রাজনগরের
মাথিউরা চাবাগানে একদিনঃ
২০০৮ সালের আগমন ঘটতেই আমাদের পরম গুরু আব্দুল করিম চৌধুরী স্যার আমাদেরকে
ডেকে বললেন, এতদিন আপনারা সবাই অফিসে বছর সমাপনীর কাজের ভীষন ধকল সয়েছেন এবার সবাই
মিলে সপরিবারে একটা বনভোজন করে আসা যাক। তার সেকেন্ড ইন চার্জ মামুন বখত স্যার
অর্থ সংগ্রহে অবতীর্ণ হয়ে যান। আমি পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলাম। ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসের কোন এক শুক্রবার একটি বড় বাস এবং
কয়েকটি জিপ, কার, মাক্রোবাস পূর্নহয়ে আমরা দেড়শতাধিক নরনারী ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা
সেতু পারহয়ে রাজনগর উপজেলার মাথিউরা চাবাগানে এসে হাজির হলাম। পূবালী ব্যাংকের
গ্রামের শাখার ব্যবস্থাপকগণ এবং শহরের সবগুলো অফিসের অনেক লোকজন আসেন। কেউ কেউ বউ বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে
শরিক হন।
সৌদি বাদশাহ নামদারের বিদেশ সফরের সাজ সরঞ্জামবাহি আলাদা বিমানের মত একটি
আলাদা বড়জিপ বড়বড়
ডেগডেসকি ভর্তি আখনিপোলাও ও নানা পণ্যসামগ্রী বয়ে নিয়ে সাথে ছুটে যায়। অফিসের সবার সাথে আমি কেবল একাই গেলাম,
আমার স্ত্রী ও পুত্র কেউ সাথে যাননি। বাগানের একটি নির্জন বাংলো মানুষের হট্টগুলে সরব হয়ে গেল। সমতল টিলার
সামনের আঙ্গিনায় সারাদিন চলল খেলাধুলা, র্যাফেল ড্র, গান গাওয়া, পুরস্কার বিতরণ ও হৈ চৈ। একজন সাদা দাড়িওয়ালা বুড়ো গার্ড
তার অল্পবয়স্কা ষোড়শী সুন্দরী বউ নিয়ে বনভোজনে শরিক হয়। রীনা দি বলেন, এই সাধুবেশী বুড়োগার্ড অনেক গরিবের মেয়ের সর্বনাশ
করেছে, এই কচি মেয়েটি দেখছি বদমাশটার এবারের সর্বশেষ শিকার।
সেদিন কোন এক কারনে আমি ভীষণ মানসিক টেনশনে ছিলাম। সবার এই আনন্দফুর্তিতে আমার মন ছিলনা, পরিবার ফেলে
একাকী এসেছি কেবল বস করিম স্যারের ভয়ে যদি স্যার মনখারাপ করে বসেন। এখানে সবার
মধ্যে এত খুশীর বন্যা বইতে দেখে আমার মনে হল, আহারে সবাই এত সুখী কেবল আমার মনে
কোন সুখ নেই। সহকর্মীদের এই হৈ-হল্লা হতে পালিয়ে সম্পুর্ণ একাকী আমি এক নির্জন লেকপারে চলে গেলাম। এই চাবাগানের সুরম্য লেকপারের
ঝুপের আড়ালে গুটিসুটি মেরে একটি টিলার ঘাসের উপর আমি শুয়ে পড়ি। আমার চারপাশে লেকে
ঝপিয়ে পড়া পরিযায়ী পাখিদের দলবেঁধে উড়াউড়ি এবং জলে ঝাপিয়ে পড়ার অপরূপ দৃশ্য দেখে
দেখে ধ্যানমগ্ন দিন পার করে দেই। আমাদের এই অতিথি পাখিদেরকে বুঝতে দেইনি পাশে একজন
স্বভাবকবি ও পাখিপ্রেমিক শুয়ে আছেন। কোন ঘাতকের নিষ্টুরতার ভয় তাদেরকে তাড়া করেনি
ফলে তারা আমার একেবারে কাছ ঘেষে ঘেষে নির্ভয়ে উড়াউড়ি ও হাঁটাহাঁটি করতে থাকে।
সম্ভবতঃ তখনও ওয়ানটাইম ইউজ প্লেট, গ্লাস ইত্যদির প্রচলন ছিলনা। তাই
ডেকোরেটার্স হতে সবকিছু ভাড়া করে আনা হয়। আঙ্গিনার ঘাসের মাঠে বৃক্ষতলে লাইন ধরে
খাবারদাবার হল। বিকেল পর্যন্ত আনন্দ করে বাদ আসর গাড়িবহর সিলেট পানে যাত্রা
দিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন