সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

দিয়েছেন আল্লাহ, নিয়েছেন আল্লাহ- তাতে আমার কি

 

দিয়েছেন আল্লাহ, নিয়েছেন আল্লাহ- তাতে আমার কি

আমি হজে গমনকালে মনে হল একটি ফরজ পূন্যকাজে যাচ্ছি। কাজেই কিছুটাকা শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ করে যাই। আল্লাহর মর্জিতে হয়ত প্রচুর লাভ হবে। টাকার এমাউন্টটা ছয়সাত লক্ষ হবে। আমি খুব সাবধানী বিনিয়োগকারী, আল্লাহর অপার মেহেরবানীতে আমি ধরা খাই অল্পসল্প, লাভ করিই বেশী। কিন্তু এবার আমি নিজে বিনিয়োগ না করে অন্য একজনকে বিনিয়োগের পুর্ণ ক্ষমতা দিয়ে গেলাম। ভাবটা এমন আমি আল্লাহর বাড়ি যাচ্ছি, তাই লাভ না হয়ে কি আর উপায় আছে। ভদ্রলোক কিনলেন আর এন স্পিনিং মিল ও আর কি একটি ভুইফুড় কোম্পেনীর শেয়ার। ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর মক্কা হতে ঢাকায় নেমেই বুঝতে পারি শেয়ারবাজারে বড় ধরণের ধ্বস নেমেছে। বিও হিসাব পরীক্ষা করে দেখি আমার সদ্য বিনিয়োগ করা টাকার প্রায় এক তৃতীয়াংশই নাই হয়ে গেছে। এবার ভূলটা বুঝলাম, এভাবে না বুঝে শুনে অন্যের মাধ্যমে আবেগতাড়িত হয়ে বিনিয়োগ করা আমার আদৌ ঠিক হয় নি। কারন আল্লাহ আমাদেরকে এই মূল্যবান মস্তিস্ক দিয়েছেন বুঝেশুনে বিচার বিশ্লেষণ করে কাজ করার জন্য, এখানে আবেগের কোন মূল্য নেই।

একদিন সাঘরদিঘিরপারের মসজিদে জুমুয়ার নামাজে যাই। সেখানে খতিব সাহেব ইসলামের চার ইমামের একজন হজরত আবু হানিফার একটি গল্প শুনালেন। ইমাম আবু হানিফা কাপড়ের ব্যবসা করতেন, একবার তিনি ছাত্রবেষ্টিত হয়ে ওয়াজ করছিলেন। এমন সময় খবর আসে জাহাজ ডুবে তার প্রচুর কাপড় সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। খবর শুনার একটু পর অবিচলিত ঈমাম আবু হানিফা বলে উঠেন আলহামদুলিল্লাহ। লোকজন অবাক হল, হুজুরের এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল আর তিনি মহান আল্লাহের শোকর আদায় করে বলছেন আলহামদুলিল্লাহ।  একটু পর আবার খবর আসল ডুবেছে অন্য একটি জাহাজ, সেটি হজরত আবু হানিফার কাপড় বুঝাই জাহাজ নয়। তার কাপড়ের জাহাজটি নিরাপদে বন্দরে ভিড়েছে। এবারও হজরত আবু হানিফা বলে উঠলেন সেই একই শব্দ আলহামদুলিল্লাহ। বিস্ময়ে হতবাক মানুষ হুজুরের কাছে জানতে চাইল হুজুর শেষের বার শুভ সংবাদে আপনি আল্লাহর শোকর করেছেন ঠিকই কিন্তু প্রথমবারের দুঃসংবাদের খবর শুনে কেন আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলেন? আবু হানিফা জবাব দিলেন, দুসরা বার শোকরিয়া আদায় করলাম এই কারনে আমার জাহাজ ডুবেনি, নিরাপদে বন্দরে ভেড়ার শুভ সংবাদে। আর প্রথমবার আলহামদুলিল্লাহ বলি এই কারনে যে, এত বড় বিপর্যয়ের খবর শুনেও আমার মনে কোন দুশ্চিন্তা আসেনি। এবার ইমাম বললেন একদিন আমার কিছুই ছিলনা। শুন্য হতেই আল্লাহ আমাকে এতকিছু দিয়েছেন। তার এতকিছু দান হতে তিনি একজাহাজ কাপড় নিয়েছেন, যা তার দানের এক সামান্য অংশ বিশেষ মাত্র।

খতিবের এই ওয়াজ শুনে তখন আমার মনে হল আসলেইতো তাই। ১৯৯৫ সালে দাউদপুর গ্রাম ছেড়ে আমি সিলেট শহরে আসি শূন্য হাতে। এই শূন্যহাতে আল্লাহ আমাকে আজ এত এত নিয়ামত দিয়েছেন। সেই তুলনায় এই ক্ষতি তেমন কিছুই নয়। তখনই মনে মনে বললাম- শোকর আলহামদুলিল্লাহ, দিয়েছেন আল্লাহ, নিয়েছেন আল্লাহ- তাতে আমার কি? আমি মহান আল্লার উপর নির্ভর করলাম, তার করুণার অপেক্ষায় চেয়ে রইলাম।

ব্যবসায় যেখানে আমাকে লস দিয়েই বেরুতে হবে সেখানে আমি সবচেয়ে কম লসে বেরুনোর পরিকল্পনা করি। পরবর্তী সময় আমি খুব অল্প লস গুনেই এই বিপর্যয় হতে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হই।

২০১১ সালের জুলাই মাসে একদিন সিলেট আঞ্চল প্রধান মোসাদ্দিক চৌধুরীর চেম্বারে গিয়ে স্যারকে বললাম, তিন ও চার তলার কাজ করতে গিয়ে আমার অনেক ধারকর্জ হয়ে গেছে। দ্বিতীয়বার আমাকে গৃহঋণ প্রদান করা হলে আমি ঋণমুক্ত হতে পারব। স্যার তখনই বললেন, কুরেশী সাহেব আপনি এখনি একটি গৃহঋণ প্রস্থাব তৈরী করে পাঠিয়ে দিন। এবার আগের গৃহঋণের স্থিতি ‘জিরো’ করে আর ১২,৩০,০০০/= টাকা মাত্র ৬% সরল সুদে পেয়ে গেলাম। আসলে তখন আমার তেমন কোন ধারকর্জ ছিল না। আমি এই পুরো টাকা দিয়ে বাজারে দাম কমলেই একটু একটু করে স্কয়ারফার্মার শেয়ার কিনতাম। এভাবে কয়েকবারে কেনা স্কয়ারফার্মার শেয়ারের দাম আল্লাহের অপার মেহেরবানীতে পরবর্তী কয়েক বছরে কয়েকগুন বেড়ে যায়। একটা বড় বিপর্যয়ের পরও আমি সাহস করে এই ঋণের টাকা স্কয়ারফার্মার শেয়ারে ঢুকাই, কিন্তু এবার না হেরে সফল হই। জীবনটা এক হারজিতের খেলার মাঠ। একবার খানিক হারলাম তো কি হয়েছে, পরেই আমি আবার বিজয়ী হলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন