বরইকান্দি শাখা হতে মাধবকুন্ড, লালাখাল, রাতারগুল এবং শ্রীমংল-কমলগঞ্জ-মাধবপুর লেক ভ্রমন ও বনভোজনঃ
বরইকান্দি শাখায় আমি প্রচুর ঋন
প্রদান করি। এই ঋণসমূহের বিমাকরন ছিল বাধ্যতামূলক। এই বিমাসমুহ হতে প্রচুর কমিশন
আসত। আমরা নৈতিকতার দোহাই দিয়ে যদি এই কমিশন গ্রহন না করি তাহলে ইন্সুরেন্স কোম্পানীর
লোকজন এই টাকা তুলে মেরে দেবে। তাই এই কমিশন গ্রহন না করা বোকামী ছাড়া কিছু নয়। অফিস
চালাতে কিছু অযাচিত খরচ এসে যেত তা ফান্ডে রাখা এই বিমা কমিশনের টাকা, এমন কি
নিজের পকেটের টাকা ডেলেও মাঝে মধ্যে সামাল দিতে হত। বিমার কমিশনের জমানো টাকার
সাথে কিছু চাঁদা সংগ্রহ করে আমরা ফান্ড তৈরী করতাম এবং প্রতিবৎসর শাখার সবাই মিলে
বাস ভাড়া করে বেড়াতে বের হতাম।
গ্রীষ্মকালের এক আদ্রউষ্ণ ছুটির
দিনে আমরা মাধবকুন্ডে যাই। আমিনুল হক আমাদের কাস্টমারের নিকট হতে একটি বাস ভাড়া
করেন। বিরিয়ানী ও গোসলের কাপড় সাথে নেই। কাদির সাহেব, লিলু বাবু, জাহেদ ও ব্যাংকের
সব চাকুরীজীবীরা বাসে রওয়ানা হই। আমার পত্নী অসুস্থ থাকায় সে যাত্রায় আমাদের সাথে
যাননি তবে পুত্র জেফার সঙ্গি হয়েছিল। তখন বর্ষাকাল হওয়ায় কুন্ডের জলপ্রপাতে পানির
প্রবল বেগ ছিল। আমরা দীর্ঘ্য সময় সাতার কাটি, গোসল করি। কুন্ডের শীতল কোয়াশা কনার
ভিতর আমরা ঘুরে বেড়ালাম। অনেকদিন পর মাধবকুন্ড যাই। বাংলাদেশ পর্যটন বিভাগ এখানে
মাধবকুন্ড ইকোপার্ক ও রেস্টহাউস নির্মাণ করেছে। তারা একটি ছড়ার প্রান্তে পাকা বাধ
দিয়ে মাধবকুন্ডে বেশ সুন্দর একটি জলাধার নির্মান করেছে। এই জলাধারে প্রায় তিনশত
ফুট উচু শিলার পাহাড় হতে জলপ্রপাতের জলধারা তীব্র নিনাদে ঝরে পরছে। পাকা বাঁধের
উপর দিয়ে প্রবাহমান পানিতে শোয়ে বসে আমরা বেশ আনন্দ উপভোগ করি। একদিকে পাহাড়ের
ছায়ায় পাতরে বসে খাবার খাই, ওপরের মন্দির ঘুরে দেখি।
মনেপড়ে কোন এক শীতে আমরা
শ্রীমঙ্গল লাউয়াছড়া ও কমলগঞ্জের মাধবপুর লেক ভ্রমন করি। সহকর্মিনী সুলতানা রাজিয়া আমাদেরকে
তার ফেন্সুগঞ্জের নুরপুর গ্রামের বাড়িতে সকালের নাস্তার দাওয়াত করেন। আমরা সাত
সকালে রওয়ানা হয়ে কুশিয়ারা সেতু পার হয়ে কয়েস চৌধুরী এমপির বাড়ি ফেঞ্ছুগঞ্জের
নুরপুর পৌছলাম। এমপির বাড়ি পার হয়ে রাস্থার পুর্বদিকে সুলতানা রাজিয়ার সেমি
টিলাবাড়ি, টিনের পাকাঘর। চারপাশে বর্ষার পানি থৈ থৈ করছে। রাজিয়া বললেন তিনি বাল্যকালে
এই জলে নৌকা বাইতেন। দূরে জলহাওয়রের ওপারে বেশ কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের আলো
দেখা যাচ্ছে। রাজিয়ার বৃদ্ধ মা বাবা আমাদেরকে বেশ মজা করে আখনি পোলাও পরিবেশন
করলেন। এবার আমরা সোজা শ্রীমঙ্গল ছুটে গেলাম। সহকর্মী জহিরুল হক চৌধুরী আমাদেরকে
জেমস ফিনলের একটি বাগানে নিয়ে যান। সেখানে তার একজন মামার বাসায় আমরা চানাস্তা
করলাম। এবার লাউয়াছড়া, চা বোর্ড দেখে কমলগঞ্জ মাধবপুর লেকে গিয়ে হাজির হলাম।
লেকপারের সুউচ্চ মাঠে আমরা দু দলে ভাগ হয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করি। আমার
পুত্র জেফার এই খেলা খুব উপভোগ করে।
মাধবকুন্ড ও শ্রীমঙ্গল অনেকবার
গিয়েছি কিন্তু লালাখাল ও রাতারগুল জলাবনে ইতিপূর্বে কোনদিন যাইনি। লালাখাল যাবার
জন্য আমরা বাসভাড়া করে তামাবিল সড়কদিয়ে দরবস্ত পার হয়ে সারিঘাট যাই। সারিঘাটে নেমে
একটি বড় ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করি। নৌকাটি সারি নদীর উজান বেয়ে পুর্ব দিকে অগ্রসর হয়।
সারি একটি সুন্দর পাহাড়ি নদী, দুইপারে গাংচিল উড়াউড়ি করছে। এক সময় নদীতীরে
নবনির্মিত নাজিমগড় রিসোর্টের পাশ দিয়ে যাই। দুইতিন ঘন্টা পর এবার লালাখাল চাবাগানে
নৌকা প্রবেশ করে। সামনে সারিসারি পাহাড় নদীর উজান বেয়ে ভারতের সুউচ্চ পাহাড়ের মেঘালয়া
রাজ্যে চলে গেছে। এখানে পাহাড় নদীর দৃশ্য নয়নাবিরাম। পানি টলটলে নীল, নিচে মাছের
বিচরন পরিস্কার দেখা যায়। নদীতে কোমর কিংবা হাটু জল, কলকল করে বইছে। রিসোর্টের
বাসিন্দারা ছোট ছোট নৌকা চড়ে জলকেলী করছেন। আমরা সবাই জলে নেমে ইচ্ছেমত জল
ছিটাছিটি ও গোসল করি। এই নদীর জল এতই স্বচ্ছ যে কোন ময়লার চিহ্নমাত্র নেই। স্নান
শেষে আমার বেগম, জেফার ও আমি ঘাসে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ি। এবার আমরা সবাই চাবাগানের
ছায়াবৃক্ষের ছায়ায় গোল হয়ে বসে সাথে করে নিয়ে যাওয়া খাবার ফুর্তি করে খেয়ে নিলাম। সেই
দিনটি আমরা বেশ আনন্দে পার করি। এখানেও দুদলে ভাগ হয়ে আমরা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন
করি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন