সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সাগরদিঘিরপারের জীবনের একখানি জলছবিঃ

 

সাগরদিঘিরপারের জীবনের একখানি জলছবিঃ          

 

সাগরদিঘীরপারের জেফার ভবনের দুতলাজুড়ে আড়াই হাজার বর্গফুটের চার বেডরুমের একটি মনোরম ফ্ল্যাট। এখানে আমার সিলেট জীবনের একটানা বার বছর এবং মৌলভীবাজার জীবনের আংশিক তিন বছর ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে। ঢাকার যে যানজট ও দুরত্ব,  প্রায় আট ঘন্টার পথকষ্ট ও পথঝুঁকি পেরিয়ে সিলেটে আসা হবে হয়ত মাসে বড়জুর দু একবার। জীবন গতিশীল, জীবনের একটি ডাক আছে। বাঁক পরিবর্তনের জন্য জীবন আমাকে ডাক দিয়েছে। জীবনের ডাকে সাড়া নাদিয়ে কেউ পারেনা। আমিও পারবনা। আমি ঢাকা চলে যাব, তাই সাগরদিঘীরপারের জেফার ভবনের সাথে একটি অজানা সময়ের জন্য আমার বিচ্ছেদ রচিত হয়ে যাবে নিশ্চিত। জেফারভবন হতে বিদায় নেয়ার আগে তাই বাসাটির সামান্য স্মৃতিচারন এখনই করে নেয়া যাক।   

জেফার ভবনের আশপাশ গাড় সবুজ, দুতলার গ্লাস সবুজে ঢাকা। সামনের কৃষ্ণচুড়া, আম, কাঁটাল, সেগুন, শিশু ও বেলেম্বুর ডালে ডালে কাটবিড়ালী লাফালাফি করে। মাঝে মাঝে বানরও আসে। বামেদিকের বিভাগীয় মৎস্য খামারের পুকুরে পুকুরে দলবেঁধে বকেরা উড়ে বেড়ায়। রাতে লক্ষিপ্যাচার ডাক শুনা যায়, ভোরে পাখির কিচির মিচিরে ঘুম ভাঙ্গে। সিলেট শহরের কেন্দ্রে এমনই এক সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে সাগরদিঘিরপারে আমাদের বাসা জেফার ভবন।        

২০০৩ সালের আগষ্ট থেকে আমার সংসার জীবন সাগরদিঘিরপারের জেফার ভবনে অতিবাহিত হচ্ছে। এখানে আমার আব্বা, আম্মা, স্ত্রী, পুত্র, আমি এবং ছোটভাই নিশাত এই ছয়জনের একটি সুখের সংসার ছিল। কিন্তু এই সুন্দর সুখের সংসার ছেড়ে একে একে আমার বাবা ও মা দুইজন এই বাসা হতে চিরবিদায় নেই। বিয়ের পর ছোটভাই নিশাত আলাদা বাসায় চলে যায়। সবশেষে টিকে রই আমরা তিনজন ইসফাক কুরেশী, ডাঃ নুরজাহান ও জেফার। বড়বোন রেহা ছিলেন এই পাড়ায়। তিনি ও ভাগনা ভাগনিরা তাই সব সময় এবাসায় হানা দিতেন।  

এই বাসায় কাজ করত ডাঃ নুরজাহানের আদরে পালিত হওয়া ছোটজরী। সে কানিহাটির হাজিপুরের একজন পাগলির মেয়ে যে মায়ের সাথে ভিক্ষে করে বেড়াত। তিনি শৈশব হতে তাকে লালন পালন করেন। তাকে বিয়ে দেন শাহজালাল উপশহরে তার ভাইয়ের বাসার কাজের ছেলে নুরাইয়ের সাথে। তারপর আসেন কাজের মহিলা স্থুলকায়া বড়জরী। বাসার এক কক্ষ অধিকার করে নেন তিনি। বড়জরী রনকেলি হতে এবাসায় এসে প্রায় একযুগ পার করেন। রনকেলী গ্রামে তার বিয়ে হয় কিন্তু সে বিয়ে টিকেনি। এক কন্যা সেখানে ফেলে রেখে এখানে এসে কাটিয়ে দেন বছরের পর বছর। ডাঃ নুরজাহান অসুস্থ্য হলে সে তাকে তুচ্ছতাচ্ছুল্য শুরু করে। তার কথাবার্তা শোনতনা এবং প্রায়ই তার পকেট সে সাবাড় করা শুরু করে। তাই নেহায়েত বাধ্য হয়ে একসময় তাকে তিনি বিদায় জানান।

এই বাসার ১ম তলায় ভাড়া থাকেন আমার এইচএসসি সহপাঠী পুবালী ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক মাহবুব আহমদ। তিনি একমাত্র পুত্র নুহাস, দুইকন্যা নওসিন ও নওরিনকে নিয়ে এখানে ২০০৬ সাল হতে বসবাস করছেন। আমরা দুই পরিবারের মধ্যে সব সময় বিরাজ করে এক মধুর সম্পর্ক। ৩য় তলার ডান ফ্ল্যাটে বহু বছর ধরে আছেন ডাঃ গাজী এবং বাম ফ্ল্যাটে কয়েক বছর কাটান আমার ভাগনা ডাঃ মুফতি মোঃ শামস। অন্য ফ্ল্যাট গুলোতে অনেক ভাড়াটিয়া আসেন, যান। মাঝে মধ্যে দুএক জন ভেজাল ভাড়াটিয়া ঢুকে যেত, সময়মত ভাড়া দিতনা, ওরা কোনমতে বিদায় হলে তবে রক্ষা পেতাম।                

সাগরদিঘিরপার শহরের ৩ ও ৯ ওয়ার্ডের অন্তর্গত। আমার বাসাটি পড়েছে ৩নং ওয়ার্ডে। সাগরদিঘিপার মহল্লার একমাত্র সামাজিক প্রতিষ্ঠান ‘বৃহৎ সাগরদিঘিরপাড় সমাজ কল্যান সংঘ’। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি জরুরী সভায় দুই ওয়ার্ডের দুইজন কমিশনার অংশগ্রহণ করেন। মৎস্যখামারের সামনে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে অনুষ্ঠিত নতুন কমিটির এক উদ্বোধনী জনসভায় আমি এবং একমাত্র নারী ডাঃ নুরজাহান বেগম চৌধুরী অংশগ্রহণ করেন। সেই সভায় কমিশনার লায়েক আহমদ এবং মখলিসুর রহমান কামরানকে ভাষণ দিতে দেখি।

এই বাসা হতে হজরত শাহজালালের(রঃ) মাজার মাত্র পনের মিনিটের হাটা রাস্থা। কতবার যে ধারে থাকা শাহজালালের(রঃ) দরগায় গিয়ে কত আত্মীয়স্বজন এবং প্রিয়জনের জানাজায় অংশ নেই, তার কোন হিসেব নেই। এই বাসায় আসার পর থেকেই আমি প্রতিদিন লন্ডনি রোডে হাঁটি। মাঝেমধ্যে উত্তরের পাহাড়েও ঢুকে পড়ি। নিরিবিলি লন্ডনি রোডের একজন মুরব্বীর সাথে পরিচয় হয়। আমাকে দেখামাত্র তিনি সালাম দিতেন। বয়সে ছোট আমি লজ্জায় তাকে আগে সালাম দেবার চেষ্টা করে প্রায়ই বিফল হতাম।

লন্ডনিরোড পারহয়ে তারাপুর এবং আলীবাহার চাবাগানে ঢুকে হাটাহাটি করায় আনন্দ সীমাহীন। ছুটির দিনে এখানে টিলা টেকিং করি। ছায়াবৃক্ষের ছায়ায় হাঁটি। বর্ষায় টিলায় ফোটা কাশ ও বনফুলের সাথে মিতালী করি। তারাপুর চাবাগানের শাপলাফোটা দিঘিতে গিয়ে গোসল করি এবং জেফারকে সাতার শিখাই। আসলে এই দিঘির চারপাশের টিলায় টিলায় চাবাগানের অপরূপ দৃশ্য মনকে আত্মভোলা করে তুলে। আলীবাহার চাবাগানের বড়দিঘি, বড়বড় ডালপালা ছড়ানো চাবৃক্ষের নিচে লুকাচুরি খেলা, চা ফল ও চা ফুলের ঘ্রাণ নেয়া, কারখানায় চা তৈরি দেখা ও পিছনের টিলায় রাবার বনে বিচরণ করা আমার অভ্যাসে পরিনত হয়। দলবেঁধে কিশোরীদের চাপাতা তুলার দৃশ্য আমার নয়ন জুড়াত।

সুবিধবাজারে আমার আত্মীয়ের বাসার ভাড়াটিয়া শঙ্কর বাবু ছাতকের জাতক। তাঁর পত্নী বিদ্যুৎ বিভাগে চাকুরি করতেন। শঙ্করবাবু ছিলেন তিন কন্যার জনক। প্রথমে শঙ্কর বাবুকে নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে খুব ভোরে হাঁটতাম। প্রায়ই ফজরের আজানের সাথে সাথে আমাদের হাঁটা শুরু হত। কুয়াশা ও ঠান্ডার মাঝে গরমকাপড় পরে আমরা তারাপুর ও আলীবাহার চাবাগানে ঢুকে যেতাম। আমাদের পাশ দিয়ে শেয়ালেরা দৌড়াতো। হুক্কাহুয়া শব্দে ডাকাডাকি করত। আবার কখনও বানরের ঝাঁক পাশের গাছের ডালে লাফালাফি করত। কখনও বানরের দল রাস্থায় এসে আমাদের যাত্রাপথে আতঙ্ক তৈরি করত।    

কয়েক বছর আমরা কজন এভাবে হাঁটাহাঁটি করি। এসময় আমরা সবাই এতই আপন হয়ে যাই যে নানা চটুল রসালাপেও মত্ত হতাম। একদিন শঙ্কর বাবু কথাপ্রসঙ্গে বললেন, গাইয়ে বলদে মিলে গেলে হাঁটু জলে কাজ হয়ে যায়। শঙ্কর বাবুর তীব্র ব্লাডপ্রেসার ছিল এবং মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন। স্রষ্টা এই রসিক মানুষের মঙ্গল করুন।

তছবিহ পাঠ ও চিন্তাভাবনা করার সুবিধার জন্য একসময় একাকি হাঁটা শুরু করি। এই হাঁটার মধ্যে আমি অনেক জরুরী বিষয় নিয়ে ভাবি, লেখালেখির প্লট তৈরী করি, নানা সমস্যার সমাধান খোঁজি, এমন কি নানা ভবিষ্যৎ স্বপ্ন এবং তা বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রস্তুত করি। ভোরের হাঁটা আমার কাছে একটি শিল্পকর্মে পরিনত হয়। এই হাটার মধ্যে অনেক স্বপ্ন, অঙ্ক, কবিতা, গল্প ও গান তৈরী হয়ে যেত।

বাসায় মেহমান এলে আমি তাদেরকে নিয়ে খুবভোরে আলীবাহার বাগানের দিঘিতে নিয়ে যেতাম। একদিন রনকেলীর আরবাব ভাইয়ের বউ আমার বাসায় মেহমান ছিলেন। তাঁকে নিয়ে খুব ভোরে আমি ও ডাঃ নুরজাহান আলীবাহার বাগানের দিঘিতে যাই। সেদিন ভাগ্য খুবই প্রসন্ন ছিল। গাড়ি প্রধান রাস্থায় চাকারখানার পাশে রেখে আমরা হেঁটে হেঁটে দিঘির দিকে গল্প করে করে এগিয়ে যাচ্ছি, এমন সময় দেখতে পাই, প্রায় দুইশত হাত দূরে দুইটি হলুদ বরণ মেছোবাঘ শান্তমনে টিলায় বসে আছে। আমি ভাবীকে বললাম, এই দেখুন বাঘ। তিনি বাঘ দেখে বললেন, একটি নয়, দুটি বাঘ বসে আছে। আমরা কেউ ভীত হলাম না। ধীরপদে আমরা দিঘিঘাটে গিয়ে সাথে নেওয়া ফ্লাক্সের গরম চা পান করি।     

এই বাসায় আমার মেঝবোন সেহার মেয়ে মুন্নির বিয়ে হয়। বর ছিলেন রনকেলী গ্রামের ডাঃ নুরজাহানের খালাতো বোন রেবু আপার ছেলে নাইম। এই বিয়েতে আমাদের বাসা খুব জমজমাট হয়ে উঠে। ভাগ্নী পলির গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান এই বাসার ড্রয়িং-ডাইনিং কক্ষে অনুষ্টিত হয়। কুয়ারপার হতে বরপক্ষের আত্মীয়রা এসে জেফার ভবনে এক আনন্দমেলা তৈরি করেন। আজ ভাবতে অবাক লাগে এই সেই বাসা যেখান থেকে মাবাবা দুই প্রিয়জনের লাশ বেরুল, আবার দুইটি বিয়ের আনন্দ উৎসব হল। জেফারের কত জন্মদিনের কেক কাটা হল, কত যে মক্কাযাত্রা, বিদেশ যাত্রা হল। এখানে আমার কত না আনন্দ বেদনা সুখ দুঃখের স্মৃতি কংক্রীটের মত জমাটবদ্ধ হয়ে আছে।

এই বাসাটির সামনের পরিবেশের একটি ছবি এসেছে আমার ‘কৃষ্ণগহ্বর’ নামক গল্পে। রাস্থায় বিপরীত দিকে আলী মঞ্জিল। বাসাটির মালিক মোঃ তজম্মুল আলী, লোকে যাকে বলে হেলালের বাপ। জায়গা কেনার পর এখানে আমি পা রাখলে লোকে এই নামে তার পরিচয় দেয়। একবার একজন লোক কোন এক বৃক্ষের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, বৃক্ষ তোমার কিসে পরিচয়। বৃক্ষ তখন জবাব দিয়েছিল আমার ফলে পরিচয়। এখানেও তাই, তজম্মুল আলী নামটি কেউ জানেনা সবাই জানে তিনি হেলালের বাপ।

সত্তুর ফুট রাস্থার ওপাশে তজম্মুল আলী ভাড়া দেন দোকান, চাস্টল, দুটি ওয়েল্ডিং সপ, গাড়ি মেরামত কারখানা, ছাত্রমেছ ইত্যাদি। এখানে সব সময় শব্দদুষন ও পরিবেশ দুষণ লেগেই থাকে, নিয়মিত মারামারি, হাঙ্গামা, ছিনতাই হয়। মোটর সাইকেলে জনকয়েক উৎকট প্রকৃতির লোক ঘুরঘুর করে। সর্বদা এক অশান্ত পরিবেশ। আমার বাসার সামনের আম কাটালের গাছ দখল করে আছেন তজম্মুল আলী। একদিন আমার নিচতলার ভাড়াটিয়া আমগাছের একটি ছোট্ট ডাল কেটে ফেললে তজম্মুল আলী কিছু সন্ত্রাসী নিয়ে এসে বাসায় হামলা করে বসেন। এখানে রাস্থায় তার ভাড়াটিয়ারা মালামাল রাখেন এবং সরকারি খোলা রাস্থায় ওয়েল্ডিং ও লোহা পেঠানোর মত মারাত্মক পরিবেশ দূষণকারী কাজ চালিয়ে যায়। একদিন মোঃ তজম্মুল আলী মারা গেলে আমি মৎস্য খামারের ময়দানে তার জানাজায় শরীক হই। এবার মনে হল সামনের পরিবেশ ভাল হবে কিন্তু কেবলমাত্র সন্ত্রাস হ্রাস ছাড়া পরিবেশের অন্য কোন উন্নতি হয়নি।

আমার বাসার কাছেই চাচাত ভাই মইনুদ্দিন কুরেশীর বাসা ‘কুরেশী ভবন’। আমরা ডাকনাম অনুসরণ করে তাকে বলতাম আঞ্জির ভাই। দেড়বিঘা আয়তনের এই বাগান বাড়িতে ছিল আমাদের অবাধ বিচরণ। ভাবী খুব ভাল নাস্তা করাতেন। একদিন ভাবী মারা গেলে তাকে শাহজালালের(রঃ) দরগায় আমরা দাফন করি। আঞ্জির ভাই অসুস্থ হলেই আমরা দৌড়াই। কোন এক মধ্যরাতে হার্ট এটাক হলে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তার হার্টফাংসন তখন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আমরা খুব বিষ্মিত হই দশবার মিনিট দম বন্ধ থাকার পর হঠাৎ তিনি নিঃশ্বাস ছেড়ে জীবনে ফিরে আসেন। আঞ্জির ভাইয়ের বয়স এখন সাতানব্বই পেরিয়ে গেছে। ভাতিজা জামান ও এনাম দেশে এলে আমরা তাদের সাথে বেশ আনন্দে সময় কাটাই।

আমার আব্বার রেঙ্গা হাইস্কুলের ছাত্র মনির আহমদের বাসা কাছেই। তিনি আমাকে ছোটভাইয়ের মত স্নেহ করেন। আমরা পাশাপাশি গ্রামের জাতক। আমার ব্যাংকের তিনি একজন পরিচালক। লন্ডন হতে বাসায় এসে তিনি একাকি থাকেন, তাই আমি তাকে সঙ্গ দিতে ছুটে যাই। তুড়ুকখলা হতে পোষা গাভীর দুধ আসে। এই দুধে নিয়মিত চুমুক দেই। তার পত্নী দেশে এলে আমরা তাকে দেখতে যাই। এই বাসায় দুইবার তিনি মারাত্মক অসুস্থ্য হলে আমি এবং ডাঃ নুরজাহান তাকে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তিনি তার বাসার আম কাটাল আমার বাসায় পাঠাতেন।

এই প্লট কিনার পরই পিছনের শেষবাসার সালেহ আহমদ মেম্বারের সাথে আমার গাঢ় সম্পর্ক জমে ওঠে। একবার তার পুত্র ওয়াল বেয়ে নামতে গিয়ে মারাত্মক জখম হয়, আমি কারে করে তাকে ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাই। তিনি মুদ্রা ব্যবসায়ী, আমাদের ডলার পাউন্ড ক্রয় বিক্রয়ের কাজ তিনি সেরে দেন। আমারা দুইজনের পত্নীরাও বান্ধবীর মত একে অন্যের আপনজন। সালেহ আহমদ একবার কমিশনার পদপ্রার্থী হন। আমি তার পক্ষে প্রচারনায় নেমে বেশ কয়েকটি নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখি। আমরা শতচেষ্টা করেও তাকে নির্বাচিত করতে পারিনি। সেইবার আমাদের ৩নং ওয়ার্ডের কমিশনার হন মুন্সিপাড়ার লায়েক আহমদ। সাবেক কমিশনার আমজাদ হোসেন ভোট কিনতে রাতে বস্তিতে অর্থ বিতরণ করলে লায়েক তা গোপনে ভিডিও রেকর্ডিং করে ফেলেন।

সামনে নুরজাহান মঞ্জিলের লাল ভাইয়ের সাথে পুবালী ব্যাংক সিলেট শাখায় আমার অনেক পুরানো পরিচয়। তার বাসায় আমার বড়বোন রেহা জীবনের শেষ সময় পার করেন। এবাসায় আসার আগে কাজলশাহ দিঘীপারের বাসায় আমার সাত বছর গত হয়। সেইপাড়ার লোকজনের পরস্পরের মধ্যে এক গভীর আত্মিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। তারা সবাই সবাইকে চেনতো, জানতো, খোজখবর নিত। কিন্তু সাঘরদিঘিরপারের লোকজন যেন কেমন একটা আত্মকেন্দ্রিক। বাসাগুলো যেন এক একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। কেউ কাউকে জানেনা, চেনেনা। এখানে একে অন্যের সাথে সম্পর্ক রাখার খুব একটা গরজ অনুভব করেনা।

আমার দক্ষিণপাশের প্রতিবেশী সিদ্দিক আহমদ। তিনি ছাতকের জাতক এবং লন্ডন প্রবাসী। পুর্বপাশের প্রতিবেশী ব্যবসায়ী মইনুল হোসেন আমাদের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার এলাকার লোক। সাঘরদিঘিরপার সমাজকল্যাণ সংস্থার মাধ্যমে কয়েকজন গৃহকর্তার সাথে আমার পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে বেলাল আহমদ, ফিরুজ আলম, অরুন সিংহ, ফিজার মালিক নজরুল ইসলাম বাবুল, জাফরি, ফাতেহ চৌধুরী, ব্যাংকার মইনউদ্দিন চৌধুরী, ডাঃ এনাম আহমদ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। কর্মব্যস্ত আমি এই সংঘের বেশ কয়েকটি সভায় যোগদান করি ও কথাবলার সৌভাগ্য অর্জন করি।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন