শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

শ্বাশুড়িমা মলিকা খাতুন চৌধুরীর চিরবিদায়ঃ

 

শ্বাশুড়িমা মলিকা খাতুন চৌধুরীর চিরবিদায়ঃ

আমার শ্বশুরের পরলোক গমনের ঠিক ৩০ দিন পর ০৩০৩২০০৩ ইং তারিখে আমার শ্বাশুড়ি হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সুদীর্ঘ্য এক বৎসর তিনি রুগ্ন স্বামী সেবায় কঠোর পরিশ্রম করেন। পতিসেবায় তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ মহিলা। তিনি সারাদিন কোরান তেলাওত করতেন ও তসবিহ পাঠে নিমগ্ন থাকতেন। খুব ভাল রান্নাবান্না করতে পারতেন তিনি। সেদিন অফিস হতে বাসায় ফিরে আমি আর কোথাও বের হইনি। মাগরিবের নামাজের আগে রান্নাবান্না শেষ করে তিনি কোরান তেলাওতে বসে পড়েন। তাকে দেখে তখন আমার খুব প্রশান্ত মনে হল। সেইদিন ডাঃ নুরজাহান ডেলিভারী রোগী নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত ছিলেন এবং রাত ১০টা নাগাদ তিনি হাসপাতাল হতে বাসায় ফিরেন।

খাওয়া দাওয়া শেষকরে রাত ১১টা নাগাদ আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। আমার শ্বাশুড়িমার কক্ষে ঘুমাত কাজের মেয়ে জরি। হঠাৎ জরি আমাদেরকে ডেকে বলে নানি ভীষণ অশান্তি করছেন। এসে আমরা দেখতে পাই তার শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমরা ঘরে রাখা অক্সিজেন মাক্সে তাকে অক্সিজেন দেই। তার দম যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, চেহারাও কেমন যেন নীলবর্ণ ধারন করে। আমি বাহিরে রাখা কার স্টার্ট দিলাম। পাশের ফ্লাটের আমাদের প্রিয় কালো খালাম্মা ছুটে আসেন। আমরা সবাই মিলে রোগীকে কারের পিছনের সিটে শোয়ায়ে একদিকে কালো খালাম্মা ও অন্যদিকে ডাঃ নুরজাহান বসলেন। তখন তিনি ভীষন ছটফট করছিলেন। ডাঃ নুরজাহানের অন্যতম কর্মক্ষেত্র সেফওয়ে হাসপাতালে গাড়ি নিয়ে ছুটলাম। চিরচেনা এই হাসপাতালের লোকজন ট্রেচার নিয়ে দৌড়ে আসেন। তাকে সবাই ধরাধরি করে ট্রেচারে তুলে হাসপাতালে ঢুকালএবার ডিউটি ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে বললেন তার প্রানবায়ু ইতিমধ্যে নিঃশেষ হয়ে গেছে। আসলে আমরা হাসপাতালে আসার পথে মধুশহীদ(রঃ) মাজারের পাশেই তিনি শেষ-নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তখন তার বয়স ছিল প্রায় একাত্তুর বছর

মৃত্যুর পরদিন বাদ আসর শাহজালালের দরগা মসজিদের পিছনে তাকে তার স্বামী এনাম উদ্দিন চৌধুরীর কবরের বামপাশে দাফন করা হল। তাকেও কবরের শেষশয্যায় শোয়ানোর কাজটি করার সৌভাগ্য আল্লাহ আমাকে দিয়ে সম্পন্ন করান।  

আমার শ্বাশুড়িমা ছিলেন একজন আদর্শ মা, একজন পতিপরায়না স্ত্রী, একজন দানশীলা পরোপকারী মহিলা। আমি তাকে কোনদিন কার বদনাম করতে শুনিনি। তিনি ছিলেন একজন আল্পে সন্তুষ্ট রমণী, তার ছেলে মেয়েদের কাছেও তিনি কোনদিন কিছু চাইতেন না। তারা যেচে কিছু দিলে খুশি হয়ে গ্রহন করতেন। তার মৃত্যুর পর ডাঃ নুরজাহান কেঁদে কেঁদে বললেন, মাগো, আজ মরনের রাতেও তুমি নিজহাতে রান্না করে আমাদেরকে খাইয়ে দাইয়ে চলে গেলে। মাত্র একমাসের ব্যবধানে ডাঃ নুরজাহান বেগম তার মাবাবা দুজনকে হারিয়ে তীব্র মনকষ্টে এই পুরো বছরটাই হাহাকার করে অতিবাহিত করেন। প্রতিদিন সকালে ঘুম হতে উঠে আহাজারি ও কান্নাকাটি করতেন।

শত দুঃখ যন্ত্রনার মাঝেও প্রতি বছর কোন না কোন শুভ সংবাদ আমাকে উদ্দীপ্ত করত। চাকুরিরত মানুষের একটা প্রধান উদ্দেশ্য থাকে প্রমোশন। আমার ব্যাংকের চাকুরীটা খুব একটা উল্লেখ করার মত কিছু না হলেও প্রমোশন আমাকে আকাশছুঁয়া আনন্দ দিত। ১লা জুলাই ২০০২ সালে আমি সিনিয়র অফিসারে পদোন্নতি পাই এবং পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধবকে মিষ্টিমুখ করাই। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন