সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মেয়র আরিফুল হকের বাগানবাড়িতে আনন্দঘন একটি দিন

 মেয়র আরিফুল হকের বাগানবাড়িতে আনন্দঘন একটি দিন

আরিফুল হক চৌধুরীকে সিলেটের সবাই অনেক আগ থেকেই চিনেন একজন বিএনপি রাজনীতিবিদ ও একজন হাসিখুশি প্রানোচ্ছল মানুষ হিসাবে। আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন বস মোঃ মোসাদ্দেক চৌধুরীর সমনদিক হিসাবে পূবালী ব্যাংকে নিযুক্ত হওয়ামাত্রই আমি তার নাম শুনি। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে তিনি ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের একজন কাউন্সিলর এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের খুব কাছের মানুষ। অর্থমন্ত্রি এম সাইফুর রহমান তৎকালীন আওয়ামী লীগের মেয়র বদর উদ্দিন কামরানকে পাস কাটিয়ে তাকে সিলেট নগর উন্নয়ন কতৃপক্ষের সভাপতি করেন। তখন এম সাইফুর রহমান সিলেটে অনেক উন্নয়নমুলক কাজ করান। নগরের রাস্থাগুলো প্রশস্থ হয়, কয়েকটি রাস্থা দুই ও চার লেনে রূপান্তরিত হয়। সুন্দর আইল্যান্ড হয়, সার্কিট হাউস সুসজ্জিত হয়, কিনব্রিজে গেট হয়, সুরমার দু’তীর দখলমুক্ত হয়ে উদ্যানে পরিণত হয়। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, হাইস্কুল শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, ইমাম প্রশিক্ষন কেন্দ্র, সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম ইত্যাদি নির্মিত হয়। সাইফুর রহমানের প্রচেষ্টায় ঐ সময়টা সিলেটের উন্নয়নের স্বর্নযুগে পরিনত হয়। এই স্বর্নযুগের প্রতিটি কাজে অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের প্রধান সহযোগী ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী।    

আমার বাসার নিচতলায় ভাড়া থাকেন আমার প্রিয় সহপাঠী পুবালী ব্যাংক লিমিটেড, সিলেট স্টেডিয়াম শাখার ব্যবস্থাপক মাহবুব আহমদ। আরিফুল হক চৌধুরী তার শাখার একজন প্লাটিনাম কাস্টমার। আরিফুল হক চৌধুরী তারাপুর চা-বাগান পার হয়ে মাইল দেড়েক উত্তরে নতুন বাগানবাড়ি করেছেন। সম্ভবত এই সুন্দর বাগানবাড়ি উদ্ভোধন উপলক্ষে তিনি পূবালী ব্যাংকের লোকজনকে এই আমন্ত্রণ জানান। মাহবুব সাহেব আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে আমাকে সপরিবারে আরিফুল হক চৌধুরীর বাগানবাড়ি যেতে আমন্ত্রণ জানান। তিনি আর জানান সারাদিনের অবকাশ বিনোদনের জন্যই এই আমন্ত্রণ।

উজ্জ্বল এই নাতিশীতুষ্ণ দিনটি ছিল ২০১১ সালের শীত কিংবা বসন্তকালের। জেফার ভবন হতে বাগানবাড়ির দুরত্ব প্রায় সাড়ে তিন মাইল। সকাল ১০টায় আমার কারে আমি, জেফার ও গিন্নী তারাপুর চা-বাগানের সবুজের ভিতর দিয়ে গিয়ে উপরপাড়া পার হই। লোকজনকে আরিফুল হকের বাগানবাড়ি বলতেই দূরে টিলার উপর সদ্য নির্মিত একটি বিশাল টিনের বাংলো দেখিয়ে দিল। আমরা বাড়ির গেটে যেতেই আরেকটি কারে চড়ে আসেন এজিএম মাহবুব আহমদ ও তার পত্নী, সাথে দুই কন্যা নওসীন, নুহা ও পুত্র নুহাস। দারোয়ান গেট খুলে দিলে গাড়ি টিলা বেয়ে বাংলোর আঙিনায় উঠে যায়। আমরা মাত্র দুই পরিবার এসেছি। এবার জাকিয়ার নেতৃত্বে আসেন সিলেট স্টেডিয়াম শাখার এমপ্লোয়ীরা। কয়েকজনের নাম মনে পড়ছে, তারা মাহিন, রুনা, ফেন্সি প্রমুখ। আসেন দরগাগেইট শাখার ব্যবস্থাপক আমার স্নেহভাজন শফিউল হাসান শাকিল। সিলেট শাখা প্রধান মশিউর রহমান খান এজিএম স্বপত্নীক তার  দুজন নাদুস নুদুস শিশুপুত্র শাফিন ও নাহিয়ানকে নিয়ে হাজির হন। এবার একাকী আসেন আমার চাকুরি ও আধ্যাত্মিক জীবনের গুরু পূবালী ব্যাংক সিলেট অঞ্চল প্রধান ডিজিএম মোঃ মোসাদ্দিক চৌধুরী।

এই বাগানবাড়ীতে জায়গার পরিমান ১৬ বিঘা। ১০ বিঘা উঁচু টিলাসহ পাকা বাংলো। বাংলোর ছাদের উচ্চতা ১৫ ফুটের কম নয় এবং এক একটা কক্ষ এত বড় যে প্রতিটি কক্ষ আয়তনে এক একটি ছোট্ট বাসার সমান হয়ে যাবে। বাংলো হতে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে একটি বড় পুকুর, শান বাধানো ঘাট। ঘাটে সুন্দর ডিজাইনের পাকা আড্ডা-খানা। বিদেশী কুকুর, টার্কিস খামার, ছোট্ট মোরগ খামার ও কবুতর খামার। পুকুরে বাঁধা নৌকায় আমরা বৈঠা টেনে ঘুরে বেড়াই। আরিফ সাহেব জানালেন, তার দানবাকৃতির এই বিদেশী কুকুর একদিন এই টিলায় একটি বড় অজগর মেরে ফেলে এবং চা-বাগানের শেয়ালেরা ওর ভয়ে এই টিলায় আসতে পারেনা। হ্যাঁ এই ভীমকালো দানবটি এই খামারবাড়ির একজন বিশ্বস্ত প্রহরী।   

আমরা গেস্টরা বসে আছি, এমন সময় দুই তিনটি গাড়ি নিয়ে আসেন হোস্ট আরিফুল হক চৌধুরী এবং তার পত্নী শ্যামা হক। একটি গাড়িতে রান্না করা নানান পদের ডেগভর্তি খাবার। টিলার উপর পাতা আঙিনায় চেয়ারে বৃত্তাকারে বসা আমাদের সামনে চা-নাস্তা ও পানীয় আসে। এবার আরিফুল হক চৌধুরী টিলা বেয়ে নিচে তার প্রতিষ্টিত আফসা হক ডেইরি খামার দেখাতে নিয়ে যান। শতাধিক দেশী বিদেশী গাভীর ডেয়রি খামার। প্রতিটি গাভীর দাম লাখ টাকার কম হবেনা। ফিরে এসে আমরা পুকুরে অজু পড়ে আমাদের ফরহেজগার নেতা অঞ্চলপ্রধান মোঃ মোসাদ্দিক চৌধুরীর ইমামতিতে জোহরের নামাজ আদায় করি। নামাজের পর খাবারদাবারের রাজকীয় আয়োজন চলে। আরিফুল হক, নাম শুনেছি কিন্তু কখনও কাছে আসি নি। এবার কাছে এসে তিনি ও তার পরিবারের আথিতেয়তায় মুগ্ধ হলাম।  

খাবার শেষ হতে না হতে একটি জিপে করে সিলেটের স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী হিমাংশু বাবু একটি যন্ত্র-সঙ্গীত দল নিয়ে হাজির হন। পুকুর ঘাটে লোকেরা একটি প্যান্ডেল সাজায় ও গানের যন্ত্রপাতি বসায়। আসরের নামাজের পর গানের অনুষ্টান আরম্ভ হয়। হিমাংশু বাবু ও তার সুন্দরী মেয়ে প্রিয়াঙ্কা একে একে অনেক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। হিমাংশু বাবু বাঙ্গালী হলেও তার পত্নী অনিতা সিনহা একজন মনিপুরী নারী। অনিতা সিনহা একজন শিক্ষিকা যিনি আমার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। অনিতা সিনহাও সিলেটের একজন গুণী সঙ্গীত শিল্পী। আমি সিলেট শাখায় থাকাকালে তিনি এই শাখায় বেতন ঊঠাতে আসতেন। দুইজাতির মিলনে যে একমাত্র কন্যা প্রিয়াঙ্কা জন্ম নেয়। ফলে তার মাঝে দুই জাতির সব রূপ ও গুণ এসে জড় হয়। সে অনন্যা।

আমাদেরকে আনন্দ দিতে আরিফ-শ্যামা দম্পতির চেষ্টার কোন কমতি ছিল না। আমরা পুকুরঘাটে বসে সিলেটের লোকসঙ্গীত শুনছি, তখন আরিফুল হক চৌধুরী নিজহাতে তার খামারের দুধ বড় বড় কাপে করে এনে আমাদেরকে পরিবেশন করেন। আমার পরম শ্রদ্ধেয় পূবালী ব্যাংকের সিলেট অঞ্চল প্রধান মোসাদ্দেক চৌধুরীর ধন্যবাদ ও কৃতঞ্জতা জ্ঞাপনের মাধ্যমে সুন্দর দিনটির ইতি হয়। গান, টিলা টেকিং, খাবার দাবার, নৌকা চড়া, সবমিলে দিনটি ছিল স্মরণীয়। আসর ও মাগরিবের নামাজ জামাতে পড়ি মোসাদ্দেক স্যারের ইমামতিতে। গান-বাজনা, নামাজ জিকির সব হল একই তালে। রাতে দলবেঁধে গাড়িগুলো টিলা হতে নেমে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। বাসায় ফিরে আমার চিকিৎসক পত্নী নুরজাহান বেগম চৌধুরী বললেন, টাকাওয়ালা হলেও জীবনকে সুন্দর ও উপভোগ্য করার কৌশল সবাই জানেনা। আরিফ সাহেব জানেন তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি আনন্দ বের করে আনতে পারেন।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন