শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

একজন চৌকষ ব্যবস্থাপক এম এ মান্নানের সহকর্মী আমিঃ

 

একজন চৌকষ ব্যবস্থাপক এম এ মান্নানের সহকর্মী আমিঃ

এক সাপ্তাহ আগে ১৫ জুলাই ১৯৯৯ এম এ মান্নান যোগদান করে এই কয়দিনে ঋন, এলসি, ক্যাশ ইত্যাদি সবকিছু বুঝে নেন। এবার সিলেট শাখায় আমরা এম এ মান্নান যুগে প্রবেশ করলাম। আমার চাকুরি জীবনে ব্যাবস্থাপক এম এ মান্নান স্যারই আমার সবচেয়ে দীর্ঘকালীন বস। তার নেতৃত্বে আমি পরবর্তী প্রায় সাড়ে চার বছর এই শাখায় কাজ করি।

এম এ মান্নান স্যারের বাড়ি বড়লেখার বর্নী। এই স্থানটি বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত। তিনি অল্প বয়সে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করে ব্যাংকের করনিক পদে যোগদান করে চাকুরীর ফাঁকে গ্রেজুয়েশন করেন ও নিজ যোগ্যতা বলে ধাপে ধাপে প্রমোশন পেয়ে সহকারী মহাব্যাবস্থাপক হন। মানুষকে কাছে টানার এক অসাধারন সম্মোহনী শক্তি ছিল তার। নানা ক্লাবে যোগদান করে তিনি অসংখ্য বন্ধু তৈরী করেন এবং এই বন্ধুদের তিনিই হতেন মধ্যমনি। তিনি তার পরিবারেরও প্রধান হর্তাকর্তা ছিলেন। গ্রামের ভাতিজা ভাতিজিদের লেখাপড়া, বিয়েসাদি, চাকুরী প্রদান, বিদেশে প্রেরন সবকিছুর গুরুভার অবলীলায় তিনি তার নিজ কাঁধে তুলে নিতেন। তার এক ভাই ছিলেন অন্ধ হাফিজে কোরান। এই অন্ধ ভাইয়ের পরিবার নিয়েও তাকেই ভাবতে হত।   

 অক্লান্ত পরিশ্রমী ও ব্যাংকের কাজে আন্তরিক মান্নান স্যারের ছিল ক্লিনসেভ মায়াবি চেহারা, মাঝারী তনু, উজ্জ্বল শ্যামলা গাত্রচর্ম এবং ঘন কালচুলমান্নান স্যারের তেমন রাগ ছিলনা কিন্তু তিনি কৃত্রিমভাবে রাগতে পারতেন। চোখ দুটি বড় বড় করে তাকিয়ে রাগকরার অভিনয় করে সুন্দরভাবে সব কাজ সুচারুরূপে আদায় করে নিতেন। কাজ শেষহলে মিষ্টিহেসে কৃত্রিমভাবে তৈরীকরা রাগ ঝেড়ে ফেলতেনসংক্ষেপে এই ছিলেন আমার দীর্ঘ্যতম সময়ের বিগবস এম এ মান্নান।

তার মাথায় সব সময় একটি চিন্তা কাজ করত, কেমন করে ব্যাংকের উন্নতি সাধন করা যায়। এই মুলুকের সবকটি ব্যাংকের মধ্যে এম এ মান্নান স্যার সিলেটে সাহস করে প্রথম বড়বড় ঋন বিতরনে এগিয়ে আসেন। শাহজালাল সেতুর সামনে চৌদ্দতলা গার্ডেন টাওয়ারে তিনি একটি বড় ঋন প্রদানের সিন্ধান্ত নেন। একদিন আমি এইদিকে গমনকালে একটি ঝিলের মধ্যে গার্ডেন টাওয়ার প্রকল্পের সাইনবোর্ড দেখে মান্নান স্যারকে বললাম, এই জলায় ঋনপ্রদান কি ঠিক হচ্ছে? স্যার তখন বললেন কুরেশি একটি কথা শোন, এই জায়গার পটেনশিয়েলিটি আছে, ইনশাহ আল্লাহ টাকা ফেরত আসবে। তাছাড়া প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে একটি চৌদ্দতলা হউক, এটা সফল হলে আর অনেকে এই ব্যবসায় এগিয়ে আসবে। ফ্ল্যাট ব্যবসাও সিলেটে একটি নতুন ব্যবসা হিসাবে জায়গা করে নেবে। তার এই দূরদর্শী চিন্তা কালের বিবর্তণে আমার কাছে সঠিকই মনে হয়েছে।

পুবালী ব্যাংকে চাকুরীর সৌজন্যে মান্নান স্যার ব্যাংকের টাকায় একটি সাদা টয়োটা কার ক্রয় করেন। গাড়িটি চালাত একজন নতুন অনভিজ্ঞ চালক যে ছিল সম্ভবতঃ এই ব্যাংকের একজন ড্রাইভারের ভাই একদিন মান্নান স্যার তার গ্রামের বাড়ি গমনকালে এক মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন। রাস্থার পাশের একটি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে তার গাড়িটি এমনভাবে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল যে মনে হল এই গাড়ি আর মেরামত হবেনা বাগাড়ে ফেলে দিতে হবে। কারের এই অবস্থা দেখে মনে হল এই দুর্ঘটনায় তার বেঁচে যাওয়াটা এক বিষ্ময়কর ঘটনা। সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আমার বাসার সন্নিকটে হওয়ায় আমি ও আমার পত্নী ডাঃ নুরজাহান প্রতিদিন রাতে স্যারকে এই হাসপাতালে দেখে আসতাম। দুইতিন সাপ্তাহ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসার পর ভাগ্যবলে মান্নান স্যার সেরে উঠেন। এই দুর্ঘটনায় তার ক্ষীপ্র স্মৃতিশক্তি খানিকটা কমে গেলেও পরে ঠিক হয়ে আসে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন