শুভ নববর্ষ ২০২২
শতভাগ আশায় ছিলাম ছয় বছরের
বিরহের বিরাম ঘটিয়ে ঢাকা হতে সিলেটের ঘরসংসারে ফিরে যাবো। ২৮৭ জন কর্মী নিজ নিজ
পছন্দসই জায়গায় বদলি হল, কেউ বছর দুয়েক পার হতে না হতেই বদলি। কিন্তু আমি একটানা
তিন বছর মৌলভীবাজার এবং তিন বছর ঢাকায় থেকেও সিলেটের সংসার জীবনে ফিরতে পারলাম না।
মনে হল এটা পূবালী ব্যাংক কতৃপক্ষের দারুণ অন্যায় আচরণ। আসলে এখানে ন্যায়নীতির কোন
বালাই নেই। এখানে উপরে বসা লোকজন কথা দিয়েও কথা রাখতে জানেনা। পূবালী ব্যাংক এখন
ব্যবস্থাপনা কতৃপক্ষ (মেনকম) নামের একটি কমিটির চরম স্বেচ্চাচারিতার লীলাক্ষেত্র।
ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদেও আগের ব্যক্তিত্ববান সদস্যরা নেই, মালিক সমিতির বর্তমান
সদস্যরা আসেন, নাস্তা খান এবং রিজলিউশনে দস্তখত দেন। তাঁদের দস্তখত আদায়
করে ব্যাংকের কিছুলোক সব সুযোগ সুবিধা আদায় করে নেয় এই বলে যে,
তাঁরা ছাড়া ব্যাংক চলবেনা। তাঁরা জনকয়েকের পরিশ্রমেই ব্যাংক
ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ও চলছে, বাকি সবাই ব্যাংকে ঘোড়ার ঘাস কাটছে ও বসে
বসে ছাগলের মত জাবর কাটছে।
একটা চরম সুবিধাবাদের হাতে বন্দি
বাংলাদেশ, তাঁর চেয়েও আর বড় একটি সুবিধাবাদী চক্রের হাতে বন্দি পূবালী ব্যাংক। এই
চক্রই অনেক বছর ধরে ব্যাংকটার সব সুযোগ সুবিধা লুটেপুটে নিচ্ছে।
ডিসেম্বর ২০২১। গৃহকর্মী সুমন
নেই বেশ কিছুদিন। হঠাৎ জালালাবাদ গ্যাসের ম্যানেজার অনুজ নিশাত কুরেশির ফোন পেলাম
অফিসিয়েল প্রশিক্ষণে ঢাকা আসছি। একা একা ধানমন্ডি আছি। বিষন্ন প্রহরে প্রিয়জনের
আগমন আমাকে বেশ চাঙ্গা করে তুলে। নিশাতের প্রশিক্ষণ অফিস শুক্রাবাদে যা আমার বাসা
হতে মাত্র দশ পনের মিনিটের রাস্থা। ৩১ ডিসেম্বর শুক্রবার। বছরের সমাপনী দিবসে
ব্যাংকে যেতে হয়নি। আল্লাহপাকের মেহেরবানিতে দুইভাই মিলে দিনটি খুব উপভোগ করি।
শীতের কুয়াশাঝরা সকালে ধানমন্ডি লেকপারের চারপাশে রাস্থা দিয়ে হেঁটে হেঁটে পুরো
লেক প্রদক্ষিণ করি। নববর্ষ পালনে ধানমন্ডি রবীন্দ্রসরোবরের
মঞ্চে নানা আয়োজন চলছে। জনতা হৈ চৈ করে ফানুস উড়াচ্ছে। কোন কোন ফানুস অনেক উপরের
আকাশে প্রদীপ জ্বালিয়ে চিলের মত সাঁতার কাটছে। আবার কোনটি
খানিক উপরে গিয়ে চুপসে যায়, লেকের জলে কিংবা পারে আপতিত হয়। রাতে ধানমন্ডি লেকের
ওপারে হোটেলে বর্ণীল আলোর মেলায় কনসার্ট হয়। আমরা খোলা
প্রাঙ্গনে সামনে পাতা চেয়ারে বসে ঢাকার কনসার্ট প্রাণভরে উপভোগ করি।
রাত ১২টায় উইন্ডসর ক্যাসেলের সুন্দর ছাদবাগানে বসে আমরা দুই ভাই ঢাকাবাসীর নববর্ষ উৎযাপন প্রাণভরে উপভোগ করি।
১২টা বাজার সাথে সাথে ঢাকার অন্ধকার আকাশ আতশবাজির তীব্র আলোকচ্ছটায় ঝলসে ওঠে।
ঢাকার পুরো আকাশ ফানুস ও আতশবাজির আলোর বন্যায় ভেসে যায়। প্রতিটি ভবনের ছাদ হতে
আলোর প্রদীপ জ্বালিয়ে ফানুস উড়ছে, অনবরত আতশ আকাশে উঠে ডালপালা মেলে রাতের আকাশ
জ্বালিয়ে দিচ্ছে। প্রায় দেড়ঘন্টা অবিরাম আতশবাজির খেলা চলে মহানগরী ঢাকায়। দূরের
একটি ভবনের ছাদে জ্বালানীতে আগুন লেগে যায়। লোকজন জল ঢেলে অনেক কষ্টে আগুন নেভায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন