সিলেট
শাখায় হানা দেওয়া কিছু বাটপারের কাহিনি
যেখানেই
টাকার খেলা সেখানেই ওৎপেতে বসে থাকে চোর ডাকাত বাটপার। কোন এক ঈদের ছূটির আগে শাখা
ছিল খুব ব্যস্ত। আমি কিছুদিন আগে কুদরতঊল্লা মার্কেটের আমার বন্ধু শাহিন
লাইব্রেরীর স্বত্বাধিকারী শাহিন ভাইকে দিয়ে একটি চলতি হিসাব করাই। তিনি প্রতিদিন
লেনদেন করেন। সেদিন আমার ডান টেবিলে মিনহাজ স্যারের সামনে চেয়ারে বসে পাশে চৌদ্দ
হাজার টাকা রেখে জমার ভাউচার লিখছেন। লেখা শেষ করে দেখেন এই চৌদ্দ হাজার টাকা
উদাও। আমরা অনেক খোজেও এই টাকার কোন সন্ধান পাইনি। শাখায় সেদিন এত ভিড় ছিলযে
কাস্টমারের সারি বাহিরের রাস্থা পর্যন্ত পার হয়। আমি শাহিন ভাইকে অন্যব্যাংক হতে
ডেকে এনে হিসাবটি খোলাই, তাই নিজেকে কেমন যেন অপরাধী মনে হচ্ছিল। পরের দিন শাহিন
ভাই আমার কানেকানে তার সন্দেহের তীর এই টেবিলে বসা বড়স্যারের দিকে নিক্ষেপ করলেন।
আমি জিহ্বায় কামড় মেরে বললাম এইসব কি বলছেন শাহিন ভাই, এই স্যার পাঁচ ওয়াক্ত
জামাতে নামাজী এবং মানুষ তাকে বিশ্বাস করে লাখ লাখ টাকা তার টেবিলে ফেলে রেখে চলে
যায়।
কিছুদিন আগে
ইসলামী ব্যাংক তালতলা শাখায় অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটে। একদল সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র
বিভিন্ন ব্যাংকে ঈদের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে এমন অপকর্ম করে যাচ্ছে বলে আমার মনে
হল। আমি শাহিন ভাইয়ের টাকা খুয়ানোর বিষয়টি ব্যবস্থাপক মান্নান স্যারকে জানিয়ে দেই
যাতে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। কিন্তু আমার মনে হল স্যার বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব
নাদিয়ে খুব হাল্কাভাবে নিলেন।
এই ঘটনার পর
দুই তিন দিন যেতে না যেতেই আর বড় একটি দুর্ঘটনা সিলেট শাখায় সংঘটিত হল। আমার সামনে
ক্যাশ কাউন্টারে আমি একজন ব্যবসায়ী যুবদল নেতাকে টাকা উঠাতে দেখলাম। তিনি
ক্যাশিয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছেন।
এসময় অজ্ঞাত ঠগের দল নিচে কিছু লোজ টাকা ছিটিয়ে বলে আপনার পকেট হতে টাকা পড়ে গেছে।
তিনি মোবাইলে কথা বলে বলে টাকা কুড়াতে লেগে যান। তিনি টাকা কুড়ানো শেষকরে উঠে
দাড়ালে ক্যাশিয়ার মনমোহন বাবু পঞ্চাশ হাজার টাকা এগিয়ে দিলে ভদ্রলোক আড়াইলক্ষ টাকার চেকের আর দুইলক্ষ টাকা
দাবি করেন। মনমোহন বাবু বলেন আমি এই একটু আগেই
দুইলক্ষ টাকা পরিশোধ করে ফেলেছি। এই নিয়ে বাকবিতন্ডা শুরু হলে মান্নান স্যার
চেম্বার হতে বেরিয়ে এসে ব্যাংক সাময়িক বন্ধ করে পুরো ক্যাশ কাউন্টার তন্নতন্ন করে
অনুসন্ধান করেন কিন্তু এই দুইলক্ষ টাকার কোন খবর মেলেনি।
এদিকে এই যুবদল নেতা টাকা না পেলে ব্যাংক ছাড়তে রাজী নন। তিনি ফোন করে তার বেশ
কিছু লোকজন ও দলের ক্যাডার জমা করে ফেলেন। মান্নান স্যারসহ সংশ্লিষ্ট অনেককেই এই
তারিখে অফিসে সারাটা রাত কাটাতে বাধ্য হন।
শেষমেষ
মনমোহন বাবু এক লক্ষ টাকা জরিমানা দেন ও তার সহকর্মিরা চাঁদা উঠায়ে তাকে বাকী
একলক্ষ টাকা প্রদানে সহায়তা করেন। আমিও পাচ হাজার
টাকা তাকে অনুদান প্রদান করি। মনমোহন বাবু সুনামগঞ্জের ভাটি এলাকা
তাহিরপূরের লোক। তিনি হাইস্কুল শিক্ষকতা ফেলে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার হন। সুচতুর এই
লোকটি এককালে ছিলেন কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা। তিনি সিলেট শাখার বড়বড় ঋণগ্রহীতা
ব্যবসায়ীদের কাছে ধর্নাদিয়ে নিজের এই ভাগ্য বিপর্যয়ের করুনকাহিনী ইনিয়ে বিনিয়ে
উপস্থাপন করে করে প্রচুর সহানুভূতি অনুদান আদায় করে নেন। পরবর্তীকালে তিনি একদিন
আমার কাছে স্বীকার করেন যে এই ঘটনায় তাকে কোন ভর্তুকি তো দিতেই হয়নি বরং আর ত্রিশ
চল্লিশ হাজার টাকা তার পকেটে আসে, তখন আমি ছিলাম বরইকান্দি শাখার ব্যবস্থাপক ও মনমোহন
বাবু ছিলেন ক্যাশ ইন চার্জ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন