আমার
প্রথমবার
দেখা শ্বশুরবাড়ি, চারখাইয়ের সাচান গ্রামঃ
এই প্রথম
আমার পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে পা রাখলাম শ্বশুরের জন্মগ্রাম চারখাইয়ের সাচান।
চারখাই হতে জকিগঞ্জ রোডে দেড়দুই মাইল পেরুলেই রাস্থার বামদিকে সাচান গ্রামের
নামফলকযুক্ত বিশাল ফটক। জলবেষ্টিত শান্ত
অজপাড়াগা সাচান, সামনে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের ওপারে চুনিয়া বিল ও
পিছনে বহমান সুরমা নদী। আমার শ্বশুরের দুইটি
বাড়ি, একটি সাচান গ্রামের প্রবেশ পথের প্রথম বড়বাড়ি
যেটিতে একটি পানা পুকুর আছে
ও সেই বাড়ির আশপাশের আটার বিঘা জমি সন্নিবেশিত আছে। কয়েক
পুরুষের পৈত্রিক ভিটেমাটি ভিতরের দুসরা বড় পুকুরওয়ালা
বাড়িটিতে তার কয়েক ঘর গোষ্টি সম্পর্কের আত্মীয়
স্বজন রয়েছেন। পাশের দক্ষিণবাড়িতে আমার
ফুফু শ্বাশুড়ির বিয়ে হয়। তার একমাত্র ছেলে ডাঃ আহমেদুর রাজা চৌধুরী সিলেটসহ
বিভিন্ন জেলায় সিবিল সার্জন ছিলেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ডিপোটি ডায়রেক্টার
পদ হতে অবসর গ্রহণ করেন।
সাচান
গ্রামটি ছোট এবং মাত্র ত্রিশচল্লিশ ঘর লোকের আবাস। কয়েকঘর চৌধুরী ও বাকী হতদরিদ্র
লোকজন এখানে শান্তিতে বসবাস করেন। গ্রামে এক ফসলি জমিই বেশী ও জলাভুমিতে প্রচুর
মাছ হয়। চুনিয়া বিলের মাছ খুব সুস্বাধু ও এই মাছ প্রায়ই আমাদের সিলেটের বাসায় আসত।
ভারত হতে আসা কয়েকঘর লোক এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছেন। বর্তমানে পাকা সড়কসহ
গ্রামটিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন রয়েছে।
দুপুরের
খাবার খেয়ে বাড়ির পিছনদিকে বের হয়ে একটু এগিয়ে সুরমা নদীর তীরে হাঁটাহাঁটি করি।
বাড়ির পিছনের এই সুরমা নদীপথে আমার শ্বশুর নৌকা চড়ে বাল্যকালে তার নানাবাড়ী রনকেলী
দিঘিরপার ও সিলেট শহর যাবার গল্প বলতেন। আর বলতেন সার্ট
প্যান্ট বুটজুতা পরে গাছবাড়ি বাজার গমনের কাহিনি।
আমার শ্বশুর ছিলেন বিপুলবপুর শ্যামলা সুদর্শন লোক, গাছবাড়ি বাজারের সুরমাঘাটে
একবার তিনি নৌকা হতে নামামাত্র লোকজন তাকে পুলিশ অফিসার মনে করে ভীড় জমায় এবং
বাজারের অবৈধ ভারতীয় বিড়ি ও কমলা লুকানোর তাড়াহুড়া
শুরু করে।
এখানে
সুরমানদীর উত্তরপারকে এপারের লোকজন বলেন জৈন্তা, যদিও এলাকাটি কানাইঘাট উপজেলা।
সেই প্রাচীনকালে সুরমার ওপার জৈন্তা রাজ্যের অংশ ছিল, তাই এপারের মানুষের কাছে
কানাইঘাট আজও জৈন্তাই রয়ে গেছে। একবার একটি অজানা নৌকা ভাড়া করে আমার
শ্বশুর সিলেট শহর হতে প্রচুর ভারী মালামাল ও খাট পালং পাঠান,
অনেক অপেক্ষা করলেন কিন্তু বাড়ির পিছনের সুরমাঘাটে নৌকাটি আর কোনদিন এসে নোঙর
করলনা।
সাচান
গ্রামে সগৌরবে শির উচু করে দাড়িয়ে আছে একটি সুন্দর মসজিদ ও দু’তলা
পাঠশালা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন