শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ডাঃ নুরজাহান বেগম চৌধুরীর আলট্রাসনোগ্রাম শিখার ইতিকথাঃ

 

ডাঃ নুরজাহান বেগম চৌধুরীর আলট্রাসনোগ্রাম শিখার ইতিকথাঃ

১৯৯৮ সালে আমার পত্নী ডাঃ নুরজাহান বেগম চৌধুরী আলট্রাসনোগ্রাম শিখার সিন্ধান্ত নেন। তিনি সিলেট মেডিকেল কলেজের পরমানু চিকিৎসা কেন্দ্রে শিখতে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা কোন সহযোগিতাই করেনি বরং চরম বিরাগভাব প্রদর্শন করে। তাদের এই ঘৃন্য আচরনে তার  মনে আলট্রাসনোগ্রাম শেখার একটা শক্ত জেদ চেপে বসে।

এবার ডাঃ নুরজাহান ঢাকার ইষ্টার্ন প্লাজার সাততলায় স্থাপিত বাংলাদেশ আলট্রাসনোগ্রাফি সোসাইটির ট্রেইনিং সেন্টারে পঞ্চান্ন হাজার টাকা টিউশন ফি পরিশোধ করে ভর্তি হন। তিন মাসের কোর্স, জুলাই হতে সেপ্টেম্বর ১৯৯৮এখানে সহপাঠী হিসাবে সিলেট মেডিকেল কলেজের সহপাঠিনী ডাঃ পলি এবং মেডিকেল কলেজের শিক্ষক অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল খালিক স্যারের পুত্রবধু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ খালেদ মহসিনের সহধর্মিনীর সান্নিধ্য লাভ করেনতিনি দেড় বছরের শিশু জেফারকে নিয়ে তিনমাসের জন্য তার ছোট ভাইয়ের ধানমন্ডির বাসায় পাড়ি জমান। জেফার তখন বাসার সামনের আঙ্গিনায় ছোট ছোট পা ফেলে হেটে বেড়াত। প্রতিদিন তাকে বাহিরে খেলায় ব্যস্ত রেখে সংগোপনে ইষ্টার্ন প্লাজায় দুই তিন ঘন্টার জন্য চলে যেতে হত। সে টের পেলেই কান্না শুরু করত। অবুঝ শিশুটি প্রতিদিন এমনই কাঁদত, হয়ত ভাবত তার মা যদি হারিয়ে যান।

একদিন ডাঃ নুরজাহান বাসায় ছিলেন না। জেফার একটি দুধের টিন নিয়ে খেলছিল। তার মামাত বোন আলমা খেলনা টিনটি সরিয়ে নিলে সে কেঁদে উঠে নীল হয়ে যায়অনেক পর সবাইকে হতচকিত করে তার নিঃশ্বাস ফিরে আসে। সিলেটের পর এটি তার এধরনের দ্বিতীয় ঘটনা। এবার তাকে ডাক্তার দেখান হল। চিকিৎসকরা বললেন তার কোন সমস্যা নেই। তারা বললেন সে একটু জেদি স্বভাবের শিশু, তাই তাকে কেবল তার ইচ্ছে মত চলতে দিতে হবে, কোনমতেই চটানো যাবেনা। সিলেটের তুলনায় তখন ঢাকায় ছিল প্রচন্ড গরম। বাসায় অতিথি কক্ষে এসি ছিলনা, মেঘলাভেজা আবহাওয়ায় ভাপসা গরমে ঢাকায় শিশু জেফারের বেশ কষ্ট হয়।

আমি ছুটি হলে ঢাকায় গিয়ে বেগম ও পুত্রকে দেখে আসতাম। ছোটভাবী খুব ভাল চাইনিজ রাঁধতে পারতেন। তিনি প্রায়ই রাতে চাইনিজ খাবার তৈরী করে পরিবেশন করতেন। আমরা গোলশানের হেলভেসিয়া হোটেলে রাতে আমেরিকান খাবার খেয়ে আসতাম। রাত বারটায় ঢাকার যানজট কমে গেলে আরিক, আলমা, ভাই, ভাবী ও আমরা বড়গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গোলশান বনানীসহ সারাটা রাজধানী শহর ঘুরে আসতাম।

এক সময় তিনমাসের আল্ট্রাসনোগ্রাফি শিক্ষাকোর্স সমাপ্ত হল। পরীক্ষার উত্তরপত্র আমেরিকান ক্যালচারেল সেন্টারের মাধ্যমে চলে যায় যুক্তরাষ্টের ফিলাডেলফিয়া শহরের জেফারসন আল্ট্রাসাউন্ড রিসার্স এন্ড এনালাইসিস ইন্সটিটিউটে। এই ইন্সটিটিউট হতে  শিক্ষাকোর্স সমাপ্তি সনদপত্র যথা সময়ে হাতে এসে গেল।

সনদপত্র বিতরন উপলক্ষে বাংলাদেশ আলট্রাসনোগ্রাফি সোসাইটি রাজধানীর হোটেল পুর্বানীতে এক জমকালো অনুষ্টানের আয়োজন করেন। এই অনুষ্টানে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে অনেক সনোলজিষ্ট যোগদান করেন। রাফেল ড্র অনুষ্টিত হয়। আমরা লটারি জেতে একটি ছাতি পাই। এটি আমার জীবনের প্রথম লটারি জেতার ঘটনা। তারপর বিখ্যাত গায়িকা শাম্মি আক্তারের একক সঙ্গীতসন্ধ্যা হয়। তিনি তার গাওয়া স্মরণীয় সব জনপ্রিয় গান একে একে পরিবেশন করেন। অনেক আনন্দফুর্তি শেষে ডিনার করে গভীর রাতে ধানমন্ডির বাসায় ফিরে আসি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন