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেছি। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে কেউ ফিরেনা খালি হাতে যদি সে আসে বিপদে পড়ে কিংবা নিজপায়ে দাড়াতে সাহায্য করার আবেদন নিয়ে এই বান্দার দরবারে। আমার অনেক কবিতা ও গদ্যলেখার উৎসও ছিল মানুষের প্রতি সীমাহীন মায়ামমতা। 

মায়ের দেখা স্বপ্নের তিনটি অর্থের একটা অর্থ সত্য হয়েছে, তা হলো পুত্র সন্থান লাভ। দেখা যাক অন্য দুটি অর্থও সত্য হয় কিনা অদূর ভবিষ্যতে। তিনিই গায়েবের খবর জানেন, যিনি রাহমানুর রাহিম।     

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন