মেঝবোন আজিজা মৌলা বেগম চৌধুরী সেহার সপরিবারে ক্যানাডা যাত্রাঃ
মেঝবোন আজিজা মৌলা সেহার জন্ম ১৯৫৯ সালের এক বর্ষাভেজা দিনে সুনামগঞ্জের সুরমার পারের কানুনগো অফিসের বাসায়। তাঁর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালের আরেক বর্ষণ সিক্ত দিনে দাউদপুর গ্রামে। আমি তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। কিছুদিন আগে আমার কানিহাটির ফুফু আজিজুন্নেছা চৌধুরী বর আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরিকে নিয়ে আমাদের দাউদপুরের বাড়িতে আসেন। ফুফু আব্বার কাছে পুরাতন কুটুমিতা সম্পর্ক নতুনভাবে আবার জ্বালাই করার প্রস্তাব দেন। তখন জালালপুর চৌধুরী বাড়ির একটি আলাপ ছিল। ফুফু খুব জুরেসুরে তাঁর ছোটভাইকে চেপে ধরেন। আব্বা অনেক ভেবেচিন্তে মত দেন। বর মুক্তিযুদ্ধা ও নেতা আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী তখন ছাতক পেপারমিলে কর্মরত। বিয়ের দিন মুষলধারে বৃষ্টি হয়। বিয়ে বাড়ি সাজানোর রঙ্গিন কাগজ ভিজে শেষ। তাই বড়পুকুরের পারে বাশবেতের বানানো গেটে রঙ্গিন কাগজের বদলে পত্রযুক্ত লিচুর ডালে সাজানো হয়। রাস্থার পলিকাদা মাড়িয়ে অনেকগুলো গাড়ি এসে গেটের বাহিরে সারিবদ্ধ হয়ে থামে। মেহমান ছিলেন সংখ্যায় অনেক। মেহমানদের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার লোকজনও ছিলেন। ঝুমঝুম বৃষ্টিতে ছাতা ছাড়া চলাফেরা যাচ্ছেনা। তখনকার যুগে বিয়ের সেন্টার কিংবা ডেকোরেটার্সের প্রচলন ছিলনা। বাংলোর সামনে বিশাল ডাইনিং প্যান্ডেল। হাত ধূয়ার জন্য ড্রাম বসানো। ঝুম বৃষ্টির পানি তেরপাল ভিজে ফোটা ফোটা হয়ে নিচে ঝরে পড়ে। বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ নেই দেখে বৃষ্টিতে খাবার চলে। সবাই কমবেশি ভিজে ভিজে খাবার সাবাড় করেন। কনেযাত্রার কান্নাকাটির মাঝে ছোটমামা শহিদ চৌধুরী কোলে করে কনেকে যখন বরের গাড়িতে তুলে দেন, তখনো অঝুর ধারায় বারিপাত হয়।
ঈদগাহ শাখায় যোগদানের কিছুদিন পরই আমার এই বোন আজিজা বেগম চৌধুরী সেহা স্থায়ীভাবে ক্যানাডা চলে যান। ক্যানাডিয়ান সিটিজেন তার দ্বিতীয় কন্যা গিনী আবেদন করে তাদেরকে সেখানে যাবার সুযোগ করে দেয়। তাদের জন্মভূমি ছেড়ে চলে যাবার সেই দিনটি ছিল বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ ২০০৬ সাল।
বীর মুক্তিযুদ্ধা এই ভগ্নিপতি আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন আমার ফুফুতো ভাই। তাঁর জন্ম ১৯৪২ সালের ২১ ডিসেম্বর কুলাউড়া উপজেলার কানিহাটি পরগনার হাজিপুর গ্রামে। তিনি লেখাপড়া করেন ঢাকা কলেজে। ছাতক শিল্পনগরীর একজন জাঁদরেল শ্রমিক নেতা হিসাবে সেখানে ছিল তার এক দাপুটে অবস্থান। আমি এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে ছাতকের পেপার মিলে সুরমাপারে তাদের বাসায় যাই। একটি বিশাল মাটের চারপাশ ঘিরে আট দশটি তিনতলা ভবন, প্রতিটি ভবনে ছিল ১২টি করে ফ্ল্যাট। একটি ভবনের দুতলার একটি ফ্ল্যাট ছিল আমার বোনের বাসা। ভাগ্নী চুন্নি ও গিন্নি তখন হাটি হাটি পা পা করা শিশু। ভাগনা মামুন তখন মামা কুদ্দুস চৌধুরীর সাহ্নিধ্যে থেকে পেপারমিল হাইস্কুলে অধ্যয়ন করত। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর পেপারমিলের মাঠে বাতি জ্বেলে চলত উৎসবমুখর খেলাধুলা। এই ক্রীড়া উৎসবের মধ্যমনি হতেন সবার প্রিয়মুখ ও নেতা আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী। তখনকার এই শ্রমিকনেতা কারখানার একজন শ্রমিক হতে শুরু করে সর্বচ্চ ব্যক্তি ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরও সব সমস্যা সমাধানের হাতিয়ারে পরিনত হন। এই কারখানায় তিনি ছিলেন একাধারে বিচারক, সংঘটক, সবরোগ নিরাময়ের কবিরাজ। অসাধারন বুদ্ধিমত্তা ও বাগ্মিতা তাকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যায়।
আমি ও মামুন
তখন অবসরে ঘুরে বেড়াতাম সুরমাপারে। নদীর এপার ঘেষে সারি সারি বাশের চালনি
দিগন্তসীমা পারহয়ে যেত। সিলেট বিভাগের অজস্র বন পাহাড় হতে আহরিত টন টন এই সারি
সারি বাশের চালনি অসংখ্য নদী নালা খাল বিল জলা বেয়ে চলে আসত এই ছাতকের সুরমাপারে।
এই বাশ ছিল পেপারমিলের খাদ্য অর্থাৎ কাগজ তৈরির কাঁচামাল। আমরা মাঝে মাঝে এই বিশাল
কারখানায় ঢুকে যন্ত্রের দানবীয় কাজকর্ম অবাক চোখে চেয়ে দেখতাম। মুহুর্তের মধ্যে
গড়গড় বিকট আওয়াজ তুলে বড়বড় বাশের স্থুপ যন্ত্রদানব গিলে খেয়ে তরল ছাতু করে বাহিরে
উগলে দিত। এই তরল ছাতুবাশ হতে বিশেষ যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত হত কাগজ তৈরীর
উপাদান মন্ড। এই মন্ড চলে যেত খুলনা পেপারমিলে এবং সেখানে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাগজে
পরিনত হত।
এই শহরের
পেপারমিলে চাকুরি করতেন আমার চাচাত ফখরু ভাই, তার
বাসায় গিয়ে ভাবীর হাতের চা পান করতাম। ছাতকের পোস্ট অফিসের প্রধান ছিলেন আরেক
চাচাত ভাই গোলাম এহিয়া কুরেশী, তার অফিস ছিল সিমেন্ট ফ্যাক্টরির কাছে নদীর ওপারে।
১৯৮১ সালে এখানে আমার জীবনের প্রথম স্পিডবোট চড়ার অভিজ্ঞতা হয়। একদিন কুদ্দুস
চৌধুরী আমাদেরকে পেপারমিলের স্পীডবোট চড়িয়ে দুইতিন মাইল দূরে এহিয়া ভাইয়ের
সুরমাপারের সরকারী বাসায় নিয়ে যান। আমার মা আসমতুন্নেছা চৌধুরীও এই প্রথম স্পিডবোট
চড়েন। আম্মা দাউদপুর ফিরে গিয়ে সেখানকার লোকজনকে দুদিকে ঢেউ ও পানির ফোয়ারা তৈরি
করে তীব্রবেগে ছুটে চলা স্পীডবোট চড়ার অভিজ্ঞতা শুনান। আম্মা যখন তার স্বচক্ষে
দেখা ছাতক-চুনারুঘাট সুউচ্চ তারপথে একের পর এক চলমান বড় বড় বালতি দিয়ে চুনাপাতর ও
লোকজন চলাচল কাহিনি বললেন তখন আমাদের গায়ের মহিলারা এসব
যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না। টাওয়ার হতে টাওয়ারে টানা এই চিকন তারলাইন ছিড়ে মানুষ
ও ভারী বালতি পড়ে গিয়ে কোন দুর্ঘটনা হয়না
শুনেও তারা বিষ্মিত হয়।
শ্রমিক নেতা
আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরীকে তার ফুফুতো বোন
জেবা রশিদ চৌধুরী পেপারমিল হতে ধরে বেঁধে এনে তাদের রশিদাবাদ চাবাগানের ম্যানেজার
করেন। তারপর এক সময় তাদের সিরাজনগর চাবাগানের ম্যানেজার থাকাকালে কুদ্দুস চৌধুরীকে
তার গ্রাম হাজিপুরের জনগন বাগান হতে ধরে এনে ইউনিয়ন পরিষদ ভোটে প্রার্থী করান।
একমাস ভোট খেলে জয়ী হয়ে তিনি কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নেরর চেয়ারম্যান হন।
এযেন আসলেন, জয় করলেন, চেয়ারম্যান হলেন। এবার ক্যানাডা হতে তার জীবনের ডাক পড়ল।
তাদেরকে বিদায় জানাতে আমার আম্মা ও আব্বা বেশ কিছুদিন আগে হাজীপুর চলে যান।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সাথে আর দুই একদিন ছুটি যুক্ত করে কানিহাটি হাজিপুরে ছুটে
গেলাম।
আমার পিতা
সফিকুর রহমান চৌধুরী ছিলেন ছোটফুফু আম্বিয়া খাতুন ছাড়া অন্যচার ফুফুর চেয়ে বয়সে
ছোট। ছোটফুফু আম্বিয়া খাতুন সত্তুরে চিরবিদায় নিলেও আল্লাহর অপার মেহেরবানীতে
অন্যচার জন ফুফু আয়ুষ্কাল নব্বুই পার করেন। ফুফুরা বুড়ো
হয়ে গেলে আব্বা কিছুদিন পরপর বোনদেরকে দেখতে তাদের বাড়িতে ছুটতেন। আব্বার সাথে
মাঝেমধ্যে আমিও ছুটতাম। বৃটিশ আমলের পনের ইঞ্চি পুরু ইটের সুউচ্চ প্রাচীর ঘেরা
হাজিপুরের প্রাচীন জমিদারবাড়ি যা আমার এই ফুফুবাড়ি হতে পরে বোনের বাড়িতে পরিণত হয়।
চেয়ারম্যান সাহের পিরেরবাজারের কাছে কয়েকটি টিলাজুড়ে বিশাল ফল বাগান করেন। সিলেট
জেলায় জন্মে এমন কোন প্রজাতির ফলবৃক্ষ এই বাগানে বাদ পড়েনি। টিলার তলায় সড়কের পাশে
তিনি একটি বিশাল বটবৃক্ষ রোপে দেন। তারপর এলাকাটির নাম হয়ে যায় চেয়ারম্যান টিলা।
আমরা
কানিহাটি আসলে এই বাগানের সব ধরনের ফলমূল এত বেশী আহরণ
করে নিয়ে আসা হত যে ফল খেয়েই উদরপুর্তী হয়ে যেত। কুদ্দুস চৌধুরীর মৎস্যখামারেও মাছের
কোন অভাব ছিলনা। ফুফু আজিজুন্নেছা তার চেয়ারম্যান ও ম্যানেজার পূত্রকে ডাকনাম ধরে
ডাকতেন শইয়ুব। কুদ্দুস চৌধুরীর অগ্রজ মুকিত ভাই বাড়িতে বেকার দিন কাটাতেন। তিনি
সারাদিন লোকজনের সাথে অনর্থক চিল্লাচিল্লি করতেন, তবে ছোটভাই চেয়ারম্যান কুদ্দুস
চৌধুরী বাড়িতে অবস্থান করলে নিশ্চুপ হয়ে যেতেন। পাশের চাচাত জদিদ ভাই ছিলেন চেয়ারম্যান
সাহেবের একজন মন্ত্রণাদাতা ও বিশ্বস্ত
সহচর।
কুলাউড়া ও
কানিহাটি অঞ্চলে কুদ্দুস চৌধুরীর বিদেশ যাত্রাকে উপলক্ষ্য করে এলাকায় এক শোকাবহ
অবস্থার সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী একটার পর একটা গনসম্বর্ধণার আয়োজন করেন।
আমি একরাতে পাইকপাড়া গ্রামের কানিহাটি উচ্চবিদ্যালয় এবং পরদিন হাজীপুর বালিকা
বিদ্যালয়ে তার বিদায় সম্বর্ধণা সভায়
উপস্থিত ছিলাম। সভাশেষে বিষন্ন মনে অজস্র মানুষ তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। ২৫ মার্চ
২০০৬ সাল, জীবনের এক সুদীর্ঘ্য কালের স্মৃতির প্রচ্ছায়া পিছনে ফেলে হাজিপুর পল্লীর
জনগনের নেতা আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী জন্মভূমি হাজিপুরকে গুড বাই জানিয়ে সপরিবারে
গাড়িতে চেপে বসলেন। সেইসাথে মা বাবা ছোটভাই ও বেগমকে
নিয়ে আমার লাল কারটির চালকের আসনে বসে স্টার্ট দিলাম সিলেটের পথে।
কয়েক বৎসর পর সপরিবারে হাজিপুর যাবার আবার সৌভাগ্য হয়। জিন বিজ্ঞানী ডঃ আবেদ চৌধুরীর বোন দিলারা আপা একদিন ফোন করে আমার গিন্নীকে বললেন, আমি বাড়িতে একটি মেডিকেল ক্যাম্প করছি তোমাদেরকে আসতে হবে। দিলারা আপার সিরাজনগর চাবাগানে আমরা অনেক অনেক আনন্দঘন দিন কাটিয়েছি। কাজেই না গিয়ে কি উপায় আছে। আমার বেগমের খালাত বোনের পুত্র হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আব্দুল গনী চৌধুরীকে নিয়ে একদিন আমরা ছুটে গেলাম হাজিপুর। সারাদিন অনেক অনেক রোগী দেখে দাতব্য ঔষধ ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে একটি সফল মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করে রাতে ফিরে এলাম সিলেট শহরে।
২০০৬ সাল
ছিল আমার একটি সৌভাগ্যের বছর। এই বছর ১লা মার্চ আমি প্রথম ব্যবস্থাপক হই।
ব্যবস্থাপক হবার কিছুদিন পরই হাতে আসে প্রমোশন লেটার। সিনিয়র অফিসার থেকে হলাম
প্রিন্সিপাল অফিসার, তাও আবার কার্যকর হয় তিনচার মাস আগের ১লা জানুয়ারি ২০০৬ হতে।
সিলেটের প্রমোশন পাওয়া সব প্রিন্সিপাল অফিসার মিলে সিলেটের একটি হোটেলে শুভাকাঙ্খীদের
জন্য ভোজের আমন্ত্রণ জানাই। এই ভোজসভায় আঞ্চলিক প্রধান আব্দুল করিম চৌধুরী, মোঃ
মোসাদ্দিক চৌধুরী, ফরিদ উদ্দিন স্যার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
৩০ জুন
২০০৬ শাখার লাভ হল লক্ষ্যমাত্রার দুইগুণ, ফলে পুরস্কার স্বরূপ পেয়ে গেলাম ১টি
স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট। ৩১শে ডিসেম্বর ২০০৬ শাখার লাভ লক্ষ্যমাত্রার তিনগুন পেরিয়ে
গেল। আবার পুরস্কার পেলাম আর ২টি স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট। ২০০৭ সালের
১লা জানুয়ারিতে হিসাব কষে দেখলাম মোঠ ৪টি ইনক্রিমেন্ট যুক্তহয়ে আমার বেতন উদ্ধপদ
এস পি ও এর বেতনসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে। ভাবলাম, আমি একজন পি ও হয়েও বেতনে উপরের পদ এস
পি ও তে উত্তীর্ণ হয়ে গেছি। এই বছর আমার বাসার ল্যান্ডফোনের বিল পরিশোধের
দায়িত্বভারও পুবালী ব্যাংক গ্রহণ করে নেয়।
২০০৬ সালে
ব্যাংকের প্রশিক্ষণে আমাকে দুইবার ঢাকা যেতে হয়। তখন Pobali Bank
Training Institute ছিল
দিলকুশার প্রধান কার্যালয়ের ১২ তলায়। এখানে ৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ সালে ‘Manager
and his job’ অন্য কোন এক সময় ‘Credit
risk greding’ শিরনামের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করি।
এই বৎসরটিতে
আমার আম্মা আব্বা প্রায়ই আমার বাসায় অবস্থান করতেন। মা বাবাকে দেখতে সব সময়
আত্মীয়রা আসতেন, ফলে বাসায় সর্বদা একটা উৎসবমুখর অবস্থা লেগে থাকত।
ডিসেম্বর ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র হতে আমার তিনজন মামা সপরিবারে দেশে আসেন। তারা
আমার বাসায় উঠেন। আমার দুই খালাও এসে বাসায় জড় হন। মেহমানে বাসা সরগরম হয়ে উঠে।
মেহমানদের সেবাযত্ন করতে নানাবাড়ি হতে আসেন শমী, ছামিনা, হাসমতি ঝি ও শুয়াই ঝি।
বহুদিন পর
আপনজনদেরকে কাছে পেয়ে আমার আম্মা আসমতুন্নেছা চৌধুরীর সে কি আনন্দ। কার চালিয়ে
শীতের কুয়াশাঝরা ভোরে হাঁটতে আমরা চলে যেতাম কাছের তারাপুর কিংবা আলীবাহার
চাবাগানে। একদিন সকালবেলা আলীবাহার চাবাগানের বড়দিঘির
সুরম্য ছাউনিঘেরা ঘাটে বসে মেঝমামা বললেন, এই জায়গাটা এতই সুন্দর ও বৈচিত্রময় যে
এটি যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন উদ্যানকে হারিয়ে দিবে। তখন দিঘির
উপর দিয়ে উড়ে এসে চিলেরা মাছ ধরতে পানিতে ছোবল
মারছিল। মাছের ঝাঁক চিলের
ছায়া দেখে ভয়ে জলের উপরিতলে লেজের ঝাপটা মেরে জলের গভীরে চলে যেত। এযেন
চিলে আর মাছে চোর পুলিশের লুকোচুরি খেলা। দিঘির
কিনারা ঘেষে একহাঁটু জলে কয়েকটি বক ঠায় দাড়িয়ে ছিল মিন
শিকারের তপস্যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন