সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

কবি ও সাংবাদিক আব্দুল মুকিত অপির প্রতিবেদন ও মিরেরময়দানের ডাক্তার চেম্বারঃ

 কবি ও সাংবাদিক আব্দুল মুকিত অপির প্রতিবেদন ও মিরেরময়দানের ডাক্তার চেম্বারঃ  

২০১৩ সালে ‘ইসফাক কুরায়শী রচনাসমগ্র’ মহাগ্রন্থটির একটি কপি আমি কবিবন্ধু এডভোকেট আব্দুল মুকিত অপিকে উপহার প্রদান করি। তিনি সিলেট কোর্টে ওকালতি করেন, সেইসাথে ‘দৈনিক সিলেটের ডাকে’ কাজ করেন। সম্ভবত এই বই পড়ে তিনি অনুপ্রানিত হন এবং বইয়ে বর্নিত তারিখে আমার জন্মদিন উপলক্ষ্যে দৈনিক সিলেটের ডাকের সাহিত্য সংখ্যায় তিনি একটি বড় প্রতিবেদন লিখেন। আমার একটি সুন্দর বড়ছবিও তাতে শোভা পায়।

এই প্রতিবেদনটি আমি খুশি হয়ে আমার বসকে দেখালে তিনি চশমা ফাঁকে বাকা চোখে তাকালেন যেন বিরক্ত হচ্ছেন। খুবসম্ভব তিনি খুশি হতে পারেননি। কিন্তু অফিসের সহকর্মিরা সবাই দারুন খুশি হল, তারা বলল আজ আমরা কুরেশী স্যারের জন্মদিনের কেক কাটব, আনন্দ করব। কয়েকটি মোমবাতি, চানাচুর, কুক এবং একটি জন্মদিনের বড় কেক সাথে সাথে এসে গেল। একটি টেবিলে কেক রেখে ভিআইপি চারটি চেয়ারে আমার বস সিরাজুল হক চৌধুরী, মোহন্ত বাবু, জকিগঞ্জি সিরাজ সাহেব ও আমি বসলাম। আমার সব সহকর্মিরা সামনে বসলেন। বস ও আমি দুজন মিলে কেক কাটলাম। সবাই গুঞ্জন করল, হেপি বার্থ দে টু ইউ স্যার’। আব্দুল মুকিত অপি কেন আমাকে নিয়ে লিখলেন। আমার মত একজন নগন্যকে নিয়ে পত্রিকার পাতায় এতকিছু লিখার তার কিবা প্রয়োজন ছিল। তারপরও আমাকে পরিচিত করায় আমি তার কৃতঞ্জতাপাশে আবদ্ধ হলাম। আসলে তিনি লিখেছেন তার বিবেকের তাড়নায়। একজন কবি ও লেখক যে সাহিত্য রচনা করেন তা কেবল লেখকের সম্পদ থাকেনা, তা এক সময় দেশ, ভাষা ও দশের স্থায়ী সম্পদে পরিনত হয়। যেমন নদীর জলের মালিকানা কেবল নদীর থাকেনা, এই জলে থাকে সবার সমনাধিকার।

এই বছর ডাঃ নুরজাহান বেগম চৌধুরী মিরেরময়দানে একটি চেম্বার পান। ডাঃ মমতা বেগম মারা গেলে তার চিকিৎসক কন্যা শাম্মি আক্তার এই চেম্বারে বসে রোগী দেখতেন। তিনি একদিন ক্যানাডা চলে গেলে চেম্বারটি ভাগ্যক্রমে ডাঃ নুরজাহানের ভাগ্যে জুটে যায়। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেটের চেম্বার ছেড়ে দেন। এই নতুন চেম্বারে বসে ভালই রোগী পেতেন।

ডাঃ মমতা বেগমের পুত্র ডাঃ জুলফিকার আহমদ চেম্বারের সামনে তার মালিকানাধীন দামী জায়গায় একটি মাদ্রাসা ও মসজিদ স্থাপন করেন। এখানে সৌদি আরবের নিয়মে ইসলাম ধর্মশিক্ষা ও ধর্মচর্চা হয়। চারপাশের লোকজন এখানে খুব একটা নামাজ পড়ে না। তারা এই মাদ্রাসাকে বলে ওয়াহাবি মাদ্রাসা। একদিন কর্মব্যস্ত ডাঃ নুরজাহান রিকশা হতে নেমে ভিতরে ঢুকতে যাবেন এমন সময় কিছুলোক তার পথরুখে দাঁড়ায়। তাদের হাতে ওয়াকিটকি পাশে মাইক্রোবাস। ওয়াকিটকি দিয়ে এমনভাবে কথাবার্তা বলছে মনে হচ্ছে এরা সত্যই পুলিশের লোক। ডাঃ নুরজাহান কারণ কি জিঞ্জেস করলে তারা বলল আমরা সি আই ডির লোক, এই মাদ্রাসায় জঙ্গি আছে, অবৈধ অস্ত্র আছে। আমরা ভিতরে অভিযান চালাচ্ছি। আপনি এদিকে যেতে চাইলে আমাদের কাছে আপনার সোনা রূপা মানীব্যাগ সব রেখে যেতে হবে। তল্লাসী শেষ হলে আমরা পরে তা ফিরিয়ে দেব। তিনি বিশ্বাস করে হাত, কান ও গলা হতে সব সোনা মানীব্যাগ হাতব্যাগে ভরে তাদের হাতে তুলে দেন। এবার বলল আপনার স্বামীর নাম ও মোবাইল নম্বার লিখে আমাদেরকে দেন। নুরজাহান পাকাওয়ালের উপর কাগজ রেখে লিখতে যান। তখন তারা বলল তাড়াহুড়া করার দরকার নেই। ঠান্ডামাথায় ধীরে সুস্থে লিখুন। টুকা লিখে মাথা তুলে দেখেন সাদা মাইক্রোবাস নিয়ে তিনজন লোক উদাও হয়ে গেছে। সেদিন তার ক্ষতি নেহায়েত কম হয়নি, যার পরিমান ছিল প্রায় দেড়-দুই লক্ষ টাকা।    

একসময় ডাঃ মমতা বেগমের বড় বাড়িটি খন্ড খন্ড করে তার পুত্রকন্যারা বিক্রি করে দেন। এবার চেম্বার চলে যায় কাছেই সিলেট রেডিও স্টেশনের বিপরীত পাশে ডাঃ জুলফিকারের মার্কেটে। চতুরা নারী অঞ্জনা দেবী তাকে চেম্বারে সহায়তা করেন। এখনও এই চেম্বারে বসে তিনি নিয়মিত রোগী দেখছেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন