সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

গরিবের ঘরে হাতির পা

 

গরিবের ঘরে হাতির পা

আমি পবিত্র হজ পালন করে ফিরে আসার কিছুদিনের মধ্যেই আমার শাখায় পদচিহ্ন রাখেন ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঋষিতুল্য ব্যক্তিত্ব মান্যবর হেলাল আহমদ চৌধুরী। ব্যাংকে ডুকেই পূবালী ব্যাংক ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের সুবাদে আমি স্যারের একজন একনিষ্ট শিষ্যে পরিনত হই। স্যার ক্লাস নিতেন, আমরা ধ্যানমগ্ন হয়ে স্যারের বক্তব্য শুনতাম। স্যারের আমলে আমি খুব সাচ্ছন্দে কাজ করেছি। পেয়েছি দুইবার প্রমোশন, দুইবার শ্রেষ্ট ব্যবস্থাপক ক্রেষ্ট ও স্টাফ গৃহনির্মান ঋন। ব্যাংকের এক ক্ষুদ্র সওয়ারি আমার গতি তিনি কখনো থামিয়ে দেননি। ফলে আমি ব্যাংককে যেমন সাধ্যমত দিয়েছি, তেমনি পেয়েছিও কোন অংশে কম নয়। তাই এই ঋষিতুল্য স্যারের কাছে আমার কৃতঞ্জতার কোন শেষ নেই।

আঞ্চলিক প্রধান মোঃ মোসাদ্দিক চৌধুরী ফোনে আমাকে স্যারের আগমনের তারিখ জানিয়ে দেন। ১৯৭৮ সালের ১লা জানুয়ারী এই বরইকান্দি শাখার প্রথম ও প্রতিষ্টাতা ব্যবস্থাপক ছিলেন আজকের ব্যাংকের সম্মানিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী। স্যার সব সময়ই প্রথম, তিনি বিসিএস পাস করে যোগদেন তৎকালীন সরকারি পূবালী ব্যাংকে। বরইকান্দি তার স্মৃতি বিজড়িত স্থান। আমি সিন্ধান্ত নিলাম, তার স্মৃতি বিজড়িত স্থানে স্যারকে উপযুক্ত সম্মান জানাতে আমাদের যেন কোন ক্রুটি না থাকে।  

তখন শাখাটির অবস্থা করুন, যেন একটি বদ্ধ গোদাম। আমি পূরো শাখায় সীমিত আকারে ওয়াল কালার করলাম, ধুয়ে মুছে যতটুকু সম্ভব পরিস্কার করে ফেললাম। ভাল টিসেট, ডিনারসেট সব আমার লালকারে করে বাসা হতে অফিসে নিয়ে আসলাম। এমনকি একটি বড় ফ্লাক্সে  চা করেও নিয়ে আসলাম। চারজন গার্ডকে কিভাবে সালাম দিতে হবে ব্রিফ করলাম। এমডি মহোদয় তার চাকুরি জীবনের সুচনাকালের এই শাখায় এসে ভাল সম্বর্ধনা পান। হজ্জ করে মক্কা হতে কেনা একটি জায়নামাজ স্যারের হাতে দিয়ে বললাম, স্যার এটা কাবাঘরের আঙ্গিনা হতে আপনার জন্য কিনে এনেছি। স্যার বললেন আপনি কি হজ্জ করে এসেছেন? আমি কিন্তু কোন শাখা ভিজিটে গেলে কোন ধরনের উপহার গ্রহন করি না। অবশ্য অঞ্চল প্রধান মোসাদ্দিক স্যার জায়নামাজটি স্যারের গাড়িতে তুলে দেন, স্যার আমার এই সামান্য উপহার গ্রহন করে আমাকে ধন্যই করলেন। ফেলে গেলে আমি খানিক অপদস্তই হয়ে যেতাম। 

এম ডি হেলাল স্যারের শাহিপায়ের চিহ্ন পড়ামাত্র শাখাটিরও ভাগ্য বদলে গেল। ঢাকায় ফিরে গিয়েই স্যার ব্যাংকের ইঞ্জিনিয়ার টিম পাঠান। শাখায় কয়েক লক্ষ টাকার রিনোভেশন কাজ আরম্ভ হয়, এসি লাগল, এটিএন বুথ হল, উন্নত বাথরূম হল, উন্নত টালী লাগল, ছাদ হল, শাখাটি সিলেট শহরের সেরা অফিসে পরিণত হল। সুলতানা রাজিয়া ও জাহারাত রিশাত স্যারকে সুন্দরভাবে আপ্যায়ন করলেন। গরিবের ঘরে যেই না সম্রাটের পা পড়ল, অমনি বদলে গেল এই গরিবালয়। কাস্টমাররা এসে ধন্যবাদ দিল আমাকে, বলল স্যার এসে শাখাটিকে বদলে ফেলেছেন, এখানে আপনি এত কাজ করেছেন যা এর আগে আর কখনও দেখি নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন