কে এই মহান “পুবালী ব্যাংক লিমিটেড” মহাশয়ঃ
যে ব্যাংকে
আমি যোগদান করে জীবনের আনন্দ-ব্যদনার এক
বিশাল কর্মকাল পার করি, আমার জীবনে যে ব্যাংকটির অবদান
অপরিসীম, অবশ্যই কৃতজ্ঞচিত্তে আমি তার কিছু কথা আপনাদেরকে জানাব। বাংলাদেশের
সর্ববৃহৎ বেসরকারি ব্যাংকটির নাম পুবালী ব্যাংক
লিমিটেড, যার সারা বাংলাদেশে জালের মত বিস্তৃত রয়েছে প্রায় পাচশত শাখার দেশের
বৃহত্তম অনলাইন নেটওয়ার্ক। এই ব্যাংকের রয়েছে আট হাজার কর্মীর এক সুদক্ষ বাহিনী
যারা যুদ্ধের ময়দানে দক্ষতার সাথে তাদের রণতরী নিয়ে সব সময় সগৌরবে ভেসে আছে।
১৯৫৯ সালের
১৯ মে চট্টগ্রামের টেরিবাজারে ব্যাংকটির যাত্রা শুরু হয়। সে সময় ব্যাংকটির নাম ছিল
ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড যা পাকিস্তান আমলের বাঙ্গালি
মালিকানাধীন একমাত্র বেসরকারি ব্যাংক।
এটি সেই আমলের একমাত্র ব্যাংক যার হেডঅফিস ছিল পুর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান
বাংলাদেশে। বাঙ্গালি উদ্যোক্তাদের ৬০% ও স্টেইট ব্যাংক
অব পাকিস্তানের ৪০% মালিকানা অংশদারিত্বে ১৯৫৯ সালের ১৯ মে স্থাপিত ইস্টার্ন
মার্কেন্টাইল ব্যাংকটিকে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর আমলে ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ
করা হয় এবং ‘ইস্টার্ন’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ ‘পূবালী’ নাম ধারণ
করে ব্যাংকটির নতুন নামকরন করা হয় পুবালী ব্যাংক লিমিটেড। সরকারী
মালিকানায় থাকাকালে নানা কারণে ব্যাংকটির
অবস্থা জরজর হয়ে গেলে ১৯৮৩ সালে কোম্পানি গঠন করে বেসরকারিকরণের
পথে অগ্রসর হন তৎকালীন এরশাদ সরকার। ১৯৮৫ সালে এই ব্যাংকের ১৬ কোটি টাকার প্রাথমিক
পেইড আপ ক্যাপিটালের ৫% শেয়ার সরকারের হাতে রেখে বাকি
৯৫% শেয়ার বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের
প্রাক্তন পুলিশপ্রধান ও ঢাকাস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব ই এ চৌধুরী তার
বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, ঢাকা ও প্রবাসে অবস্থানরত সিলেটি ব্যবসায়ীদের একটি জোট
গঠন করে এই ব্যাংকটির শেয়ারের এক বিরাট অংশ ক্রয় করে নেন। ব্যাংকটি পাবলিক লিমিটেড
কোম্পানি হবার পর ১৯৮৬ সাল হতে ২০০৫ সাল
পর্যন্ত তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। সরকারি
আমলে যে ব্যাংকটির অবস্থা ছিল সবচেয়ে জরাজীর্ণ, যেখানে
খেলাফি ঋণের পরিমান ছিল চল্লিশ শতাংশের উপরে,
ছিল অনিয়ম ও বিশৃংখলার অবাধ চারণক্ষেত্র, যে
ব্যাংক সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করা হত ব্যাংকটি আদৌ টিকবে কিনা, বেসরকারিকরণের
পর নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান জনাব ই এ চৌধুরীর বুদ্ধিদীপ্ত ও গতিশীল অভিভাবকত্বে সেই
ব্যাংকটি দুর্বল ও ভঙ্গুর অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে উন্নত স্থিতিশীল পর্যায়ে চলে
আসে। টেকসই অবস্থানে থাকা এই ব্যাংকটিকে আর কখনও পিছনে তাকাতে হয় নি।
এখন এর উত্তর উত্তর সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। এই ব্যাংকের সারাদেশে এত
স্থায়ীসম্পদ রয়েছে যা দেশের অন্য কোন বেসরকারি
ব্যাংকের নেই।
জনাব ই এ
চৌধুরীর প্রয়াতের পর দীর্ঘকাল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন বিচক্ষণ
ব্যক্তিত্ব জকিগঞ্জের প্রাক্তন এম পি হাফিজ আহমদ মজুমদার। দেশের
কিংবদন্তী ব্যাংকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদের প্রচেষ্টায়
ব্যাংকটি প্রবলেম ব্যাংকের তালিকা হতে বেরিয়ে এসে। ডায়নামিক ব্যাংকার ব্যবস্থাপনা
পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ব্যাংকটির আধুনিকায়ন হয় ও
ব্যাংকটি দেশের একটি শ্রেষ্ট বেসরকারি ব্যাংকে পরিণত
হয়। এই পুবালী ব্যাংকের উপর ‘পুবালী’ শব্দটির অর্থ ‘পুর্বদিক হতে বহে আসা’ এর
যথেষ্ট তাছির রয়েছে। ব্যাংকটির উপর পাকিস্তান আমলে পুর্ব পাকিস্তান ও স্বাধীনতার
পর বাংলাদেশের পুর্বাঞ্চল সিলেটের প্রভাব
সব সময় কার্যকর হতে দেখা যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন