শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আমার জন্ম সময়ের ধূসর পৃথিবীঃ

 

আমার জন্ম সময়ের ধূসর পৃথিবীঃ

১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট বৃটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশ ভেঙ্গে  পাকিস্তান ও ভারত নামক দুইটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৬৫ সালে আমার জন্মের সময় দেশটির নাম ছিল পাকিস্তান এবং তখন দেশটির শাসনক্ষমতায় ছিলেন সামরিক একনায়ক ফিল্ড মার্শাল আয়ুব খান এই লোকটি ১৯৫৮ সালে তার পুর্বসূরী আরেক স্বেচ্ছাচারী সামরিক শাসক ইসকন্দর মির্জাকে বাহুবলে অপসার করে পাকিস্তানের গদি দখল করে নেয় কিন্তু তার অপশাসনে অতীষ্ঠ হয়ে পূর্বপাকিস্তানের মানুষ এক গঅভ্যুত্থানে মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে

ইসকন্দর মির্জা ছিলেন বাংলার বিশ্বাসঘাতক নবাব মীরজাফরের অধস্তন বংশধর। সামরিক জ্যান্তা আয়ুব খান ছিলেন জাতে পাঠান, পাক সেনাবাহিনীর একজন সামান্য  জমাদারের পুত্র হয়েও যিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করে ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে পাকিস্তানের রাজসিংহাসন দখল করে নে। চাচাতো ভাই ডাঃ নজির এ চৌধুরী গোলামনবী বলতেন, একবার ঈশ্বর আয়ুব খানকে তলব করেন। আয়ুব খান দরবারে ঢুকামাত্র দাঁড়িয়ে থাকা ঈশ্বর হুড়মুড় করে চেয়ারে বসে পড়েন। আয়ুব খান চলে গেলে ফেরেশতারা ঈশ্বরের কাছে জানতে চাইলেন তিনি এমনটি কেন করলেন। ঈশ্বর জবাব দেন এই লোকটা এতই ক্ষমতালোভী ও বেয়াদব যে, আমি দাঁড়িয়ে থাকলে সে আমার আসনে বসে যেত।     

আমার জন্মবছর ১৯৬৫ সালের সেরা ঘটনা কাশ্মীর নিয়ে সংঘটিত পাক-ভারত যুদ্ধ লাহোরের কাছে পাকভারত সীমান্তে এই রক্তক্ষয়ী রণ সংঘটিত হয়। এইযুদ্ধে উভয় দেশের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হলেও ধারণা করা হয় কেউই বিজয় লাভ করতে পারে নি

১৯৬৫ সালের এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জকিগঞ্জের একজন সৈনিকের সাথে একদা আমার দেখা হয়। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এই সৈনিক বললেন, ধর্মযুদ্ধের নামে তাঁদেরকে এমনই উদ্ধিপ্ত করা হয় যে তাঁরা সম্পূর্ণ মৃত্যুভয়হীন হয়ে যান এবং আল্লাহু আকবর শ্লোগান দিয়ে ভারতীয় বাহিনীর ট্র্যাঙ্ক বহরের উপর নির্ভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন।    

বাংলাদেশের নাম তখন ছিল পুর্ব পাকিস্তান, যা ১২০০ মাইল পূর্বদিকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের একটি ছোট্ট প্রদেশ দুই পাক ভূখন্ডের মাঝখানে ছিল পাকিস্তানের চিরশত্রু রাষ্ট্র ভারত।

১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধে পাকিস্তানের সমুদয় শক্তি পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়োজিত থাকায় শত্রুবেষ্টিত পুর্ব পাকিস্তান ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত, যা বাঙ্গালিদেরকে শঙ্কায় ফেলে দেয়

তখন গতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী

আমার জন্মের পরক্ষণে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙ্গালির প্রাণের দাবি ছয়দফা আদায়ের আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। বঙ্গবন্ধুর এই ছয়দফা ছিল পশ্চিমা শোষণমুক্তি এবং পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন লাভের একমাত্র উপায়, একমাত্র পথ। বঙ্গবন্ধুর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ছয়দফা দাবি আদায়ে সমগ্র বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।      

পৃথিবী তৎকালে  পুঁজিবাদী বিশ্ব ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব, এই দুইটি বিবাদমান শিবিরে বিভক্ত ছিল  পুঁজিবাদী বিশ্বের সরদার ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের সোভিয়েত রাশিয়া তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এল. বি. জনসন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন লিওনিদ ব্রেজনেভ

ভারতবর্ষ হতে পাততাড়ি গোটানো সাবেক পরাশক্তি যুক্তরাজ্যের ১৯৬৫ সালে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হ্যারল্ড উইলসন ১৯৬৫ সালে এসিয়ার বর্তমান পরাশক্তি চীনের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লিউ সাউকিবর্তমান মুসলিম বিশ্বের নেতা সৌদি বের তখন রাজা ছিলেন ফয়সল আল সৌদ। আমার জন্মের দুই বৎসরের মধ্যে ১৯৬৭ সালে আরব ইজরায়েল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইজরায়েল তিনটি আরব রাষ্ট্র মিশর, সিরিয়া ও জর্ডানকে গুরুতরভাবে পরাজিত করে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন