শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

একনজরে সুমানবী ডাঃ নুরজাহান বেগম চৌধুরী শাহরিনঃ

 

একনজরে সুমানবী ডাঃ নুরজাহান বেগম চৌধুরী শাহরিনঃ

জনক ও জননীর একমাত্র কন্যা, তিন উচ্চশিক্ষিত ভাইয়ের একমাত্র কনিষ্ট বোন নুরজাহান বেগম চৌধুরী ১৯৬৫ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সুনামেভরা সুনামগঞ্জ শহরের উকিলপাড়ায় জন্মগ্রহ করেন। তার পিতা এনাম উদ্দিন চৌধুরী তখন সুনামগঞ্জের ফুড অফিসে চাকুরী করতেন। তার ডাকনাম শাহরিন শৈশবের চার বৎসর কাটে জলতরঙ্গের শহর সুনামগঞ্জেশৈশবের শাহরিন ছিলেন নাদুসনুদুস মেয়েশিশু। স্থুলদেহ বাবা আদর করে মেয়েকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করতেন। ভাগনারা দুষ্টামী করে বলতেন ভেটকা মামুর ভেটকা ফুড়ি। একবার সুনামগঞ্জের বাসার পাকঘরে একটি গুইসাপ ঢুকে যায়। ছোট্ট শিশু শাহরিন গুইসাপ দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে সবাইকে জড় করে ফেলেন।

পিতা এনাম উদ্দিন চৌধুরী ১৯৬৯ সালে মৌলভীবাজার বদলি হন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে তিনি চলে আসেন সৈয়দ শাহমোস্তফার পুন্যভূমি মৌলভীবাজার শহরে। এখানে মুসলিম কোয়ার্টারের এক বড় বাসায় পার হয় তার কিশোরীবেলা। বাসাটি আমি তাকে নিয়ে আমার গাড়ি ড্রাইভ করে গিয়ে দেখে আসি। একটি পুকুরওয়ালা মসজিদের ধারে প্রাচিরঘেরা বাসা। টিনের পাকাঘর, প্রচুর আম, নারকেল ও জাম্বুরা গাছের ছড়াছড়ি। হাফিজা খাতুন প্রাইমারী স্কুলে তার শিক্ষাযাত্রা শুরুহয়। প্লে ওয়ান হতে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে ফাস্ট হয়ে অধ্যয়ন করেন। এবার ভর্তি হন এই শহরের আলী আমজদ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ক্লাস ফোরে। ফাইন্যাল পরীক্ষায় প্রথম হলে ক্লাস টিচারদের নজরে পড়েন ও ক্লাস ফাইভে টেলেন্টপুল গ্রেডে বৃত্তি পান। টিচাররা ভাল ছাত্রি হিসাবে তাকে স্নেহ করতেন ও নিচের ক্লাসে পড়াতে নিয়োগ করতেন। তিনি সপ্তম শ্রেনীতে অধ্যয়নকালে পিতা এনাম উদ্দিন চৌধুরী সুনামগঞ্জ শহরে বদলী হয়ে যান।

এই বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির পাঠ অসমাপ্ত ফেলে রেখে তিনি পরিবারের সাথে তার জন্মস্থান সুনামগঞ্জে ফিরে যান এবং সুনামগঞ্জ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের একই সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এখানেও ক্লাস সমাপনী পরীক্ষায় দীর্ঘ্যদিন হতে ফাস্ট হওয়া একজন ভাল ছাত্রীকে ডিঙ্গায়ে প্রথম হন। টিচাররা কোন ছাত্রীটি ফাস্ট হল খোঁজতে গিয়ে আবিস্কার করেন কিছুদিন আগে ভর্তি হওয়া অজ্ঞাত মেয়ে নুরজাহান বেগম ফাস্টগার্ল হয়ে গেছেন।

সপ্তম শ্রেণির পাঠ সমাপ্ত হলে এবার গৃহকর্তার হবিগঞ্জ শহরে বদলির আদেশ আসে। এবার সবাই ছুটলেন সিলেটের বুনেদী শহর খোয়াইপারের হবিগঞ্জে ও এখানে এসে হবিগঞ্জ বি কে জি সি গার্লস স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এখানে নবম ও দশম শ্রেণি পড়ে ১৯৮০সালের এস এস সি (বিজ্ঞান) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গণিত ও বিজ্ঞানের সব বিষয়ে লেটারমার্ক পেয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এবার ভর্তি হন হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজে। ১৯৮২ সালের এইচ এস সি (বিজ্ঞান) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নের ছয়টি বিষয়ে লেটারমার্ক পেয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

অতি মেধাবী ছাত্রি ডাঃ নুরজাহান বেগম চৌধুরী শাহরিন ভর্তি পরীক্ষায় বুয়েট ও মেডিকেল কলেজ কলেজ এই দুইটিতেই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তবে সবার পরামর্শে মেডিকেল কলেজকেই বেছে নেন। পরবর্তীকালে তিনি বলতেন, আমার গণিতে যে অগ্নিমেধা ছিল, বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে হয়ত অনেক ভাল করতে পারতাম। তার প্রধান উপদেষ্টা মেঝভাই জামিল চৌধুরী বললেন, মেয়েদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার চেয়ে মেডিকেল পড়াই উত্তম শেষে তাই কার্যকর হল। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত অধ্যাপিকা দিলরুবার নামে প্রতিষ্টিত ‘দিলরুবা হোস্টেল’এ তার ঠাই হল। তার প্রিয় বান্ধবী বি কে জি সি গার্লস স্কুল এবং বৃন্দাবন কলেজের সহপাঠিনী হবিগঞ্জের মেয়ে ডাঃ দিলরুবা বেগম লিজু এই হোস্টেলে ছিলেন তার রুমমেট। লিজু এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপিকা। ডাঃ আফরোজা বেগম শিলা, ডাঃ জেসমিন, ডাঃ শাখাওত, ডাঃ শামিম, এম পি ইসমত চৌধুরীর কন্যা ডাঃ নাজরা, ডাঃ তৃপ্তি, ডাঃ পলি, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা ডাঃ লিপি এখানে তার সহপাঠিনী ছিলেন। ডাঃ লিপির ভাই সৈয়দ আশরাফ বাংলাদেশ আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ছিলেন। সৈয়দ আশরাফ মারা গেলে তাঁর বোন ডাঃ লিপি এই আসনের এমপি নির্বাচিত হন। আমার পত্নী ডাঃ নুরজাহান সর্বদা ডাঃ লিপির প্রশংসা করতেন। ১৯৮৯ সালে সিলেট সরকারি মেডিকেল কলেজ হতে তিনি চিকিৎসক হয়ে বেরিয়ে আসেন। তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের ২১তম ব্যচের ছাত্রী ছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন