রাস্থায়
একজন দুবৃত্ত গুন্ডা কালা নাহিদের মুখদর্শনঃ
একদিন
সন্ধ্যারাতে আমি সাদাকার চালিয়ে অফিস হতে বাসায় ফিরছি। রিকাবীবাজার
এসে ভীষন জ্যামের মধ্যে আটকা পড়ি। জ্যাম ঠেলে ঠেলে সামনের দিকে খুব ধীরে ধীরে গাড়ি
চালিয়ে যাচ্ছি। এমন সময় দেখলাম একটি মোটর সাইকেল চালিয়ে দুইজন যুবক কোন আইন
কানুনের তোয়াক্কা না করেই বীর বিক্রমে
এগিয়ে আসছে, যেন তারা কোথাকার বাহাদুর লাটখা জমিদার মামদ মনসুর। তারা এসেই
ইচ্ছাকৃতভাবে আমার কারের সামনের বাম্পারে সজুরে ধাক্কা দেয়।
আমার নীতি
হল গাড়ি চালানোর সময় কখনও রাগকরা যাবেনা। আমি পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছি। আমি জানি
এদেশে রাস্থার তুলনায় যানবাহন অনেক বেশি। তদুপরি
ঠেলাগাড়ি ও রিকশার মত প্রাচীন যুগের শম্ভুকগতির যানবাহনের সাথে একই পথে চলতে হয়।
তাই এখানে রাস্থায় রাগকরা সাজেনা। এখানে আমার যখন
ক্রুদ্ধ হবার কথা, আমি তখন ব্রেককশে গাড়ি থামিয়ে কিছুই বললাম না। মোটর সাইকেলের
চালক সুদর্শন যুবকটিও নীরব রইলেন। কিন্তু মোটর সাইকেলের
চালকের পিছনের সিটে বসা দুবৃত্তটা অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায়
গালী দিয়ে বসল। শুধু তাই না, সে সাইকেল হতে নেমে কারের সামনের ঢাকনায় সজুরে বক্সিং
মেরে ইতরের মত নাচানাচি করতে থাকে। কুকুরটা যদি
সামনের গ্লাসে আঘাত করত, তবে গ্লাস ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যেত
এবং সেও আহত হয়ে রক্তাক্ত হত। পুরা রাস্থায় প্রচন্ড ভীড় থাকায় আমি স্টিয়ারিং ছেড়ে
নামতেও পারছিনা, আবার সইতেও পারছিনা।
এইবার এই
অভদ্র বেতমিজকে চিনে রাখার জন্য আমি শকুন চোখে তার দিকে তাকাই। দেখলাম
ইতরটার দীর্ঘদেহ, চর্ম ভীমকালো, চেহারা একদম আফ্রিকান গরিলার মত জানোয়ার আকৃতির।
তাকে দেখতে কেমন যেন একটা কালো পুড়ামুখ হনুমান মনে হচ্ছিল।
তখনও আমি
জানতাম না এই মানুষরূপী পশুটা কে? তবে তার পশুচেহারাটা আমি মনের মধ্যে ভালভাবে গেঁথে নেই। আমি মনে মনে
খোঁজতে থাকি এই নরপশুটার যদি দেখা পাই, তবে তার পরিচয়টা অন্ততঃ জানতে পারব, সে কোন
বিষবৃক্ষের পয়দা।
তবে আমাকে
খুব একটা বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয় নি। একদিন
আমার বেগম সাহেবা ডাঃ নুরজাহান হিস্টারো প্যথোলজী করতে কাজলশার মেরিনোভা ডায়গনেস্টিক
সেন্টারে যান। কার হতে নেমেই সেখানে এক দঙ্গল যুবকের মাঝে আলকাতরা কালো পুড়ামুখ এই
বাদর চেহারার ইতরটাকে দেখতে পাই। আমার বেগমকে বললাম, এই লোকটা কে? তিনি জবাব দেন,
কেন? তাকে চেননা? সে তো
কালা নাহিদ। সে কাজলশার গুন্ডা। সে একজন পাচকের
ছেলে, যে পাচক বাঙ্গালি নয় পাকিস্তানী। তার পরিবার
কাজলশাহের ভিতর জনবহুল ঘিঞ্জি এলাকায় বসবাস করে।
আমরাও এক
সময় এই পাড়ার দিঘিপারে ভাড়াটিয়া ছিলাম। তিনি তাই সহজেই
তাকে চিনে ফেলেন। এবার দেশ ডায়গনেষ্টিক সেন্টারে যাই। এই সেন্টারের মালিক বললেন,
তারা কালা নাহিদের যন্ত্রনায় অতীষ্ট, প্রতিদিন এসে চাঁদা চেয়ে বসে। একদিন
সকালে চাঁদা নিতে আসলে তার ম্যানেজার বলেছিল, আমি চাকুরি করি, আপনি দয়াকরে মালিকের
কাছে যান। তখন কালা নাহিদ বলল, মালিকের কাছে গেলে চাঁদা দিতে হবে দ্বিগুণ। সেদিন দেশ
ডায়গনেষ্টিক সেন্টারের মালিক আসলে সে জুরকরে দ্বিগুণ চাঁদা আদায় করে নেয়। সিলেট
মেডিকেল কলেজের আশপাশ তার জমিদারী এলাকা,
দখলি রাজ্য। এখানে সরকার নয়, কালা নাহিদের রাজত্ব চলে। এখানে তাকে চাঁদা
দিয়ে সবাইকে ব্যবসা করতে হয়।
তার
বিরুদ্ধে থানায় অসংখ্য মামলাও ছিল। সে কোনকালে কবে ছাত্রদল করত, পুলিশ তাকে ধরতে
এলে পুলিশের সাথেও দলবল নিয়ে হাতাহাতি করত। অতিষ্ঠ
পুলিশ মাঝমধ্যে তাকে ধরে নিয়ে অমানুষিক পিঠুনীও দিত। কাজলশাহের মানুষ বলত
বদমায়েশটার গন্ডারের চামড়া, পুলিশের লাথি গুতো পিঠুনি সব ওর শক্ত চামড়া হজম করে
ফেলে। চাঁদাবাজির টাকা ছিটিয়ে সে একদল রাস্থার
কুত্তা মাস্তান পোষতো। তার শক্ত গডফাদার ছিল, তাই পুলিশ
ধরলেও পরে সে জেল হতে বেরিয়ে এসে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ত।
একদিন
দরগাগেইট শাখায় আসেন র্যাবের একজন এএসপি। এই শাখায় এক
সময় তিনি ছিলেন একজন শিক্ষানবিশ সিনিয়র অফিসার। পরে বিসিএস পাশ করে পুলিশ বিভাগে
যোগদেন। তিনি তার পকেট হতে র্যাবের মোষ্ট ওয়ান্টেড অপরাধীদের একটি তালিকা বের
করেন। আমি এই তালিকার প্রথমদিকেই কালা নাহিদের নাম দেখতে পাই। এর কিছুদিনের মধ্যেই
র্যাবের হাতে ওর প্রধান সহযোগী একজন দুবৃত্ত ক্রসফায়ারে নিহত হয়। কালা
নাহিদ খুব ভাগ্যবান, সে পুলিশকে হাতকরে জেলে গিয়ে সেইযাত্রায় র্যাবের হাত হতে
কোনমতে প্রাণরক্ষা করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন